হেদায়েতুল ইসলাম নাবিদ, কুবি প্রতিনিধি
দীর্ঘ ২ বছর চেষ্টার পর অবশেষে ত্রিপুরা ভাষায় অনূদিত হলো বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী। বইটি ১ম ত্রিপুরা ভাষায় (ককবরক) অনূদিত করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৭ম ব্যাচের শিক্ষার্থী যুবরাজ দেববর্মা।
অনুবাদক দেববর্মা ‘ককবরক’ ভাসায় বইটির নাম দিয়েছেন ‘পাইথাকয়া লাংমা’। যার এর অর্থ ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’।
বাংলাদেশের নৃগোষ্ঠীদের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম জাতি হলো ত্রিপুরারা। আর তাদেরই মাতৃভাষা ‘ককবরক’। চীনের ইয়াংসি ও হোয়াংহো নদীর উৎসস্থলে জন্ম নেয়া এ ভাষায় বর্তমানে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ৩৬ টি গোত্রের ভাবপ্রকাশের মাধ্যম। এছাড়াও গারো, কোচ, হাজং ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর ভাষাও একই শ্রেণিভুক্ত বলে জানা যায়।
দেববর্মার জন্ম সিলেট জেলার শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়া ত্রিপুরাপল্লীতে। দীর্ঘ দুইবছরের প্রচেষ্টার ফসল তার এই পাণ্ডুলিপিটি।
ত্রিপুরা ভাষায় জাতির জনকের জীবনীগ্রন্থটি অনুবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন ২০২০ সালকে মুজিব শতবর্ষ ঘোষণা করেন সেসময় থেকেই আমার মধ্যে নিজের জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে কিছু করার ইচ্ছাজাগে তাই অনুবাদের পথটি বেছে নেই। যেন একসাথে নিজেদের ভাষাকেও উপস্থাপন করতে পারি পাশাপাশি যে মানুষটা মহান স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন তার আদর্শটাও একটু ভিন্নভাবে ছড়িয়ে দিতে পারি।
এছাড়াও বর্তমানে ‘ককবরক’ একটি বিলুপ্তপ্রায় ভাষা। আমাদের পরের প্রজন্ম হয়তো আর এভাষার অনেক অর্থই জানবেনা। তাই নিজেদের ভাষাটাকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষুদ্র প্রয়াসও বলা যায় এটাকে।”
দেববর্মার কাছে তার অনুবাদ করার দুইবছরের জার্নিটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,” সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ একজন ছাত্রের ছাত্রের পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে কিরকম চাপ থাকে তা আপনারা জানেন। এতকিছু সামলে কাজটা করার মূহুর্তগুলো বলে বুঝাতে পারবোনা। একটা সময় মনে হয়েছিল হাল ছেড়ে দেই, আমার পক্ষে সম্ভবনা। কিন্তু কিছু মানুষের অনুপ্রেরণা আমাকে পুরো পাণ্ডুলিপিটি অনুবাদ করতে সাহস যুগিয়েছে। “
পাণ্ডুলিপিটি গ্রন্থাকারে প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে দেববর্মা বলেন,” বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কিউরেটর, সাবেক শিক্ষা সচিব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী নজরুল ইসলাম খানের সাথে ওনার সহকারির মাধ্যমে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছেন, আমাকে জানাবে। বাকিটা স্যারের সাথে কথা বলার পর বলতে পারবো।”
“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খানের কাছে প্রতিলিপিটি ছাপানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের পক্ষ থেকে তাকে ‘ককবরক’ ভাষায় পারদর্শী তৃতীয় কাউকে দিয়ে চেক করানোর কথা বলা হয়েছে। তিনি চেক করালে আমরা দায়িত্ব নিয়ে ছাপিয়ে দিবো কিন্তু কোনো আর্থিক সহায়তা দিতে পারবোনা।” প্রতিলিপিটি ছাপানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কিউরেটর নজরুল ইসলাম খানে এমন মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য, ত্রিপুরারা ভারতীয় উপমহাদেশের এক প্রাচীন জাতি। পাহাড়, বন ও প্রকৃতিকে আঁকড়ে বসবাস করা এ নৃগোষ্ঠীটি বাংলাদেশের তিন পার্বত্য অঞ্চল ছাড়াও সমতল এলাকার কুমিল্লা, সিলেট চাঁদপুর, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর অঞ্চলে বসবাস করে। ২০০১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী দেশেপ্রায় দুইলক্ষাধিক ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত সরকারি ভাবে পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নানাভাবে সহায়তা করেছিল গোষ্ঠীটি। তাছাড়া বর্তমান মহানগরী কুমিল্লার ‘চাকলা রোসনাবাদ’ (ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক রাজধানী) অনেক স্থাপনাতেই ত্রিপুরা রাজাদের হাতের ছোয়া লেগে আছে। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বড় একটা অংশের বসবাস। বর্তমানে বাংলাদেশে ত্রিপুরা জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষাধিক।