The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪

প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির ৪৩ পেরিয়ে ৪৪ এ পা রাখল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ইবি প্রতিনিধি : বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) যার প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর। কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪৩ বছর পূর্ণ করে আজ ৪৪ বছরে পা রাখতে যাচ্ছে। শিক্ষা-গবেষণায়, সংস্কৃতি-ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অর্জন এই পথচলাকে গৌরবান্বিত করেছে। সমস্ত প্রতিকূলতা কতটুকু সার্থকভাবে মোকাবেলা করে শিক্ষা-গবেষণায়, সংস্কৃতি-ক্রীড়াঙ্গনে উল্লেখযোগ্য অর্জন এই পথচলাকে গৌরবান্বিত করার মাধ্যমে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করে এগিয়ে চলেছে প্রাণের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় তাই জানবো আজকে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৮টি অনুষদের ৩৬টি বিভাগে ১৩ হাজার ৪৬৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন, যাদের মধ্যে ছাত্র ৮ হাজার ৭৬৩ এবং ছাত্রী ৪ হাজার ৭০৫ জন। বর্তমানে ৪০৩ জন শিক্ষক শিক্ষাদানে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়াও ৪৯৪ জন কর্মকর্তা, ১৩২ জন সহায়ক কর্মচারী এবং ১৫৮ জন সাধারণ কর্মচারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রেখে চলেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ৫৯৯ জনকে পিএইচ.ডি এবং ৭৫৮ জনকে এম.ফিল ডিগ্রি প্রদান করেছে। বর্তমানে ২৫০ জন পিএইচ.ডি এবং ৯৫ জন এম.ফিল গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বিভিন্ন বিভাগের ১৭ জন শিক্ষক স্থান পেয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২জন শিক্ষক ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি’ বিষয়ে বিশেষ গবেষণা প্রকল্প অনুদানের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তাঁরা ৬টি প্রজেক্টের আওতায় কাজ করবেন।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছে।

এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ২৭ এপ্রিল ১৯৯৩ সালে, দ্বিতীয় সমাবর্তন ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৯ সালে, তৃতীয় সমাবর্তন ২৮ মার্চ ২০০২ সালে এবং সর্বশেষ ৪র্থ সমাবর্তন ৭ জানুয়ারি ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষা ও গবেষণার পাশাপাশি ক্রীড়াক্ষেত্রেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ভারোত্তোলন, ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ছাত্রী ইসরাত জাহান ইভা দুইবার দেশের দ্রæততম মানবী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ভলিবল প্রতিযোগিতায় এ বিশ্ববিদ্যালয় নয়বার, ফুটবল প্রতিযোগিতায় তিনবার ও অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতায় চারবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এছাড়াও ভলিবল প্রতিযোগিতায় তিনবার রানার্স আপ এবং ক্রিকেটে তিনবার দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ-এর ৩য় আসরের হ্যান্ডবল ফাইনালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ৩১-২২ গোলে এবং বাস্কেটবল ইভেন্টে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে ৭৪-৬২ পয়েন্টে পরাজিত করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
আশা করা হচ্ছে, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগটি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনে বড় ধরণের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের দেশব্যাপী ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞের অংশ হিসাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। ৫৩৭ কোটি ৭ লাখ টাকার মেগা প্রকল্পের আওতায় নয়টি দশ তলা ভবনের সবগুলোর নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলেছে। নির্মাণাধীন ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে দুটি ছাত্র ও দুটি ছাত্রী হল, একটি একাডেমিক ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য একটি, কর্মচারীদের জন্য একটি, নির্মাণাধীন শেখ রাসেল হলের দ্বিতীয় ব্লক এবং নতুন প্রশাসন ভবন নির্মাণ। দশতলা বিশিষ্ট আবাসিক হলগুলো নির্মাণ শেষ হলে আবাসন সুবিধা নিশ্চিত হবে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের সংকট দূর হবে এবং নতুন-নতুন বিভাগ খোলার সুযোগ সৃষ্টি হবে একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে। এছাড়া প্রশাসন ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে অফিসসমূহ উন্নত হবে, শিক্ষার্থীদের সেবা প্রদানের মান বাড়বে এবং স্থান সংকট অনেকটাই নিরসন হবে। প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টির মধ্যে ৫টি ভবনের উর্দ্ধমুখী সম্প্রসারণের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে গাড়ি রয়েছে ৪৯টি। এর মধ্যে ৭টি এসি কোস্টার গাড়ি, ডাবল ডেকার বাস ১টি, বড়বাস ১৩টি, নন-এসি মিনিবাস ৫টি। বাকিগুলোর মধ্যে রয়েছে এ্যাম্বুলেন্স, পিক-আপসহ অন্যান্য ছোট গাড়ি। গত ১৮ সেপ্টেম্বর পরিবহন পুলে সর্বশেষ সংযোজিত নতুন ৩ টি বড় বাস ও ২ টি হায়েচ এসি মাইক্রোবাসের শুভ উদ্বোধন করেন ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম।

