দেশের ৭৮ শতাংশ শিক্ষিত বেকার যুবক মনে করেন, প্রয়োজনীয় দক্ষতার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সবক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় অর্জিত শিক্ষা দিয়ে কোনো চাকরি পাবেন না। বাংলাদেশের যুব জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ঝুঁকি চিহ্নিত করতে অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সানেম’ ও উন্নয়ন সংস্থা ‘অ্যাকশন এইড, বাংলাদেশ’ পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আলোচনা অনুষ্ঠানে জরিপ ও গবেষণার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলা হয়, যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে শিক্ষাসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্য আছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেকার থাকা শিক্ষিত যুবগোষ্ঠীর মধ্যে যারা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাদের ৮৯ শতাংশ দরিদ্র পরিবারের। ধনী পরিবারের শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে এই হার ১৯ শতাংশ।
‘যুব জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ঝুঁকির উন্নয়ন নীতি এবং বরাদ্দ পরিকল্পনা’ শিরোনামের ওই আলোচনায় গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক শাকিল আহমেদ।
যুব জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক ঝুঁকি চিহ্নিত করে তা মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কার্যকারিতা পর্যালোচনার লক্ষ্যে এই আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, ডিজিটাল সেবা ও সামাজিক মূল্যবোধ- এই পাঁচটি বিষয় বিবেচনায় এনে গবেষণায় বলা হয়, এই পাঁচটি ক্ষেত্রেই যুবসমাজ বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছে।
গত দুই বছরে করোনাভাইরাস মহামারী এই বৈষম্য আরও প্রকট করেছে। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে যারা পরবর্তীতে শিক্ষাব্যবস্থায় ফিরে আসার সুযোগ পায়নি বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমান চাকরির বাজারে প্রয়োজনীয় দক্ষতার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সবক্ষেত্রে সামঞ্জস্যপূর্ণও নয়। যার ফলে যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রত্যাশিত দক্ষতার ঘাটতি দেখা যায়।
বক্তারা তরুণ ও যুব জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বরাদ্দ বাজেটের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, যুব জনগোষ্ঠীর এই অর্থনৈতিক ঝুঁকি দূর করার জন্য তাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি উন্নয়ন নীতির বাস্তবায়ন করাও জরুরি। নীতি নির্ধারকরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সাংস্কৃতিক খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর ক্ষেত্রে জোর দিচ্ছেন না কেন সেটি বোধগম্য নয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে শিল্পক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, যেখানে যুবক সমাজ একটা বড় অংশে ভূমিকা রাখতে পারে।
যুব জনগোষ্ঠীর জন্য বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কোনো দেশই সব নীতিমালা বাস্তবায়নে একশ ভাগ সফল হয় না। সরকার যুবকদের উন্নয়নে যেসব নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, সেগুলো আমরা ধীরে ধীরে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। যুবকদের হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই।
মন্ত্রী বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আগেকার সময়ের দারিদ্র্য আর এখনকার সময়ে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। আমরা এখন নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করি। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ।
দেশের প্রতিটি অঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার ওপর জোর দিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, এখন গ্রামকেও শহরের সুবিধা দেওয়া দরকার। মানুষ গ্রাম থেকে শহরমুখী, বিশেষ করে ঢাকামুখী হচ্ছে। গ্রামেও যদি শহরের সুযোগ সুবিধা তৈরি করে দেওয়া যায়, তাহলে অবস্থার উন্নতি করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন বিভাগের যুগ্মসচিব আবদুল লতিফ মোল্লা, উপসচিব জহিরুল ইসলাম, কারিগরী ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব লুতফর রহমান, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি ফারাহ কবির উপস্থিত ছিলেন।