দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়েছিলেন বিজনেসে ডিগ্রি আনতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা মাঝপথে বিদেশের রাস্তায় চা বিক্রি শুরু করেন অন্ধ্রপ্রদেশের তরুণ। সেই চাওয়ালার আয় শুনলে মাথা ঘুরে যাবে আপনার। চায়ের দোকান দেওয়ার পর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই মুনাফা দাঁড়ায় দেড় কোটি টাকা। একটিমাত্র চায়ের দোকান থেকেই তার আয় বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা।
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোর জেলার বাসিন্দা সঞ্জিৎ কোন্ডার এমন কাহিনীতে শোরগোল উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কর্পোরেট জগতের মোটা অঙ্কের টাকা চাকরি ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ঝুঁকি নিয়েছেন ২২ বছরের তরুণ। তাতে সফল হয়েছেন বললেও কম বলা হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি পরিচিত সঞ্জিৎ কোন্ডা হাউস নামে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের এক নামজাদা কলেজে বিজ়নেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) নিয়ে পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন সঞ্জিৎ। তবে সেই কোর্স শেষ করেননি তিনি। তার আগেই বেরিয়ে আসেন সঞ্জিৎ। ডিগ্রি লাভের আশা ছেড়ে স্টার্টআপ খোলার চেষ্টা করেন সঞ্জিৎ। তিনি বলেন, লা ট্রোব ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন পড়তে মেলবোর্নে এসেছিলাম। পড়াশোনা ছাড়ার পর স্টার্টআপ শুরু করতে চেয়েছিলাম।
সাহসে ভর করেই স্টার্টআপ খুলে বসেন সঞ্জিৎ। শহরের খোলা রাস্তায় চায়ের দোকান খোলেন তিনি। এলিজ়াবেথ স্ট্রিটের ব্যস্ত রাস্তায় সঞ্জিতের চায়ের দোকানে এখন ভিড় উপচে পড়ছে। ভারতীয়রা তো বটেই, ভিড় জমাচ্ছেন অজ়রাও। গরম চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন লাতিন আমেরিকানও।
নিজের দোকানের নামও রেখেছেন— ‘ড্রপআউট চায়েওয়ালা’। এলিজ়াবেথ স্ট্রিটে পর্যটকরাও উঁকিঝুকি মারছেন। ভারতীয়দের প্রিয় আড্ডাখানা হিসাবেও নাম কামাচ্ছে চায়ের দোকান। সব ছেড়েছুড়ে হঠাৎ চায়ের দোকান দিতে গেলেন কেন? সঞ্জিৎ বলেছেন, পড়াশোনা ছাড়ার কথা জানতে পেরে একেবারে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন মা-বাবা। কিছুটা চিন্তায়ও পড়েছিলেন।
ওই শহর বেশি পরিচিত কফিপ্রেমীদের জন্য। তার ওপর, সঞ্জিতের মতো আনকোরা তরুণ দেশীয় চায়ের স্বাদ কতজন চাইবেন, তা নিয়েও চিন্তায় পড়েছিলেন তাঁরা। সঞ্জিৎ বলেন, মেলবোর্ন কফি-ক্যাপিটাল হলেও চায়ের জয়েন্ট খোলার কথা ভেবে নিয়েছিলাম।
‘গ্লোবাল টাইমস’ নামে চিনের এক দৈনিক সংবাদপত্রের দাবি, মেলবোর্ন নয়, সাংহাইকে কফি-ক্যাপিটাল বলা হয়। সে শহরে সাত হাজার ৮৫৭টি কফি শপ রয়েছে। মেলবোর্নে চায়ের দোকান খুলতে পরোক্ষে হলেও তাঁর মায়ের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সঞ্জিৎ। তাঁর কাছে ঘুরতে গিয়ে শত খুঁজেও নাকি ঘরের চায়ের স্বাদ পাননি সঞ্জিতের মা-বাবা। সে সময়ই চায়ের দোকান খোলার কথা ভেবে নেন সঞ্জিৎ।
সঞ্জিতের বিষয়ভাবনার ওপর ভরসা রেখেছিলেন আসরার নামে অনাবাসী ভারতীয়। যাবতীয় খরচও তিনিই জুগিয়েছেন। সঞ্জিৎ বলেন, পরের মাসে আমাদের মুনাফা ৫.২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আয়কর এবং অন্যান্য খরচাপাতির পর এক কোটি ৪০ লাখ টাকার মুনাফা থাকবে।
ডিগ্রিহীন চাওয়ালার সাফল্যে খুশি সঞ্জিতের মা-বাবা। সঞ্জিৎ জানিয়েছেন, তাঁর চায়ের দোকানের ‘বম্বে কাটিং চা’ সুপারহিট। বিদেশিরা ‘মশলা চা’ বা পকোড়া বেশ খান। খদ্দের টানতে ‘চায়পুচিনো’ নামে পাঁচমেশালি চা তৈরি করছেন সঞ্জিৎ।
সঞ্জিতের সাফ জবাব, ‘‘ডিগ্রি নয়, কাজের প্রতি টান রয়েছে এমন পরিশ্রমীদেরই কাজে রাখতে চাই।’’ সঞ্জিতের স্বপ্ন, অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি শহরে ভবিষ্যতে অন্তত একটি চায়ের দোকান থাকবে।
সূত্র: আনন্দবাজার।