আর্জেন্টিনার দুই বিশ্বকাপ জয়ের রূপকার ছিলেন সিজার লুই মেনোত্তি, কার্লোস বিলার্দো। ১৯৭৮ সালে ঘরের মাঠে মেনোত্তির অধীনে বিশ্বকাপ জিতেছিল আর্জেন্টিনা। ১৯৮৬ তে এসে ডিয়েগো ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন বিলার্দো।
এবার লিওনেল স্কালোনি আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিততে পারলে মেনোত্তি আর বিলার্দোর মতোই ইতিহাসে ঠাঁই পাবেন। ঐতিহাসিক সেই অর্জন থেকে স্কালোনি যে আছেন মাত্র এক ম্যাচ দূরে।
২০১৮ বিশ্বকাপে কোচ সাম্পাওলির অধীনে খুব ভালো ফলাফল করতে পারেনি আর্জেন্টিনা। যে ক্রোয়েশিয়াকে সেমিফাইনালে ৩–০ গোলে হারাল আর্জেন্টিনা, তাদের কাছেই গ্রুপপর্বের ম্যাচে হারতে হয়েছিল ৩–০ গোলে। কোন মতে দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠে আর্জেন্টিনা ধরাশায়ী হয়েছিল এমবাপ্পের দুর্ধর্ষ ফুটবলের কাছে।
বিশ্বকাপের পরপরই আর্জেন্টিনা দলের কোচিং স্টাফে এসেছিল বড় পরিবর্তন। চাকরি হারিয়েছিলেন সাম্পাওলি। সেবারই দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছিল স্কালোনির হাতে।
স্কালোনি সে সময় আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের যুব কার্যক্রমের দায়িত্বে ছিলেন। তবে স্কালোনির নিয়োগে তখন খুশি হতে পারেননি অনেকেই। আর্জেন্টাইন মিডিয়াও স্কালোনিকে খুব একটা ‘স্বাগত’ জানায়নি সে সময়। স্কালোনি আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ হওয়ার উপযোগী কি না, সে আলোচনাও উঠেছিল।
কিন্তু যতই দিন যেতে থাকল, স্কালোনি নিজেকে প্রমাণ করতে থাকলেন। তিনি গুছিয়ে তুললেন আর্জেন্টিনা দলকে। ২৮ বছর পর গত বছর জুলাইয়ে জয় করল প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা—কোপা আমেরিকা। তাতেই মনোভাব ঘুরে গেল সবার।
বিশ্বকাপের আগে টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত রইল আর্জেন্টিনা। কাতার বিশ্বকাপে একের পর এক বাধা ডিঙিয়ে স্কালোনি আর্জেন্টিনাকে তুলেছেন বিশ্বকাপের ফাইনালে। ইতিহাস গড়ার খুব কাছে দাঁড়িয়ে এখন স্কালোনি। শুরুতে যে কোচের ওপর ভরসাই করতে পারেননি আর্জেন্টিনা ফুটবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
স্কালোনির সঙ্গে দারুণ জমেছে মেসির। ২০০৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত চারজন ভিন্ন ভিন্ন কোচের অধীনে বিশ্বকাপে খেলেছেন মেসি। হোসে পেকারম্যান, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, আলেহান্দ্রো সাবেয়া আর হোর্হে সাম্পাওলি—স্কালোনির কোচিংয়ে ওই চারজনের সঙ্গে কী পার্থক্য চোখে পড়ছে মেসির?
কাল ম্যাচ শেষ সংবাদ সম্মেলনে মেসি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের দলের খেলোয়াড়েরা খুবই বুদ্ধিদীপ্ত ফুটবল খেলছে। প্রতিটি ম্যাচেই তারা প্রমাণ করেছে ম্যাচের পরিস্থিতি বিচার করে খেলতে তারা পারদর্শী। স্কালোনিই সবাইকে পরিস্থিতি বিচার করে খেলতে শিখিয়েছেন। তিনি জানেন কখন কোন কাজটা করতে হবে। তখন কী কৌশল নিতে হবে। কখন দলকে প্রেস করাবেন, কখন পেছনে নিয়ে যাবেন এটা স্কালোনি খুব ভালো করেই জানেন।’
তাহলে কী আগের কোচরা এসবে পারদর্শী ছিলেন না! যেকোনো বিচারেই স্কালোনির চেয়ে অনেক বড় নাম পেকারম্যান, সাবেয়া, সাম্পাওলি। ম্যারাডোনা তো কিংবদন্তিই।
মেসি আরও বিস্তারিত বলেছেন স্কালোনির বৈশিষ্ট্যগুলো, ‘স্কালোনি খেলার প্রতিটি বিস্তারিত চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন খেলোয়াড়দের। তিনি আমাদের বলে দেন খেলাটা কোন দিকে এগোচ্ছে। তাঁর কারণেই আমরা ম্যাচ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা করি না।’
সেমিফাইনালে দলকে কীভাবে প্রস্তুত করেছিলেন স্কালোনি। মেসি বলেছেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে আমরা জানতাম ক্রোয়েশিয়ার পাশে প্রচুর বল থাকবে। আমরা এর মধ্যেই সুযোগ খুঁজে নেব। সব ম্যাচের মতোই এই ম্যাচে আমাদের প্রস্তুতিটা দারুণ ছিল।’