The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

সহিংসতায় সাতক্ষীরায় আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়রম্যানসহ নিহত ১০

থানাসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ

কামরুজ্জামান, জেলা প্রতিনিধঃ  শেখ হাসিনার পদত্যাগ পরবর্তী সহিংস ঘটনায় সাতক্ষীরার আশাশুনি ও সদর উপজেলায় পৃথক দুটি ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকিরসহ ১০ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরও ১০/১২ জন।

সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা এবং সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে পৃথক ঘটনায় হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ আহতদেরকে সাতক্ষীরা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

নিহতরা হলেন, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নাকনা গ্রামের মৃত আমিনুর রহমানের ছেলে শেখ জাকির হোসেন (৫৩), একই গ্রামের শেখ শাহাজুর রহমান সাজুর ছেলে শেখ শাকের (২২), মৃত শেখ সুজাত আলীর ছেলে শেখ জাহাঙ্গীর (৪৮), মৃত শেখ আরিফুল ইসলাম এর ছেলে শেখ আশিক (৩৩), লস্করী খাজরা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে শাহিন আলম (২২), একই গ্রামের শেখ আজুয়ার রহমানের ছেলে সজীব (২২), কুড়িকাউনিয়া গ্রামের ওয়ারেজ আলী মোড়লের ছেলে হাফেজ আনাস বিল্লাহ (২১) ও একই ইউনিয়নের কল্যানপুর গ্রামের নুর হাকিম ঘোরামীর ছেলে আদম আলী (২৩) ও হিজলিয়া গ্রামের ছাত্তার সরদারের ছেলে আলমগীর হোসেন (১৬) এবং সদর উপজেলার বৈকারী ইউনিয়নের বৈকারী গ্রামের মৃত রাফেল সরদারের ছেলে আসাফুর রহমান (৬০)।

প্রতাপনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী আবু দাউদ ঢালী জানান, সোমবার কয়েকশ’ বিক্ষুদ্ধ জনতা মিছিল নিয়ে নাকনা গ্রামের জাকির চেয়াম্যানের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তার বাড়িতে ইট পাটকেল ছোড়ে। এক পর্যায় বিক্ষুদ্ধ জনতা জাকির চেয়ারম্যানের বাড়ির গেট ভেঙ্গে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে তিনি (জাকির) বাড়ির দোতালা থেকে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০/১২ জন আহত হয়। এসময় ক্ষুদ্ধ জনতা তার বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। গুলিবিদ্ধ আহতদের চারজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে হাফেজ আনাস বিল্লাহ, আদম আলী ও আলমগীর মারা যান। পরে তাদের মরদেহ গ্রামে ফিরিয়ে আনলে বিক্ষুদ্ধ জনতা জাকিরের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা জাকিরের বাড়িতে ঢুকে তাকেসহ তার সাথে থাকা শাকের, জাহাঙ্গীর, শাহিন আলম, সজীব ও আশিককে কুপিয়ে ও পিটিয়ে মেরে ফেলে। এসময় বাড়িতে থাকা জাকিরের স্ত্রী ও মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয় তারা।

চেয়ারম্যান আরো জানান, মঙ্গলবার সকালে নিহতদের মরদেহগুলি শনাক্ত করা হয়েছে।

আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিশ্বজিত অধিকারি বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের মরদেহ গুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সদর হাসপাতালে পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।

এদিকে, সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারী গ্রামে দূর্বৃত্তরা আসাফুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করে। রাত সোয়া ১২ টার দিকে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ আহমেদ হোসাইন তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপরদিকে, বিক্ষুব্ধ জনতা সোমবার রাতে সাতক্ষীরা সদর, শ্যামনগর ও কলারোয়া থানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে থানা থেকেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ সহ পুলিশ সদস্যদেরকে সেখান থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। এর পরপরই দুর্বৃত্তরা পৃথক পৃথক ভাবে থানায় ঢুকে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করে।

মঙ্গলবার সাতক্ষীরার সদর থানায় গিয়ে দেখা গেছে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে থানা ভবন। ভিতরে একটি রুম থেকে এখনো ধোঁয়া বের হচ্ছে। থানার সকল দরজা, জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে।
এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। এই সুযোগে এক শ্রেণীর দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন বাড়িতে ও ব্যবসা পতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুটপাট করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অপরদিকে, সাতক্ষীরা কারগার থেকে যে সমস্ত আসামীদের বিক্ষুদ্ধ জনতা তালা ভেঙে বের করে নিয়ে গিয়েছিল তারা অনেকেই সকাল থেকে আবারো স্ব ইচ্ছায় কারাগারে প্রবেশ করছেন বলে কারা সূত্রে জানা গেছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সাতক্ষীরায় স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে জনজীবন। দোকান-পাট, ব্যাংক, অফিস-আদালত খোলা ছিল। বাস না চললেও অন্যান্য যানচলাচল ছিল স্বাভাবিক।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.