চৌত্রিশ বছর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসে আসেন বরিশালের অলিম উদ্দীন। জমি বেচে দেড় লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে আসেন তিনি। ক্যাম্পাসে খোলেন খাবারের হোটেল। প্রায় তিন যুগ ধরে কোনো রকম টিকে ছিলেন। কিন্তু করোনার ধাক্কা সামলাতে পারলেন না। তল্পিতল্পা গুটিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন তিনি।
বাকির খাতা পূর্ণ করে নিঃস্ব হয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি। গতকাল রোববার পুঁজি হারিয়ে শূন্য হাতে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন বলে জানা যায়। সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের কাছে তাঁর পাওনা প্রায় ৬ লাখ টাকা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের সামনে ‘প্রয়াস’ নামের খাবার হোটেলটি ছিল অলিম উদ্দীনের। তিনি ছাত্রদের কাছে ‘অলি ভাই’ নামেই পরিচিত ছিলেন। করোনার সময় ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েন। করোনা সংক্রমণের তীব্রতা কমার পর ক্যাম্পাস খুললে আবার ব্যবসা শুরু করেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে বাকি–বকেয়া আদায় করতে না পেরে ক্রমে পুঁজি হারিয়ে ফেলেন। সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর একেবারে নিঃস্ব হয়ে দোকান ছেড়ে দেন।
অলিম উদ্দীন বলেন, ‘১৯৮৮ সালে জমি বিক্রি করে দেড় লাখ টাকা নিয়ে বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসি। শুরুর দিকে ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারলেও গত কয়েক বছর ধরে ব্যবসা ভালো যাচ্ছিল না। যার অন্যতম কারণ বাকি খেয়ে টাকা না দিয়ে চলে যাওয়া। শিক্ষার্থীদের কাছে আমি প্রায় ৬ লাখ টাকা বকেয়া পাই। কিন্তু তাঁরা টাকা না দিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়।’
অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে অলিম উদ্দীন বলেন, ‘ছাত্রাবস্থায় যারা বাকি খেয়েছে, তাদের অনেকে এখন ভালো ভালো জায়গায় চাকরি করে। তারা চাইলে আমার টাকাগুলো দিয়ে দিতে পারে। কিন্তু দেয় না। বাকি খাওয়াতে খাওয়াতে আমি একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। দোকান ছেড়ে খালি হাতে ক্যাম্পাস থেকে চলে এসেছি। যারা আমার কাছ থেকে বাকি খেয়েছে, তারা যেন আমার মোবাইল নম্বরে বিকাশ করে টাকা পাঠিয়ে দেয়।’
বাড়িতে গিয়ে কী করবেন জানতে চাইলে অলিম বলেন, ‘এখন আমার কিছু করে খাওয়ার মতো বয়স নেই। আল্লাহ–বিল্লা করে কোনোমতে কাটাব।’
আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ক্ষুধার্ত আপনাকে অলি আহমেদ নিজের অর্থ খরচ করে রান্না করে খাইয়েছেন। আপনার বকেয়া পরিশোধ করে সর্বস্বান্ত অলি আহমেদের পাশে দাঁড়ানো আপনার আইনগত, নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব। অন্যথায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাস করলেও মনুষ্যত্বের পরীক্ষায় আপনি চূড়ান্তভাবে অকৃতকার্য।