The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
রবিবার, ৩রা নভেম্বর, ২০২৪

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আজ আমাদের স্বাধীনতার রূপকার

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ খোকার জন্মদিন ছিল বাঙালির এক শুভক্ষণ। কারণ, সেই খোকা, শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দিয়েছেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। তাঁর নেতৃত্বে হাজার বছরের ইতিহাস পার হয়ে বাঙালি বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের জাতির পিতা। ২০০৪ সালে বিবিসির এক বিশেষ জরিপে তাই তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে।

পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে বঙ্গবন্ধু সঞ্চারিত করেছিলেন স্বাধীনতার প্রবল স্পৃহা। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন স্বপ্ন দিয়ে, মানুষকে সংগঠিত করে, লক্ষ্যে অবিচল থেকে এবং ত্যাগ স্বীকার করে। এ জন্য অসম্ভব কষ্ট স্বীকার করেছেন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, কিন্তু লক্ষ্য থেকে কখনো সরে যাননি। তাঁর জীবনের বহু বছর কেটেছে কারান্তরালে। মুচলেকার বিনিময়ে গোয়েন্দাদের কারাগার থেকে মুক্তির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বারবার। বলেছেন, তিনি জীবন দেবেন কিন্তু বাংলার মানুষের মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম থেকে বিরত থাকবেন না।

একাধিকবার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। আগরতলা মামলায় ক্যান্টনমেন্টে বন্দী থাকার সময় তাঁকে পেছন থেকে গুলি করে মারার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তথ্য পেয়ে তিনি সাবধান হয়ে যান। সার্জেন্ট জহুরুল হক সেই বন্দিশালায় শহীদ হন। আগরতলা মামলায় তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলানোর পরিকল্পনাই করেছিলেন পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান। কিন্তু বাংলার মানুষ উনসত্তরের বীরোচিত গণ–আন্দোলন গড়ে তুলে তাঁকে মুক্ত করে আনে। তাঁকে ভালোবেসে উপাধি দেয় ‘বঙ্গবন্ধু’। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কারাগারে তাঁকে প্রচণ্ড গরমে নিঃসঙ্গ সেলের মধ্যেই কেবল বন্দী করে রাখা হয়নি, তাঁর শাস্তি সাব্যস্ত করে রাখা হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড।

বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার লক্ষ্যে এগিয়েছেন নির্ভুলভাবে, ধাপে ধাপে। তিনি ছয় দফা ঘোষণা করেছেন, ইয়াহিয়া খানকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করেছেন। তিনি জানতেন, নির্বাচনে তিনি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন। নির্বাচন হলো।

পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান মিলে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকশ্রেণি বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা না দেওয়ার ষড়যন্ত্র করল। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বঙ্গবন্ধু অসহযোগের ডাক দিলেন। ৭ মার্চ অবিস্মরণীয় এক ভাষণে বললেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ অবস্তুগত বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত সেই ভাষণ ছিল একই সঙ্গে কাব্যময় এবং রাজনৈতিক প্রজ্ঞার এক অনন্য উদাহরণ।

বঙ্গবন্ধু সে ভাষণে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন, শত্রুর মোকাবিলা করতে বলেছেন—যদি বাঙালিদের হত্যার চেষ্টা করা হয়। তিনি মুক্তি ও স্বাধীনতার আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু রাজনৈতিক ভারসাম্য ক্ষুণ্ন করে একটি শব্দও বলেননি।

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু প্রথমেই ছুটে গেছেন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান), তাঁর মানুষের কাছে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একই ফ্লাইটে ভারত থেকে ঢাকা এসেছিলেন ভারতীয় কর্মকর্তা ভেদ মারওয়া। প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে দেওয়া ভেদ মারওয়ার সাক্ষাৎকার থেকে আমরা জেনেছি, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ফাঁসির কাষ্ঠে গিয়েও আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলা আমার দেশ, স্বাধীন বাংলা, জয় বাংলা।’ বলেছিলেন, এই বাংলাদেশে হবে গণতন্ত্র, এই বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। বলেছিলেন, এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না, যদি বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে না পায়, যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, যুবকেরা কাজ না পায়।

বঙ্গবন্ধু রক্ত দিয়ে মানুষের ভালোবাসার ঋণ শোধ করেছেন। কিন্তু তাঁর কাছে আমাদের যে ঋণ, তা শোধ হবে কী করে? হবে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মধ্য দিয়ে; গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে।

আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা জানাই।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.