The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪

জীবন দিয়ে হলেও ৬ স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করব

সাত স্ত্রীকে নিয়ে সংসার করছিলেন কু‌ষ্টিয়ার রবিজুল। এর মাঝে ছয় নম্বর স্ত্রী নিজ থেকে তালাক দিয়ে চলে গেছেন। এখন ছয় স্ত্রী‌কে নিয়ে সংসার করছেন তিনি। রবিজুল ইসলাম (৪০) পাটিকাবাড়ি গ্রামের মিয়াপাড়ার আয়নাল মণ্ডলের ছেলে। কিন্তু তার এই সুখের সংসারে গ্রা‌মের মড়লরা ঝামেলা করছে বলে অভিযোগ করেছেন র‌বিজুল।

শনিবার (৮ জুন) স্থানীয় মাতব্বররা চার স্ত্রীর বেশি রাখার বিধান নেই; এই ফতোয়া জারি করে দুই স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয় রবিজুলকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল ১০টায় গ্রামের ২২ জন এক হয়ে পাটিকাবাড়ি বাজারে সামাজিক বৈঠক ডাকেন। সেখানে রবিজুলকেও ডেকে আনেন তারা। বৈঠকে প্রধানের ভূমিকা পালন করেন স্থানীয় মাতবর নাজিম মণ্ডল। এ ছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সফর উদ্দিন, লিটন মন্ডল, মাজিলা দারুস সুন্নাহ বহুমুখী মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মো. মুফতি আলমগীর হোসাইন, পাটিকাবাড়ী বায়তুল আমান জামে মসজিদের পেশ ঈমাম মো. মীর শফিকুল ইসলাম, পাটিকাবাড়ী হেফজখানা ও বহুমুখী মাদরাসার শিক্ষক মিজানুর রহমান, মাজিলা পশ্চিমপাড়া দারুলউলুম হাফিজীয়া ক্বারিয়ানা মাদরাসার মুহতামিম ক্বারী মশিউর রহমানসহ রবিজুলের পঞ্চম ও সপ্তম স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে শরিয়ত মোতাবেক চারের অধিক স্ত্রী রাখার বিধান না থাকার ইসলামি ব্যাখ্যা দেন মুহতামিম হাফেজ ম. মুফতি আলমগীর হোসাইন। তবে শেষ পর্যন্ত ২২ মাতব্বরের সিদ্ধান্ত ওই দুই স্ত্রী বাড়ি ছাড়া হলেও পুলিশি হস্তক্ষেপে আবারও স্বামী রবিজুলের ঘরে ঠাঁই হয়েছে তাদের।

এ বিষয়ে রাজিবুল অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের ২২ জন মড়ল একসঙ্গে হয়ে ইসলামী শরিয়ত মানাতে তাকে দুই স্ত্রীকে তালাক দিতে বাধ্য করেছেন। এমনকি বিচার ডেকে তাকে লাঞ্ছিত ও দুই স্ত্রীকে গ্রাম থেকে বের করে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, সবার সম্মতিতে ৭টি বিয়ে করলেও সুখেই সংসার করছিলাম। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালী মাতব্বররা আমাদের বিয়েকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। ৪টির অধিক স্ত্রী রাখতে পারব না বলে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত গত শনিবার (৮ জুন) হঠাৎ আমাকে এবং আমার পঞ্চম এবং সপ্তম স্ত্রীকে তলব করেন মাতব্বররা। পাটিকাবাড়ি বাজারে ভরা মজলিসে আমার দুই স্ত্রীকে তালাক দিতে বলেন। শেষ পর্যন্ত তাদের চাপে আমার দুই স্ত্রী এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের হয়।

রবিজুল বলেন, আমার সব স্ত্রীর পরিবার অত্যন্ত গরিব। তারা আমার সঙ্গে সুখেই সংসার করছিল। দুইদিন অসহায়ের মত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত আইনের আশ্রয় নিতে থানা পুলিশের শরণাপন্ন হয় তারা। কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা পুলিশে স্বামীর কাছে ফিরতে চান এবং একই সঙ্গে মাতব্বরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে ইবি থানা পুলিশ আমার দুই স্ত্রীকে আমার কাছে নিয়ে আসে। তারা এখন আমার বাড়িতেই সংসার করছে।

রবিজুল আরও বলেন, আমি আমার স্ত্রীদের খুব ভালোবাসি, তাদের সংসারে ৫টি সন্তানও রয়েছে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে আজীবন এক সঙ্গে থাকতে চাই। কোনো ষড়যন্ত্রকারী, কোনো প্রভাবশালী আমাদের বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। জীবন দিয়ে হলেও তাদের রক্ষা করব।

এ বিষয়ে তাদের দুই স্ত্রী বলেন, আমাদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে। রবিজুল আমাদেরকে অনেক ভালোবাসেন। কোনো পরিস্থিতিতে কেউই আমাদেরকে আলাদা করতে পারবে না। আমরা সবাই বোনের মত এক সঙ্গে সংসার করছি।

এদিকে রবিজুলের দুই স্ত্রীকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে বৈঠকের প্রধান নাজিম মণ্ডল বলেন, ‘ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক চার স্ত্রীর বেশি রাখার বিধান নেই। সামাজিকভাবে বসে আমরা তাই বোঝাতে চেয়েছিলাম। রবিজুল তার দুই স্ত্রীকে তালাক দিবেন বলে নিজেই অঙ্গীকার করেছেন। আমরা তাকে বাধ্য করিনি, তাকে মারধরও করিনি।’

বৈঠকে উপস্থিত পাটিকাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সফর উদ্দিন বলেন, ‘এটা অবৈধ বিয়ে। আমরা তাকে বাধ্য করিনি। তার দুই স্ত্রী মেনে নিয়েই বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। তাদের কাবিন ও খোরপোশ বাবদ দুই লাখ টাকাও দেয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পার্থ প্রতিম শীল জানান, ‘দুই পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে সেটা ভিন্ন। কিন্তু জোরজবরদস্তির কোনো সুযোগ নেই।’

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.