কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দিতে প্রকাশিত ‘অভিনব’ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করতে উপাচার্য বরাবর চিঠি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। চিঠি প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন।
এর আগে গত ২ নভেম্বরের দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কুবিতে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত ‘অভিনব কৌশল’ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ওই প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, নির্দিষ্ট এক প্রার্থীর শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যোগ্যতা না থাকায় একই সঙ্গে দুই নীতি অবলম্বন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কুবি। ফলে এই বিজ্ঞপ্তি কোনোভাবেই বিধিসম্মত নয় বলেও মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষকবৃন্দের পক্ষে প্রেরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ২ নভেম্বর প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগের এক বিজ্ঞপ্তিতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি বিশেষ শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। শর্তটি হলো: ‘এমফিল/সমমান বা পিএইচডি ডিগ্রিধারী অথবা স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে ন্যূনতম দু’বছর শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ স্বীকৃত জার্নালে গবেষণা প্রবন্ধ আছে, এমন প্রার্থীদের জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক নির্ধারিত যোগ্যতা প্রযোজ্য হবে।’
‘শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন শর্ত আরোপ করতে হলে তা অবশ্যই বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটি, অনুষদের নির্বাহী কমিটি, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল-এর সুপারিশ এবং সর্বোপরি সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে করা আইনসঙ্গত। অথচ এই বিশেষ শর্তটি উল্লেখিত ফোরামগুলোর কোথাও আলোচিত কিংবা অনুমোদিত হয়নি। যা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রচলিত শর্তের পরিপন্থী। এছাড়া ইউজিসির নির্দেশিকায়ও উল্লেখিত যোগ্যতাকে অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচনা করে এজন্য বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলের শর্ত কোনোভাবেই শিথিলযোগ্য হবে না বলা হয়েছে।
শিক্ষকদের চিঠিতে আরও বলা হয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৬ এর ধারা ১৯ এর উপ-দফা ২ এর ‘ঝ’ ও ‘ফ’ তে উল্লেখ আছে, নিয়োগের যে কোনো শর্ত সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। উল্লেখিত বিশেষ শর্তটি সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি। ফলে বিজ্ঞপ্তিটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। যা ইউজিসিও পৃথক একটি পত্রে উল্লেখ করেছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, ইউজিসি কর্তৃক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়নের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণের নির্দেশিকা প্রেরণ সংক্রান্ত পত্রে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, (কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের) বিদ্যমান নীতিমালায় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নির্দেশিকায় (ইউজিসি প্রেরিত) উল্লিখিত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার চাইতে বেশি বা একই থাকলে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়নের নীতিমালা প্রণয়ন আবশ্যক নয়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের শর্ত ইউজিসি কর্তৃক নির্ধারিত শর্তের চেয়ে বেশী। তাই ইউজিসি নির্ধারিত শর্তটি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়।
চিঠিতে সচেতন শিক্ষকরা বলেন, “তড়িঘড়ি করে নিয়মবর্হিভূতভাবে প্রকাশিত এমন বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মেধাবীদের মূল্যায়ন হবে না এবং তুলনামূলকভাবে কম যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুযোগ পাবে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুনগত মান বিনষ্ট হবে।”
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, “চিঠিটি এখনও পড়ার সময় পাইনি। এটি সম্ভবত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ছিল। আমরা গবেষণায় গুরুত্ব দেওয়ার জন্য ওই শর্তটি যুক্ত করেছি। এতে ইউজিসির শর্তের ব্যত্যয় ঘটেনি।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান নীতিমালায় ওই শর্ত নেই এবং ইউজিসির নির্দেশিকা এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাশ করা হয়নি। তাহলে সে নির্দেশিকা কিভাবে অনুসরণ করলেন? এমন প্রশ্নে উপাচার্য বলেন, “আমরা একটি (নতুন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য) কমিটি গঠন করেছি। এটি শুধুমাত্র একটি প্রতিবেদনের বিষয়। যেকোনো সময় এটি পাশ হয়ে যাবে।”