The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২৮শে মার্চ, ২০২৪

পেরেকের বিষে আক্রান্ত রাবির হাজারো গাছ, স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত

মিশন , রাবি প্রতিনিধি: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। গাছপালা আমাদের অক্সিজেন নিতে সাহায্য করে। কিন্তু প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে পেরেক ঠুকে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত করার প্রতিযোগিতা চলছে এখন সর্বত্র। এ রকম এক প্রতিযোগিতা চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে গাছপালাগুলোর উপর। পরিবেশবিদরা বলছেন, পেরেকের আঘাতে গাছের যে জায়গাটায় ছিদ্র হয় সেই ছিদ্র দিয়ে পচা পানি, বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করার ফলে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। ফলে গাছের আয়ু কমে যায়।

গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড-বিজ্ঞাপন লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে লাগানো হয়েছে শত-শত ব্যানার ও পোস্টার। এ নিয়ে প্রশাসনকেও কোনো উদ্দ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখে যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইট, কাজলা গেইট, প্যারিস রোড, টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন মার্কেট, হলগুলোর সামনে, বিনোদপুর ও রেলস্টেশনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে ঝুলানো হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রচার-প্রচারণার অসংখ্য সাইনবোর্ড-ব্যানার, ফেস্টুন ও বিজ্ঞাপন। তাতে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোর প্রচারণাও। গাছগুলোর চিত্র দেখা মনে হবে একেকটি বিজ্ঞাপন বোর্ড।

এদিকে গাছে পেরেক ঠোকানো দন্ডনীয় অপরাধ হলেও বাস্তবে তার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এমন অপরাধে পা রাখছেন অনেকেই। গাছে পেরেক ঠোকে সাইনবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। কিন্তু শুধু কাগজ-কলমেইএ আইনটি সীমাবদ্ধ। বাস্তবে নেই এর কোনো প্রয়োগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদরা বলছেন, পেরেক লাগানো গাছের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পেরেক লাগানোর ফলে গাছের যে ছিদ্র হয়, ছিদ্র দিয়ে পানি এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করার ফলে গাছগুলোর দ্রুত পচন ধরে। এতে খাদ্য ও পানি শোষণপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে গাছগুলো মারা যেতে পারে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো গাছের ক্ষতি করে চলেছে। পরিবেশকে রক্ষার জন্য সকলের সচেতন হওয়া উচিত

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া সোহাগ বলেন, গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছে পেরেক ঠুকলে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। এতে তাদের ক্ষতি হয়। এভাবে রাজনৈতিক দলের প্রচারণা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য গাছ ব্যবহার করা বন্ধ করার জন্য দেশে আইন আছে। তাই কোনোভাবেই গাছে পেরেক ঠোকা যাবে না। একান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে গাছের গায়ে তার বা রশি দিয়ে তা বেঁধে ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্র সংগঠনের যে ব্যানারগুলো পেরেক ঠোকে গাছে লাগানো হয়েছে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পুরো পরিবেশের উপর পড়ছে। সচেতন শিক্ষার্থী হয়ে যদি আমরা এমন কর্মকান্ড করি তাহলে অন্যদেরকে আমরা কি শেখাবো। ক্যাম্পাসের গাছগুলোতে এখনো পেরেক ঠোকে ব্যানার লাগানো হচ্ছে কিন্তু প্রশাসন কোনো উদ্দ্যোগ নিচ্ছে না। অতিদ্রুত প্রশাসন এবিষয়ে নজর দিবে বলে আমি আশাবাদী।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ও নাট্যকার মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, গাছে পেরেক মারা কেবল আইনের ব্যত্যয় নয় এটা গাছকে ধ্বংস করার একটি চেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয় হল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। দেশ তাদেরকে অনুসরণ করে। শিক্ষিত মানুষরা হয়ে যদি আমরা এসব কাজ করি তাহলে সারা দেশে যে বৃক্ষ নিধন চলছে তাদেরকে কীভাবে সচেতন করব? গাছে পেরেক ঠোকার ফলে ওই গাছের আয়ু কমে যায়। ফলে গাছটি দ্রুত সময়ে মারা যায়। সব থেকে চিন্তার বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় গাছ নিধনের এমন প্রকাশ্য চেষ্টা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মনজুর হোসেন বলেন, গাছ আমাদেরকে অক্সিজেন নিতে সাহায্য করে। গাছে পেরেক ঠোকা মানে ও গাছ আর স্থায়ী হতে পারে না। ক্যাম্পাসের অনেক গাছ দিন দিন মারা যাচ্ছে। গাছে পেরেক ঠোকানো হলে গাছ মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। এক পর্যায়ে গাছগুলোকে মারা যেতেও দেখা যায়। গাছকে হত্যা করা মানে পরিবেশকে হত্যা করার সামিল। সমাজের পরিবেশ রক্ষার্থে গাছপালার কোনো বিকল্প নেই। তাই আমাদের সকলের উচিত ধ্বংস না করে গাছ লাগানো উচিত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজশাহী জেলার সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন, গাছের জীবনকে নষ্ট করার অধিকার কোনো ব্যক্তির নেই। এখানে সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে। সরকার আইন করেছে কিন্তু আইনকে যারা বাস্তবায়ন করবে তারা সঠিকভাবে সেটা পালন করছে না। কোনোভাবেই এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে বন অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ে যদি সকলকে সচেতন করা যায় তাহলে আগামী দিনে গাছ নিধন কমে আসবে তিনি মনে করছেন।

