বিশেষ প্রতিবেদকঃ ২০২২ সালের ২৮ এপ্রিল মোশারফ হোসেনকে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়। যেখানে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান ফয়জুর রহমা রবিন। দায়িত্ব প্রাপ্তির পর থেকে কেন্দ্রের সাথে সমন্বয় করে তারা জেলা ছাত্রলীগেকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
সকল ধরনের গ্রুপিং, বিভাজন চেষ্টাকে আমলে না নিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সার্বিক কার্যক্রমগুলো একসাথে বাস্তবায়ন করতেও দেখা গেছে তাদেরকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বেশ কিছু অনাকাঙ্খিত ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলে জেলা ছাত্রলীগ চরম এক ইমেজ সংকটে পড়েছে বলে ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নেতা কর্মীরা মনে করছেন।
সাময়িক ব্যক্তি স্বার্থে বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের ছবি, ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে হয়ত কারো কারো ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ হয়। কিন্তু আদতে কলঙ্ক লেপন করা হয় সংগঠনের গায়েই।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেনের একটি অনাকাঙ্খিত ভিডিও কে বা কারা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। যেটাকে মোশারফ হোসেন সুপার এডিটেড বলে দাবি করেছেন।
৩ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যায় মোশারফ হোসেন বিদেশি কোন এক মেয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলছেন। যারা ভিডিওটি দেখেছেন এমন একাধিক ব্যক্তি বলেছেন যে, মোশারফ হোসেনকে ভিডিওর শুরুতে দেখা গেছে এটা সত্য কিন্তু ভিডিওর পরবর্তী অংশে এডিটিং এর মাধ্যমে যে অংশ জুড়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলোর সাথে মোশারফ হোসেনের কোন মিল নেই।
ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ১৭ ই সেপ্টম্বর হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেনকে অব্যাহতি প্রদান করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে এ পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন কর্মকান্ড এবং শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে স্বীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঘটনাটি আমলে নিয়ে তড়িত পদক্ষেপ নিয়েছে বিষয়টি সত্য। কিন্তু কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কি আদেও ঘটনার যথাযথ তদন্ত করতে আগ্রহী? এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার সাথে ব্যক্তি মোশারফ হোসেনের সাথে ছাত্রলীগের নাম জড়িয়ে সুবিধাবাদীরা যাতে জেলা ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে না পারে সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এ বিষয়ে বিস্তর অনুসন্ধান করে সত্য উন্মোচন করা উচিত বলে মনে করেন অনেকে।
এই অনাকাঙ্খিত ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট, একই সাথে ভুক্তভোগী জেলা ছাত্রলীগের অব্যহতি প্রাপ্ত সভাপতি মোশারফ হোসেন দাবি করেছেন, বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি এডিট করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে করে তিনি সামাজিক ভাবে চরম অপমানিত হয়েছেন। সামাজাকি ভাবে হেয় করতেই সুপার এডিটিং করে একটি চক্র এই কাজটি করেছে। আগেও তারা বিভিন্ন ভাবে আমার রাজনৈতেক ক্যারিয়ারকে ধ্বংস করতে চেয়েছে। বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে এমন কুরুচিপূর্ন এডিটেড ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। এর ফলে আমার সামাজিক মর্যাদা হানি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে কোন একটি ভিডিও এডিটেড কিনা তা বের করা খুবই সহজ ব্যাপার। তাছাড়া ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে নানা অসংগতি সাদা চোখেই ধরা পড়বে। আমার দাবি ভিডিওটির ফরেনসিক করা হোক। ফরেনসিক রিপোর্ট ও যথাযথ তদন্ত স্বাপেক্ষে যদি প্রমাণিত হয় ছড়িয়ে দেওয়া ভিডিওটি এডিটেড নয় বা সত্য তাহলে আমি নিজেই হাতকড়া পড়ে জেলে চলে যাবো। ঐ ভিডিও সত্য হলে ছাত্রলীগ বা রাষ্ট্র আমাকে যে শাস্তি দিবে আমি তা মাথা পেতে নেবো।
মোশারফ হোসেন বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ভাই ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান ভাইয়ের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত মেনে বলতে চাই, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি পদায়ন করার আগে আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তার উপর তদন্ত করা হোক, যদি মিথ্যা হয় তাহলে আমাকে স্বপদে বহাল রাখবেন আশা রাখি এবং আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ যদি সত্য প্রমানিত হয় তাহলে সকল সিদ্বান্ত আগেও মেনে নিয়েছি ভবিষ্যতেও মেনে নিব।
এবিষয়ে জানতে এই প্রতিবেদকের কথা হয় আজমিরিগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অনিকের সাথে। তিনি বলেন, হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর থেকে একটি কুচক্রি মহল জেলা ছাত্রলীগের একতা ও সুনাম নষ্ট করতে তৎপর হয়ে ওঠে, যার নেক্কারজনক উদাহরণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোশারফ হোসেন ভাইয়ের এডিটেড ভিডিও ফাসের মাধ্যমে আমরা দেখতে পেয়েছি। আমরা হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ একতাবদ্ধ আছি। এই এডিটেড ভিডিও ছড়িয়ে যারা জেলা ছাত্রলীগের সুনাম ও ব্যক্তি মোশারফ হোসেনেকে সামাজিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করছেন তাদের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত স্বাপেক্ষে প্রত্যেকের বিচার হওয়া উচিত।
অনাকাঙ্খিত এই ভিডিওর সত্য মিথ্য যাচাই করতে সাংবাদিক পরিচয়কে গোপন করে হবিগঞ্জ জেলার কয়েকজনের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেন এই প্রতিবেদক। তাদের বেশিরভাগই ভিডিওটি দেখেনি বলে জানিয়েছেন। যারা দেখেছেন তাদের বেশির ভাগের কাছে ভিডিওটি এডিটং করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের নেতা আরিফ চৌধুরীও মনে করেন ভিডিওটি সম্পূর্ন এডিটেড। কয়েকদিন বাদেই জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ যাতে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ না করতে পারে সে জন্যই একটি কুচক্রি মহল জেলা ছাত্রলীগকে টার্গেট করে এমন কুরুচিপূর্ণ ভিডিও, ছবি ছড়িয়ে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোশাররফ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদকের উপর জেলার সাধারণ মানুষ ও আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছে। মোশাররফ হোসেন ভাইকে এমন মিথ্যা, বানোয়াট অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে স্বপদে বহাল করা হোক। আমরা তাদের নেতৃত্বে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে চাই।
বিষয়টি নিয়ে হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুর রহমান রবিনকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে তাদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ঘটনার প্রেক্ষিতে বিগত ১৬ সেপ্টেম্বর বানিয়াচং থানায় মোশারফ হোসেন সাত জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। যেখানে সামাজিক মাধ্যমে তাকে সমপৃক্ত করে এডিটেড একটি ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করার বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।
তবে কোন একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ও ভুক্তভোগী যদি একই ব্যক্তি হয় তাহলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদান করা উচিত বলে মনে করছেন হবিগঞ্জ ছাত্রলীগের এক অংশের নেতা কর্মীরা।