The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

বিলাস-ব্যসন বিসর্জন দিয়ে নিজের গ্রামকে শহরে পরিণত করছেন সাদিও মানে

লিভারপুলের সুপারস্টার সাবেক ফুটবলার সাদিও মানে। গত কয়েক মৌসুমে লিভারপুলের যত সাফল্য, সাদিও মানের নাম তার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। বর্তমানে বায়ার্ন মিউনিখে খেলা সেনেগালের এই ফরোয়ার্ডের অন্য একটা গুনও আছে। তিনি শেকড়ের কথা ভুলে যাননি। সুযোগ পেলেই ছুটে যান নিজ জন্মভূমিতে। এমনকি নিজের গ্রামকে শহরে পরিণত করার কাজও শুরু করে দিয়েছেন তিনি।

ফুটবল ক্যারিয়ারে যশ, খ্যাতি ও ধন-দৌলত সবই ধরা দিয়েছে মানের হাতে। পেয়েছেন অনেক অনেক সাফল্য। কিন্তু সেটাকে মাঝে মাঝে ছাপিয়ে ওঠে তার মাঠের বাইরের সাধারণ জীবনযাপন। প্রফেশনাল লােইফের প্রাপ্তিগুলোকে তিনি শুধু নিজের জন্য নয়, কাজে লাগান নিজ দেশ ও গ্রামের মানুষদের কল্যাণে, এখানেই তিনি ব্যতিক্রম। নিজের আয়ের বড় একটা অংশ খরচ করেন দেশ ও গ্রামের উন্নয়নে। চ্যাম্পিয়নস লিগ ও আফ্রিকান ন্যাশন্স কাপজয়ী এই ফুটবলার তার নিজের গ্রামে হাসপাতাল, স্কুল, পোস্ট অফিস এবং পেট্রোল স্টেশন নির্মাণ করে দিয়েছেন।

সর্বশেষ ববায়ার্নে যোগ দেওয়ার যখন সেনেগালে যান মানে, সেখানে তিনি সাবেক প্রিমিয়ার লিগ তারকা পাপিস সিসে এবং এল-হাজী দিউফের সঙ্গে এক চ্যারিটি ম্যাচে অংশ নেন। সেখান থেকে একটি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়েছিলেন তিনি। এই হাসপাতালটি নির্মাণের জন্য ২০২১ সালে ৪ লাখ ৫৫ হাজার পাউন্ড বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫ কোটি ৯ লাখ টাকা দিয়েছেন মানে। হাসপাতালটিতে আশেপাশের প্রায় ৩৪ গ্রামের মানুষ চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারছেন।

নিজ গ্রাম বাম্বালিতে আড়াই লাখ পাউন্ড বা প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা খরচ করে একটি মাধ্যমিক স্কুল নির্মাণ করে দিয়েছেন মানে।গ্রামবাসীর সুবিধার জন্য পোস্ট অফিস নির্মাণের কাজও শুরু করেছেন তিনি। এজন্য সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন সাবেক সাউদাম্পটন তারকা। তার নিজের গ্রামে একটি পেট্রোল পাম্পের উদ্বোধন করতেও দেখা গেছে তাকে। এছাড়া গ্রামে ফোর-জি ইন্টারনেট সুবিধার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন মানে।

এখানেই শেষ নয়, মানে নিজ গ্রামের প্রতি পরিবারকে মাসিক ৭০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৬ হাজার ৩০০ টাকা) সমমূল্যের সহায়তা প্যাকেজের ব্যবস্থাও করেছেন। তার গ্রামের হাই স্কুলের সেরা শিক্ষার্থীদের ৪০০ মার্কিন ডলার (৩৬ হাজার টাকার বেশি) করে বৃত্তি দিচ্ছেন তিনি। শুধু তার দেশ আর গ্রাম নয়, আফ্রিকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মধ্যে ফুটবলের প্রতি আগ্রহ তৈরিতেও তার রয়েছে অসাধারণ ভূমিকা। লিভারপুলে নিজের জার্সি তিনি কয়েক শ এতিম শিশুকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন আফ্রিকার দেশ মালাউইয়ে। ২০১৮ সালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের আগে নিজ গ্রাম তথা দক্ষিণ সেনেগালের বাম্বালি গ্রামে লিভারপুলের ৩০০ জার্সি উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন মানে। তার নামে সেনেগালে একটি ফুটবল স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে।

মানে একজন আপাদমস্তক ‘ডাউন টু আর্থ’ ঘরনার মানুষ। ইতিপূর্বে লিভারপুলে এক স্থানীয় মসজিদের অযুখানা পরিস্কার করতে দেখা গেছে তাকে। প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১ লাখ পাউন্ডের মতো বেতন (বছরে ১২ মিলিয়ন পাউন্ডের বেশি) পাওয়া সত্ত্বেও  দামি ফোন, দামি গাড়ি এসব কিছুর প্রতিই তার মোহ নেই। তিনি নিজেই বলেছিলেন, দশটি ফেরারি গাড়ি, ২০টি দামি ঘড়ি আর বিলাসবহুল বাড়ি, এসব দিয়ে কী হবে! বিলাসবহুল বাড়ির পরিবর্তে অসংখ্য স্কুল তৈরি করেছি আমি। দামি পোষাকে ওয়্যারড্রব না সাজিয়ে অসংখ্য বস্ত্রহীন মানুষকে বস্ত্র দিয়েছি। নিজে দামি গাড়ি চালানোর পরিবর্তে অগণিত শিক্ষার্থীর জন্য স্কুল বাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। নিজে দামি রেস্টুরেন্টে না খেয়ে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত শিশুর খাবারের ব্যবস্থা করেছি। এতেই আমার শান্তি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.