The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

তাজউদ্দীন, তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগছে না। তুমি এসো- বঙ্গবন্ধু

হাসিবুল আলম প্লাবন, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল ইউনিভার্সিটিঃ মৃত্যুর কিছুদিন আগে তাজউদ্দীন আহমেদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি বাবার সাথে দেখা করতে জেলে যান। তাজউদ্দীন রিমিকে জানান তিনি ‘মুজিব ভাই’কে স্বপ্নে দেখেছিলেন, যিনি তাকে বলেছিলেন “তাজউদ্দীন, তোমাকে ছাড়া আমার ভালো লাগছে না। তুমি এসো”

১৯৭৫ সালের ১ নভেম্বর সৈয়দা জোহরা তার সন্তানদের নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাজউদ্দীন আহমদকে দেখতে যান। এটাই হবে তাদের শেষ সাক্ষাৎ। দুই দিন পর তাজউদ্দীন আহমদ ও তার তিন সহকর্মীকে হত্যা করা হবে। তাজউদ্দীন আহমেদ টের পেয়েছিলেন পটভূমিতে অন্ধকার কিছু উন্মোচিত হচ্ছে। তিনি আশঙ্কা করেছিলেন যে একটি আক্রমণ আসন্ন। তিনি তার পরিবার ও অন্যদের জেলখানাকে রেডক্রসের তত্ত্বাবধানে আনতে বলেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জেলে হামলা হতে পারে বলে বার্তা পাঠাতে বলেন তিনি ।

আড়াই মাস জেলে থাকার সময় তাজউদ্দীন আহমদ একটি জার্নালে সমস্ত বিবরণ লিখেছিলেন, যা ছিল মোট ৫০০ পৃষ্ঠার । ১৯৭৫ সালের ১ নভেম্বর সহধর্মিণী জোহরার সাথে দেখা হলে তিনি তাকে এ জার্নালটি সম্পর্কে বলেছিলেন। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্হার লোকেরা তাদের চারপাশে বসে ছিল তাই তিনি জোহরাকে অস্পষ্টভাবে এবং ভাঙ্গা বাক্যে জার্নালটি সম্পর্কে বলেন। তাজউদ্দিম আহমেদ এক্ষেত্রে কিছু প্রতীকী ভাষা যেমন “ডায়েরি, 500 পৃষ্ঠা, লাল কভার, কালো বর্ডার” ইত্যাদি বলেছিলেন। জোহরা বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি কী বলতে চাইছেন। যে তাকে হত্যা করা হবে এবং ডায়েরিটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

চার নেতা হত্যার অন্যতম প্রধান সাক্ষী ছিলেন তৎকালীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষী আমিনুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ৩ রা নভেম্বর সোমবার বেলা ২টার দিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এটিএম নুরুজ্জামান’এর টেলিফোনের রিং শুনে আমিনুর রহমানের ঘুম ভাঙে। আইজি তাকে জানান যে তিনি কারাগারে আসছেন এবং “কিছু সেনা কর্মকর্তা”ও তার সাথে থাকবেন। এর কিছুক্ষণ পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দুটি গাড়ি আসে। একটি গাড়িতে আইজি নুরুজ্জামানসহ আরো ৪ জন ছিলেন। অন্যটিতে ছিল আরও ২ জন। তাদের কাছে স্টেনগান ও ৩০৩টি রাইফেল ছিল । এতক্ষণে জেলের ঘণ্টা বারবার বাজতে শুরু করে এবং কারাগারের কর্মচারীদের একটি বিশাল ভিড় গেটের কাছে জড়ো হয়েছিল, কী ঘটছে তা ভেবে হতবাক হয়ে গিয়েছিল।

তৎকালীন অবৈধ রাষ্ট্রপতি মোশতাক কারাগারে ফোন করেন এবং মহাপরিদর্শকের সাথে কথা বলেন। আমিনুর রহমান এটিএম নুরুজ্জামানকে মোশতাক কর্তৃক অর্পিত অদেশ নিয়ে হতবাক ও অস্বীকৃতি প্রকাশ করতে শুনেছিলেন।

