বলা হয়ে থাকে অপরাধ করার পর অপরাধী রেখে যায় প্রমাণ। সেই প্রমাণ খুঁজে বের করতে সহায়তা করে তথ্যপ্রযুক্তি। ডিজিটাল যুগে সিসিটিভি ফুটেজ, কল রেকর্ডসহ বিভিন্ন আলামত অপরাধী ধরতে ভূমিকা রাখলেও এর কোনো সাক্ষ্যমূল্য ছিল না আদালতে। এ বিধান যুক্ত করতেই বদলে যাচ্ছে ১৫০ বছরের পুরনো সাক্ষ্য আইন।
আইনজীবীরা বলছেন, এতে মামলাজট কমবে, বিচার প্রক্রিয়া হয়ে উঠবে যুগোপযোগী।
অপরাধ প্রমাণ এবং অপরাধী ধরতে তথ্যপ্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, কল রেকডিং, কথোপকথনের স্ক্রিনশট আদালতের কাছে সাক্ষ্য হিসেবে এর কোনো মূল্য ছিল না। বাধা হয়ে দাঁড়ায় দেড়শ বছরের পুরনো সাক্ষ্য আইন। দেরিতে হলেও মামলার বিচারে সাক্ষ্য হিসেবে ডিজিটাল তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সাক্ষ্য আইন সংশোধনী চূড়ান্ত হলে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ধারণকৃত ছবি, ভিডিও, অডিও রেকর্ডিং অপরাধ প্রমাণে সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা যাবে।
আইনজীবীরা বলছেন, অতীতে ডিজিটাল তথ্য প্রমাণ আমলে নেয়া বিচারকের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল ছিল। আইন হওয়ার পর সেই বাধা কেটে যাবে।
সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহসিব হোসেন সময় সংবাদকে বলেন, যে সময় এই আইনটি করা হয়েছিল তখন কিন্তু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ছিল না। অডিও ভিডিও রেকর্ডিং ছিল না। আস্তে আস্তে টেকনোলজিক্যালটা বেড়ে উঠেছে, কিন্তু আইনটা পুরোনো রয়ে গেল। সেই সময় কিন্তু কোনো বারন করাও ছিল না আবার যোগ করার কথাও ছিল না। সুপ্রিম কোর্ট আর নিম্ন আদালত সব সময় চেষ্টা করেছে মিটমাট করার জন্য। এটা আমরা দেখতে পাই, আলোচিত মামলা বিশ্বজিৎ হত্যা মামলাতে ভিডিও ক্লিপগুলো কনসিডার করা হয়েছিল ট্রায়ালের সময়। কিন্তু একটা জায়গাতে প্রশ্ন রয়েই যেত, যে বিচারকরা এটি গ্রহণ (ভিডিও ক্লিপ) করবেন কি না। নাও করতে পারতেন, কোনো গাইড লাইন ছিল না। এ ল্যাসেসগুলো সব সময় আইনের মধ্যে ছিল। সুপ্রিম কোর্ট আর নিম্ন আদালত সব সময় চেষ্টা করেছে মিটমাট করার জন্য। সমাজের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তারাও চেষ্টা করেছেন পবিবর্তনের। তবে আইনে স্পষ্ট না থাকলে ঘাটতিগুলো থেকেই যায়। এই যে আইনটা সংশোধন হয়ে আসল এখন কিন্তু বিচারকদের এটি গ্রহণ করে বিচার করার কাজ সহজ হয়ে গেল।
মামলাজট কমাতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি এ কে এম আমিন উদ্দিন।
প্রশ্ন হচ্ছে কেউ যদি ভুয়া বা জাল সাক্ষ্যপ্রমাণ আদালতে হাজির করে তখন কী হবে? সংশোধিত সাক্ষ্য আইনে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়েছে। বলা হয়েছে- সন্দেহজনক বা আপত্তিজনক কিছু থাকলে কোনো পক্ষ আপত্তি তুললে করা যাবে সাক্ষ্যপ্রমাণের ফরেনসিকও।