The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪

বাবা মানসিক রোগে আক্রান্ত: টিউশনি করে যমজ বোন পেল জিপিএ-৫

কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় সামিয়া ও সাদিয়া নামের যমজ বোন। আশা ছিল ভালো রেজাল্ট করার, করেছেও তাই। দুজনেই একত্রে পেয়েছে এ প্লাস।

যমজ দুই বোন সামিয়-সাদিয়া টিউশনি করিয়ে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছেন। তাদের বাবা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগী। তাদের টিউশনি ও মা যা আয় করেন তা দিয়েই কোনোরকম চলে সংসার।

সামিয়া ও সাদিয়ার বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল হাজিপাড়া গ্রামে। তারা মো. আশরাফুল ইসলাম ও মোছা. আসমা খাতুন দম্পতির মেয়ে।

দুই বোনের এমন অসামন্য সাফল্যে দারুণ খুশি তাদের পরিবার, এলাকাবাসী এবং স্কুলের শিক্ষকরা। সামিয়া-সাদিয়াকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন তারা সকলে।

সামিয়া-সাদিয়ারা তিন বোন। বড় বোন নির্জনা আক্তার মেধাবী ছাত্রী। বর্তমানে তিনি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। সামিয়া-সাদিয়া জানান, বড় আপুর সাফল্য আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার কাজ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেক দিন ধরেই সামিয়া সাদিয়ার বাবা আশরাফুল ইসলাম মানসিক রোগে আক্রান্ত। সারাদিন বাড়িতেই থাকেন তিনি। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অসুস্থ থাকায় তিন মেয়েকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন আসমা খাতুন। স্বামী আশরাফুলের চিকিৎসার খরচসহ মেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে নিজেই সংসারের হাল ধরেন।

এইচএসসি পাশ হওয়ায় বাড়ির আশপাশের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে এবং পৈতৃকসূত্রে পাওয়া আশরাফুলের সামান্য মাঠের জমি লিজ দিয়ে কোনোরকম সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি। জন্মের পর কখনই বাবা আশরাফুল ইসলামের স্বাভাবিক আচরণ দেখেনি সামিয়া ও সাদিয়া।

অভাবের টানাপড়েনের সংসারে তাই বাবার কাছে আবদারের বিষয়টি অবান্তরই ছিল তাদের কাছে। কিন্তু মা আসমা খাতুন তাদের সেই অভাব কখনই বুঝতে দেননি। যতটুকু পেরেছেন টিউশনি করে মেয়েদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পড়ালেখা চালিয়ে নিতে সামিয়া ও সাদিয়া শুরু করেন টিউশনি। একই সঙ্গে বেঁচে যাওয়া অতিরিক্ত টাকা সংসারে দিয়ে মাকে সাহায্য করতে থাকেন এই দুই বোন।

সন্তানদের ফলাফলে দারুণ খুশি মা আসমা খাতুন। মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।

মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাশিদা বানু বলেন, অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা যমজ বোন লেখাপড়ায় খুবই ভালো। পড়ালেখার প্রতি তাদের আগ্রহও অনেক। আমরা আমাদের স্কুলের পক্ষ থেকে সামিয়া-সাদিয়াকে অনেক সহযোগিতা করেছি। তাদের আরও সফলতা কামনা করছি।

মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের বলেন, সামিয়া-সাদিয়াকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে চলা সামিয়া-সাদিয়ার মেধা বিকাশে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবেন- এমনটাই প্রত্যাশা করছি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.