ইবি প্রতিনিধি: প্রতিষ্ঠার ৪৪ বছরের দাঁড় প্রান্তে এসে মাত্র চারবার সমাবর্তনের দেখা পেয়েছে স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৭ই জানুয়ারি চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ফলে দীর্ঘ ৪ বছর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি অধরা থাকায় নানা আলোচনা হচ্ছে শিক্ষার্থী মহলে। অথচ ‘নিয়ম’ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরই সমাবর্তন হওয়ার কথা থাকলেও পঞ্চম সমাবর্তনের অপেক্ষায় রয়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১৪ বছর পর ১৯৯৩ সালে প্রথম সমাবর্তন গাউন পরার সুযোগ মেলে ইবি শিক্ষার্থীদের। এরপর ১৯৯৯ ও ২০০২ সালে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং ১৬ বছর পরে ২০১৮ সালে চতুর্থ ও সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী মূল সনদপত্র হাতে পান। চতুর্থ সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত ও ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত স্নাতকোত্তর এবং ২৩৬ তম সিন্ডিকেটে অনুমোদন প্রাপ্ত এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালটির ১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত অন্তত ৭ হাজার শিক্ষার্থী তাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। এছাড়া কয়েকটি বর্ষের এমফিল ও পিএইচডি গবেষকরা নিয়েছেন তাদের ডিগ্রি। তবে তাদের কেউই পাননি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৪’দশকে মাত্র চারবার সমাবর্তন অনুষ্ঠান হওয়ায় এ নিয়ে আক্ষেপ শিক্ষার্থীদের কন্ঠে। নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলছে না শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির। মূল সনদপত্রের পরিবর্তে সাময়িক সনদপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হচ্ছে অনেককে। সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়মিত না হওয়ার পেছনে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, প্রশাসন চাইলেই সমাবর্তন অনুষ্ঠান নিয়মিত আয়োজন করতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা-নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সমাবর্তন ছাড়া মূল সনদপত্র ছাপানো হয় না, সাময়িক সনদপত্র দেওয়া হয়। তবে জরুরি প্রয়োজনে বা বিশেষ ক্ষেত্রে বিভাগের সুপারিশে উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে মূল সনদপত্র প্রদান করা হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী সাব্বির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ বছরে পদার্পণ করলেও সমাবর্তন হয়েছে মাত্র চারবার। মূল সনদপত্র ছাড়া নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
এবিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সনদপত্র গ্রহণ প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। আমরা চাই নিয়মানুযায়ী প্রতিবছর সমাবর্তন হোক। কারণ সমাবর্তন শিক্ষাজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বটে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান বলেন, কিছু কারণে নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন সম্ভব হয় না। বিশেষ করে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্ষমতা এবং অবস্থানগত বিষয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সংপৃক্ত।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার। এটা আমাদের ভাবনায় রয়েছে। তবে সমাবর্তন আয়োজনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে দরকার ব্যাপক প্রস্তুতি। সবেমাত্র করোনার ধকল কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পুরোদমে চলতে শুরু করেছে একারণে একটু সময় প্রয়োজন।