হাতে একটি চিরকুট (অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত অফিসিয়াল নোট) নিয়ে, আইজি জেলের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) কাজী আবদুল আউয়ালের অফিসে গিয়ে উত্তর দিলেন, “চল ভিতরে যাই”।

জেল গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে আইজি দুই খুনি নিয়ে কারাগারে প্রবেশ করেন। এ সময় ডিআইজি কাজী আবদুল আউয়াল আইজিকে বলেন, কারাগারের ভেতরে অস্ত্র বহন করা নিষিদ্ধ। তার উচিত সৈন্যদের এখানে তাদের অস্ত্র রাখতে বলা ।

বাকি খুনিরা গেট না খোলার আপত্তি জানিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারাও তখন কম্পাউন্ডে ঢুকতে লাগল। কিন্তু ডিআইজি কাজী আবদুল আউয়াল আপত্তি করে থাকেন। নতুন কক্ষে প্রবেশের ঠিক আগে, তারা তাকে ধাক্কা দেয় এবং গালি দেয় ভেতরে প্রবেশ করে ।

এরপর আইজি জেলার আমিনুর রহমানকে সবার সামনে চিট দেন এবং চার নেতাকে এক কক্ষে নিয়ে আসতে বলেন। আদেশ অনুযায়ী মিটিংয়ের জন্য কারাগারের একটি কক্ষ প্রস্তুত করেন আমিনুর রহমান। তিনি সবার বসার জন্য দুপাশে দুটি বেঞ্চ সহ মাঝখানে একটি কাঠের টেবিল রাখলেন। একটি বেঞ্চ চার নেতার জন্য অন্যটি ভিজিটরদের জন্য। আমিনুর তখন চার নেতাকে নিতে যান।

একটি কারাগারে সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দীন আহমেদ ছিলেন। আমিনুর তাদের কক্ষে গিয়ে দেখতে পান তাজউদ্দীন আহমদ ওজু করছেন এবং সৈয়দ নজরুল কোরআন পড়ছেন । সময়টা তখন ফজরের নামাযের কিছু আগে।

চার জাতীয় নেতাকে নতুন সেলে নিয়ে এসে একপাশে বেঞ্চে বসানো হলো। দরজার কাছেই ছিলেন ক্যাপ্টেন মনসুর আলী । তারা সবাই তাদের অজানা ভিজিটরদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অস্ত্র সজ্জিত দলটি সেলে এসে পৌছালে আমিনুর উভয় পক্ষের পরিচয় দিতে থাকেন। কিন্তু মনসুর আলীর নাম বলার আগেই খুনিরা গুলি করতে শুরু করে। খুনিরা এলোপাতাড়ি ভাবে গুলি ছুড়ে, তারপর চলে যায়। কিন্তু হঠাৎ তারা আবার ঘর থেকে “পানি, পানি” চিৎকার শুনতে পায়। তাই ঘাতকরা দৌড়ে সেলপনফিরে গেল। মৃত্যু নিশ্চিত করতে নেতাদের বেয়নেটেড করা জয় হিংস্রভাবে। সেই সঙ্গে হত্যা করা হয় চার নেতা, বাংলাদেশের প্রথম সরকারের নেতৃত্বদানকারী নেতাদের। তাদের ক্যারিশম্যাটিক নেতা এবং দীর্ঘদিনের সহকর্মী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শাহাদাত বরণোর ৭৯ দিন পর তাদের মৃত্যু হয়।

তাদের মৃত্যুর মিনিটখানেক পরে সারা শহর জুড়ে ফজরের আজান হতে থাকে। সেই সাথে বাংলাদেশ হারায় তাদের মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ নেতৃত্ব দানকারী নেতাদের।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.