এক সময় যে হাতে হোটেলে থালাবাসন সাফ করতেন, পরে সেই হাত দিয়েই গুনেছেন গোছা গোছা টাকা। গরিব ঘরের ছেলে থেকে জয়রামের কোটিপতি হওয়ার কাহিনি যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়।কর্নাটকের মেঙ্গালুরুর উদুপিতে জন্ম জয়রামের। তার বাবা ছিলেন গাড়িচালক। একদিকে গরিবের সংসার অন্যদিকে পড়াশোনায় তেমন ভাল ছিলেন না জয়রাম। স্কুলের পরীক্ষায় প্রায় অকৃতকার্য হতেন জয়রাম। অকৃতকার্য হলেই বাবা কড়া শাসন করতেন। এমনই এক ঘটনায় জয়রামের ভাগ্য খুলতে সহায়ক হয়।
এক বার স্কুলের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন জয়রাম। বাবার বকুনির ভয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। তখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর। বাবার পকেট থেকে কিছু টাকা নিয়ে মেঙ্গালুরু থেকে বাসে চড়ে সোজা মুম্বাই পাড়ি দেন জয়রাম। সেই থেকে শুরু হলো নিজের পায়ে দাঁড়ানোর লড়াই। নিজের পায়ে দাঁড়াতে সেই সময় একটি হোটেলে কাজ শুরু করেন তিনি। ওই হোটেলে থালাবাসন পরিষ্কার করতেন জয়রাম। এ জন্য পারিশ্রমিক হিসাবে পেতেন ১৮ টাকা।
ওই হোটেলে প্রায় ৬ বছর কাজ করেছিলেন জররাম। এই সময়ের মধ্যে ‘পদোন্নতি’ ঘটেছিল জয়রামের। বাসন পরিষ্কারের কাজের পাশাপাশি হোটেলে ‘ওয়েটার’ (খাবার পরিবেশক) হন। পরে হোটেলের ম্যানেজারও হন তিনি।
একসময় জয়রাম জানতে পারেন, মুম্বাইয়ে দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের রেস্তোরাঁ খোলা হচ্ছে। নিজে দক্ষিণ ভারতীয় হওয়ায় তিনিও এ ধরনের রেস্তোরাঁ খোলার পরিকল্পনা করেন। তবে মুম্বাইয়ের বদলে চলে যান দিল্লিতে। দিল্লিতে তার পরিকল্পনা প্রথমে সফল হয়নি। নিরামিষ খাবারের রেস্তোরাঁ খুলতে চেয়েছিলেন জয়রাম।
১৯৭৪ সালে দিল্লিতে আসার পর সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রনিক্সের ক্যান্টিনের টেন্ডার নেন জয়রাম। এরপর ১৯৮৬ সালে দিল্লির ডিফেন্স কলোনিতে নিজের রেস্তোরাঁ খোলেন জয়রাম। নাম দেন ‘সাগর’। যা কিছু সঞ্চয় ছিল, তা দিয়ে প্রথম রেস্তোরাঁ খোলেন তিনি।
সেই সময় রেস্তোরাঁর ভাড়া মেটাতে হতো জয়রামকে। প্রতি সপ্তাহে দিতে হতো ৩ হাজার ২৫০ টাকা। রেস্তোরাঁয় ৪০ জন একসঙ্গে বসতে পারতেন। প্রথম দিন বিক্রি করে পেয়েছিলেন ৪৮০ টাকা।
ওই সময় দিল্লিতে দক্ষিণ ভারতীয় খাবার খেতে লোকে ‘উডল্যান্ড’, ‘দাসপ্রকাশ’ রেস্তোরাঁয় যেতেন। ক্রেতাদের কাছে টানতে নতুন চাল চালেন জয়রাম। ‘উডল্যান্ড’ রেস্তোরাঁটি কিনে ফেলেন তিনি। পরে ওই রেস্তোরাঁর নাম বদলে রাখেন ‘সাগর রত্ন’।
সেই থেকে শুরু হয় ‘সাগর রত্ন’ রেস্তোরাঁর পথচলা, যা পরবর্তী সময়ে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। উত্তর ভারতের ‘দোসা কিং’ বলা হতে থাকে জয়রামকে। উত্তর ভারতে জয়রামের রেস্তোরাঁর ৫০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। বিশ্বজুড়ে এই রেস্তোরাঁর শাখা রয়েছে ১০০টিরও বেশি।
মাত্র ১৮ টাকা দিয়ে শুরু করেছিলেন রোজগার জীবন। সময়ের স্রোত পেরিয়ে সেই জয়রাম এখন কোটিপতি। এত রেস্তোরাঁর সুবাদে তার বছরে আয় ৩০০ কোটি টাকা। বর্তমানে ‘জয়রাম বনান গ্রুপ’-এর চেয়ারম্যান তিনি। এই সংস্থার আওতায় রয়েছে রেস্তোরাঁ, হোটেল, ক্যান্টিন।
জয়রামের জীবন রুপালি পর্দায় নায়কের চরিত্রের মতোই। গরিব ঘরের ছেলে। পড়াশোনার পাঠ মাঝপথে ছেড়ে ঘর ছাড়েন। তারপর নিজের পায়ে দাঁড়ান। জয়রাম যেন বাস্তবের সেই নায়ক। তার এই ‘নায়ক’ হয়ে ওঠার কাহিনী অনেককেই প্রেরণা জোগায়।