যৌন হয়রানিমুক্ত শিক্ষাক্ষেত্র ও কর্মপরিবেশ গড়ে তুলতে যৌন নিপীড়ন বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচার অভিযানের অংশ হিসেবে হলে-হলে যৌন নিপীড়ন বিষয়ে সচেতনতামূলক আলোচনাসভা, তথ্য অধিকার বিষয়ে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে র‌্যালি, লিফলেট বিতরণ, মনের স্বাস্থ্য বিষয়ে কর্মশালা, র‌্যাগিং বিরোধী সভা, প্রশিক্ষণ কর্মশালা, আন্তর্জাতিক সেমিনার, বৃক্ষরোপন কর্মসূচি ইত্যাদি কার্যক্রম নিয়মিতভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এতোসব প্রাপ্তির মধ্যেও লুকিয়ে আছে অনেক না পাওয়া। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টি বাকী সময় থেকে অনেক ধীর গতিতে চলছে। বিশেষ করে করোনা পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি বিভাগে নতুন করে সেশনজটের সৃষ্টি হয়েচে এবং আগে থেকে থাকা জট গুলো আরো তীব্র হয়েছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৭ সালে নতুন আসা বেশ কয়েকটি বিভাগে এখনো পর্যন্ত শিক্ষক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ক্লাশরুম, বেঞ্চের সংকট গুলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকে করছে ক্ষুন্ন। যা নাকি বারবার তদবীর দিয়েও কোনো সমাধান আসছেনা। এছাড়া আবাসন ব্যবস্থার ঘাটতিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাইরের মেসে অবস্থান করে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে শিক্ষার্থীরা মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নয় প্রশাসন। শহরে থাকা শিক্ষার্থীদের জন্য বাসের ব্যবস্থা রয়েছে তবে তাও পর্যাপ্ত নয়। সবগুলো বিভাগে ক্লাশ পরীক্ষা একসাথে শুরু হলে বেশীরভাগ বাসেই সিট পাওয়া যায়না। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের আলাদা সুবিধা দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের বেশীর ভাগ গাড়ীগুলো সিট ফাকা রেখেই চলাচল করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মতে কর্মকর্তাদের সংখ্যার থেকে বাসের সংখ্যা বেশী তাদের। তাছাড়াও শিক্ষার্থীদের জন্য দেয়া বাস গুলোর অধিকাংশেরি ফিটনেস নেই। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসে সেইরকম কোনো ঝামেলা নেই।

৪৪ বছর পরও বিশ্ববিদ্যালয়টির কোনো ডিজিটালাইজেশন নেই। প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটালাইজেশন চাওয়া যেনো অপরাধ। এখনো শিক্ষার্থীদের ফর্মফিলাপের টাকা জমা দিতে হয় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে এনালগ স্লিপের মাধ্যমে। যে স্লিপটি হারালে নেই কোনো পাওয়ার সম্ভাবনাও। ফলে পুনরায় টাকা জমা দিয়েই মেলে গ্রহণযোগ্যতা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটের ইন্টারফেসও যুগোপযোগী নয়। মেগাপ্রেজেক্টের কাজ নিয়েও শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই মেগাপ্রজেক্টের কোনো সুফল ভোগ করতে পারবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়।

প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির এ হিসাব নিকাশ চলতেই থাকবে। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সুদক্ষ কারিগর হিসেবে মানবিক গুণাবলীসমৃদ্ধ মানসম্পন্ন শিক্ষার্থী তৈরির মহান ব্রত নিয়ে বর্তমান ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ মাহবুবুর রহমান এবং ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোঃ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া’র নেতৃত্বে আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রত্যাশাই থাকবে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.