প্রশাসনের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, গাছে পেরেক ঠুকে পোস্টার-ব্যানার টাঙ্গানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার একটি আইন পাস করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রশাসন থেকে উদ্দ্যোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের সকল গাছ থেকে পোস্টার-ব্যানার নামানোর জন্য আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। আবারও বিশেষ অভিযান চালাবো। তার পরেও যদি কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা সংস্থা এই কাজটি অব্যাহত রাখে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা চাই প্রতিটি গাছ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বেড়ে উঠুক। গাছের প্রতি যত্নশীল হওয়ার জন্য তিনি সকল ছাত্র-ছাত্রীদের আহ্বান জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, নীরবে গাছ আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করে যাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গাছের জন্যই বেশি পরিচিত। আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ করছি গাছে পেরেক ঠোকে ব্যানার ফেস্টুন লাগানোর ফলে গাছের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এমন কর্মকান্ড থেকে উঠে আসার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে সচেতন করার পাশাপাশি পেরেকের পরিবর্তে বাঁশ, রশ্মি ব্যবহারে নির্দেশ দিবো আমরা। ক্যাম্পাসে পেরেক ঠোকে যেসব ব্যানার লাগানো হয়েছে তা সরিয়ে ফেলার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.

  1. প্রচ্ছদ
  2. ক্যাম্পাস
  3. পেরেকের বিষে আক্রান্ত রাবির হাজারো গাছ, স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত

পেরেকের বিষে আক্রান্ত রাবির হাজারো গাছ, স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত

মিশন , রাবি প্রতিনিধি: পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। গাছপালা আমাদের অক্সিজেন নিতে সাহায্য করে। কিন্তু প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে পেরেক ঠুকে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত করার প্রতিযোগিতা চলছে এখন সর্বত্র। এ রকম এক প্রতিযোগিতা চলছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে গাছপালাগুলোর উপর। পরিবেশবিদরা বলছেন, পেরেকের আঘাতে গাছের যে জায়গাটায় ছিদ্র হয় সেই ছিদ্র দিয়ে পচা পানি, বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করার ফলে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। ফলে গাছের আয়ু কমে যায়।

গাছে পেরেক ঠুকে সাইনবোর্ড-বিজ্ঞাপন লাগানো দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে লাগানো হয়েছে শত-শত ব্যানার ও পোস্টার। এ নিয়ে প্রশাসনকেও কোনো উদ্দ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখে যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেইট, কাজলা গেইট, প্যারিস রোড, টুকিটাকি চত্বর, পরিবহন মার্কেট, হলগুলোর সামনে, বিনোদপুর ও রেলস্টেশনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছগুলোতে পেরেক ঠুকে ঝুলানো হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের প্রচার-প্রচারণার অসংখ্য সাইনবোর্ড-ব্যানার, ফেস্টুন ও বিজ্ঞাপন। তাতে পিছিয়ে নেই বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোর প্রচারণাও। গাছগুলোর চিত্র দেখা মনে হবে একেকটি বিজ্ঞাপন বোর্ড।

এদিকে গাছে পেরেক ঠোকানো দন্ডনীয় অপরাধ হলেও বাস্তবে তার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এমন অপরাধে পা রাখছেন অনেকেই। গাছে পেরেক ঠোকে সাইনবোর্ড না লাগানোর বিষয়ে ২০০২ সালের ৭ জুলাই জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়। কিন্তু শুধু কাগজ-কলমেইএ আইনটি সীমাবদ্ধ। বাস্তবে নেই এর কোনো প্রয়োগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদরা বলছেন, পেরেক লাগানো গাছের জন্য খুবই ক্ষতিকর। পেরেক লাগানোর ফলে গাছের যে ছিদ্র হয়, ছিদ্র দিয়ে পানি এবং বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করার ফলে গাছগুলোর দ্রুত পচন ধরে। এতে খাদ্য ও পানি শোষণপ্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে গাছগুলো মারা যেতে পারে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে গাছ লাগানো এবং গাছের পরিচর্যা করা প্রয়োজন, সেখানে উল্টো গাছের ক্ষতি করে চলেছে। পরিবেশকে রক্ষার জন্য সকলের সচেতন হওয়া উচিত

