রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল কলেজ ও স্কুল শাখায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে অনুসারে ১৪ ধরনের পদে নিয়োগ দেবে প্রতিষ্ঠানটি। তবে এসব পদের জন্য অতিরিক্ত আবেদন ফি চাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন আবেদনকারীরা।
আবেদনকারীদের অভিযোগ, এই প্রতিষ্ঠানে সরকার নির্ধারিত চাকরির আবেদনের ফির চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ফি চেয়েছে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি আবেদন ফি চাওয়া হয়েছে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের জন্য পাঁচ হাজার টাকা। এ ছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদের জন্য আবেদন ফি চাওয়া হয়েছে এক হাজার টাকা। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এই প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে অনেক বেশি আবেদন ফি চাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
এসব পদে ৫ অক্টোবর থেকে আবেদন শুরু হয়েছে, আবেদন চলবে ২০ অক্টোবর বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। নিজ হাতে লিখিত আবেদনপত্রের সঙ্গে প্রতিটি পদের জন্য আবেদন ফি পে-অর্ডার/ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে পাঠাতে বলা হয়েছে, যা অফেরতযোগ্য।
কোনো প্রতিষ্ঠান যেন খেয়ালখুশিমতো আবেদন ফি নিতে না পারে, সে জন্য গত সেপ্টেম্বরে সরকারি সব চাকরির আবেদন ফি পুনরায় নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নবম গ্রেড বা এর বেশি গ্রেডভুক্ত পদে আবেদন ফি ৬০০ টাকা, দশম গ্রেডের পদে আবেদন ফি ৫০০ টাকা, ১১ থেকে ১২তম গ্রেডের জন্য ৩০০ টাকা, ১৩ থেকে ১৬তম গ্রেডের জন্য ২০০ টাকা এবং ১৭ থেকে ২০তম গ্রেডের জন্য ১০০ টাকা।
মাসুম আহমেদ নামের একজন চাকরিপ্রার্থী বলেন, প্রতিষ্ঠানটি বেতন উল্লেখ করেছে সরকারি স্কেলে অষ্টম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত। তারা বেতন সরকারি স্কেলে দিলে আবেদন ফির ক্ষেত্রেও সরকারি নিয়ম মানা উচিত। বেতন স্কেল অনুসারে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদটি অষ্টম গ্রেডের। অষ্টম গ্রেডের সরকার নির্ধারিত ফির তুলনায় আট গুণ বেশি ফি চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্মচারী পদের জন্য ফি কীভাবে এক হাজার টাকা হয়? এভাবে ইচ্ছেমতো আবেদন ফি চাওয়া বেকারদের সঙ্গে তামাশা ছাড়া কিছুই নয়।
সাইফুল ইসলাম নামের আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘আমি চার বছর ধরে চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছি। কখনো আবেদন ফি পাঁচ হাজার টাকা কোথাও দেখিনি। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রভাষক পদ ও শিক্ষক পদেও পরীক্ষা দিয়েছি। সেসব প্রতিষ্ঠানে আবেদন ফি ছিল ৫০০-৭০০ টাকা। এই প্রথম প্রভাষক পদের আবেদন ফি তিন হাজার টাকা দেখলাম। বেকার চাকরিপ্রার্থীদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে আবেদন ফি কমানো উচিত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদী বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার খরচ বেশি হওয়ার কারণে এই ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। আর আবেদন ফি নির্ধারণ করেছে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদ (গভর্নিং বডি)।
আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব (বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) আবু হেনা মোরশেদ জামান প্রথম আলোকে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সঙ্গে কয়েক ধাপে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এ জন্য নিয়োগ পরীক্ষার পুরো প্রক্রিয়া বেশ ব্যয়বহুল। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র পাঠানো থেকে শুরু করে প্রশ্ন প্রণয়ন ও খাতা দেখায় পরীক্ষা–সংশ্লিষ্টদের অনেক সম্মানী দিতে হয়। এই খরচ প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হয়। এর আগে যে আবেদন ফি নেওয়া হয়েছিল, তার চেয়ে তিন–চার গুণ বেশি টাকা প্রতিষ্ঠানকে ভর্তুকি দিতে হয়েছিল। তাই এবার পরিচালন পর্ষদ সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে এই আবেদন ফি নির্ধারণ করেছে।
আবু হেনা মোরশেদ জামান আরও বলেন, যদি চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন ফির বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করেন, তাহলে বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদের মিটিংয়ে আলোচনা করা হবে এবং তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।