The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪

রূপ-যৌবনই পুঁজি, ৮ বিয়ে করে কারাগারে

বিয়ের নামে ফাঁদে ফেলে একাধিক পুরুষকে নিঃস্ব করা খুলনার বহুল আলোচিত সুলতানা পারভীন নীলা ওরফে বৃষ্টিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
সোমবার ঢাকার ১৪ নং আদালতে নীলা হাজির হয়েছে প্রতারণার মামলায় জামিনের জন্য আবেদন দাখিল করেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মাইনুল হোসেন তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপর এক আসামি তার বড় ভাই শফিকুল আলম বিপ্লবেরও জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।

নীলার সাবেক ৭ম স্বামী এম রহমানের দায়েরকৃত মামলার আইনজীবী ঢাকা জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট ওয়াদুদ শাহীন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডি ঢাকার এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, বহুবিয়েতে আসক্ত সুলতানা পারভীন নীলা প্রতারণার ফাঁদে ফেলে এ পর্যন্ত ৮ এর অধিক পুরুষকে বিয়ে করেন। তার ৭ম স্বামী এম রহমান তার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে প্রতারণার মামলা করেন। সেই মামলার দায়িত্ব পান ঢাকার সিআইডি। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। আদালত গত ১৩ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়োনা জারি করেন।

তিনি বলেন, নীলার বাসার ঠিকানা ঠিক নয়। একেক সময় একেকজনকে একেক পরিচয়ে প্রতারণা করে বিয়ে করে। আমাকে নিঃস্ব করে আবার অন্য একজনকে বিয়ে করে। এভাবে মোট ৮টি বিয়ে করেছে বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে।

নীলার একাধিক সাবেক স্বামী বলেন, শারীরিক গঠন ও রূপ-যৌবনই মূল সম্পদ নীলার। এটিকে পুঁজি করে সে বিয়ের নামে ধনাঢ্য ও পদস্থ কর্মকর্তা, চাকরিজীবীদের ফাঁদে ফেলেছেন। আর হাতিয়ে নিয়েছে বহু অর্থ-সম্পদ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুলতানা পারভীন নিলা এ পর্যন্ত ৮ এর অধিক বিয়ে করেছেন। বিয়ে করে কিছুদিন পর সেই স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া এবং তার কাছ থেকে দেনমোহরের টাকাসহ নানা কৌশলে বাড়ি-গাড়ি হাতিয়ে নেয়াই তার ব্যবসা। তার মূল টার্গেট সম্পদশালী, ব্যবসায়ী, উচ্চপদস্থ চাকরিজীবী ও প্রবাসী পুরুষ। প্রথমে টার্গেট নিশ্চিত করে তিনি ধীরে ধীরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে নিজ দেহের সৌন্দর্য ও কথা মালার মারপ্যাঁচে আটকে ফেলেন।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে সুলতানা পারভীনের প্রথম বিয়ে হয় মাদারীপুর জেলার হরিকুমারিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিম শিকদারের জাপান প্রবাসী ছেলে শাহাবউদ্দিন সিকদারের সঙ্গে। নিলার বয়স ছিল তখন ১৫ বছরেরও কম। কিছুদিন যেতে না যেতেই স্বামীর ঘর থেকে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বেরিয়ে যায় সে। তার উশৃঙ্খল জীবনযাপন ও মালামাল চুরির ঘটনায় শাহাবুদ্দিন শিকদার মাদারীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেন। যদিও ২০০১ সালে তার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে নীলার।

নীলার দ্বিতীয় বিয়ে হয় ২০০৫ সালের ৬ মে খুলনা মহানগরীর শেরেবাংলা রোডের মো. মকবুল হোসেনের ছেলে এসএম মুনির হোসেনের সঙ্গে। তখন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে মুনির হোসেনের সঙ্গে এক লাখ টাকার কাবিননামায় বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয় সে। কিন্তু বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে নীলার উশৃঙ্খল জীবনযাপন এবং ও উগ্র আচরণের শিকার হন স্বামী মুনির। এক পর্যায়ে স্বর্ণালংকার ও নগদ অর্থ নিয়ে এ বাড়ি থেকেও বেরিয়ে যান নীলা। এ ঘটনায় একই বছরের ১০ ডিসেম্বর মুনির হোসেন তাকে তালাক দেন। যদিও পরবর্তীতে তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করতে সুলতানা পারভীন নীলা ২০০৬ সালে মনির হোসেনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং পারিবারিক আদালতে মামলা করেন।

ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই সুলতানা পারভীন প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আবারো নিজেকে ‘কুমারী’ দাবি করে ২০০৮ সালের এপ্রিল মাসে নগরীর খালিশপুর ওয়ারলেস ক্রস রোডের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে ঠিকাদার মইনুল আরেফিন বনিকে বিয়ে করেন। তবে, শর্ত থাকে বিয়ের পর নীলা তার আত্মীয়ের মাধ্যমে বনিকে ইতালি নিয়ে যাবে। শর্ত মোতাবেক বিয়ের পর তার কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে কিছুদিন যেতে না যেতেই নীলার প্রতারণা প্রকাশ পেতে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যেও বিচ্ছেদ ঘটে।

নীলা নিজেকে কুমারী দাবি করে শেখ মঈনুল আরেফিন বনিকে ২০১০ সালে বিয়ে করেন। তারপর তাদের বিচ্ছেদ হয় এবং নীলা বনির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। সেই মামলা চলমান থাকা অবস্থায় তিনি ২০১১ সালে নারায়ণগঞ্জের ইফতিখার নামে একজনকে বিয়ে করেন।

নীলার এক সাবেক স্বামী মো. আব্দুল বাকী ঢাকার আদালতে তার বিরুদ্ধে চেক ও টাকা-পয়সা চুরির অভিযোগে একটি মামলা করেন, এছাড়া সিরাজগঞ্জে অবস্থানকালীন ঢাকার একটি ফ্ল্যাট তার নামে লিখে না দেওয়ায় আরো এক স্বামীকে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানো এবং জীবন নাশের হুমকি দেন নীলা। ঐ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২ মে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয়।

তার প্রতারণা ও জালিয়াতিসহ অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরে তাকে গ্রেফতার এবং কঠোর শাস্তির দাবিতে ২০২১ সালের সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে খুলনা প্রে সক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন মহানগরীর নাজিরঘাট এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে মো. আব্দুল বাকী।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.