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী জাকারিয়া সোহাগ বলেন, গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছে পেরেক ঠুকলে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। এতে তাদের ক্ষতি হয়। এভাবে রাজনৈতিক দলের প্রচারণা বা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য গাছ ব্যবহার করা বন্ধ করার জন্য দেশে আইন আছে। তাই কোনোভাবেই গাছে পেরেক ঠোকা যাবে না। একান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে গাছের গায়ে তার বা রশি দিয়ে তা বেঁধে ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর বলেন, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে ছাত্র সংগঠনের যে ব্যানারগুলো পেরেক ঠোকে গাছে লাগানো হয়েছে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পুরো পরিবেশের উপর পড়ছে। সচেতন শিক্ষার্থী হয়ে যদি আমরা এমন কর্মকান্ড করি তাহলে অন্যদেরকে আমরা কি শেখাবো। ক্যাম্পাসের গাছগুলোতে এখনো পেরেক ঠোকে ব্যানার লাগানো হচ্ছে কিন্তু প্রশাসন কোনো উদ্দ্যোগ নিচ্ছে না। অতিদ্রুত প্রশাসন এবিষয়ে নজর দিবে বলে আমি আশাবাদী।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ও নাট্যকার মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, গাছে পেরেক মারা কেবল আইনের ব্যত্যয় নয় এটা গাছকে ধ্বংস করার একটি চেষ্টা। বিশ্ববিদ্যালয় হল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান। দেশ তাদেরকে অনুসরণ করে। শিক্ষিত মানুষরা হয়ে যদি আমরা এসব কাজ করি তাহলে সারা দেশে যে বৃক্ষ নিধন চলছে তাদেরকে কীভাবে সচেতন করব? গাছে পেরেক ঠোকার ফলে ওই গাছের আয়ু কমে যায়। ফলে গাছটি দ্রুত সময়ে মারা যায়। সব থেকে চিন্তার বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় গাছ নিধনের এমন প্রকাশ্য চেষ্টা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. মনজুর হোসেন বলেন, গাছ আমাদেরকে অক্সিজেন নিতে সাহায্য করে। গাছে পেরেক ঠোকা মানে ও গাছ আর স্থায়ী হতে পারে না। ক্যাম্পাসের অনেক গাছ দিন দিন মারা যাচ্ছে। গাছে পেরেক ঠোকানো হলে গাছ মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যহত হয়। এক পর্যায়ে গাছগুলোকে মারা যেতেও দেখা যায়। গাছকে হত্যা করা মানে পরিবেশকে হত্যা করার সামিল। সমাজের পরিবেশ রক্ষার্থে গাছপালার কোনো বিকল্প নেই। তাই আমাদের সকলের উচিত ধ্বংস না করে গাছ লাগানো উচিত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) রাজশাহী জেলার সমন্বয়কারী তন্ময় সান্যাল বলেন, গাছের জীবনকে নষ্ট করার অধিকার কোনো ব্যক্তির নেই। এখানে সচেতনতার বড় অভাব রয়েছে। সরকার আইন করেছে কিন্তু আইনকে যারা বাস্তবায়ন করবে তারা সঠিকভাবে সেটা পালন করছে না। কোনোভাবেই এ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশে বন অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের সমন্বয়ে যদি সকলকে সচেতন করা যায় তাহলে আগামী দিনে গাছ নিধন কমে আসবে তিনি মনে করছেন।

প্রশাসনের উদ্যোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, গাছে পেরেক ঠুকে পোস্টার-ব্যানার টাঙ্গানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার একটি আইন পাস করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রশাসন থেকে উদ্দ্যোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরের সকল গাছ থেকে পোস্টার-ব্যানার নামানোর জন্য আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। আবারও বিশেষ অভিযান চালাবো। তার পরেও যদি কোন ব্যক্তি, সংগঠন বা সংস্থা এই কাজটি অব্যাহত রাখে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আমরা চাই প্রতিটি গাছ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বেড়ে উঠুক। গাছের প্রতি যত্নশীল হওয়ার জন্য তিনি সকল ছাত্র-ছাত্রীদের আহ্বান জানান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, নীরবে গাছ আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করে যাচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গাছের জন্যই বেশি পরিচিত। আমরা ইতোমধ্যে লক্ষ করছি গাছে পেরেক ঠোকে ব্যানার ফেস্টুন লাগানোর ফলে গাছের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এমন কর্মকান্ড থেকে উঠে আসার জন্য শিক্ষার্থীদেরকে সচেতন করার পাশাপাশি পেরেকের পরিবর্তে বাঁশ, রশ্মি ব্যবহারে নির্দেশ দিবো আমরা। ক্যাম্পাসে পেরেক ঠোকে যেসব ব্যানার লাগানো হয়েছে তা সরিয়ে ফেলার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

পাঠকের পছন্দ

মন্তব্য করুন