দেশের প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা দুই বছর মেয়াদি করার সিদ্ধান্ত অবশেষে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। এ জন্য এই স্তরের নতুন শিক্ষাক্রমের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটি (এনসিসিসি)। আগামী বছর প্রাথমিক স্তরের ৩ হাজার ২১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে দুই বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু হবে। এরপর ২০২৪ সালে তা সারা দেশের সব প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চালুর পরিকল্পনা আছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক সদস্য এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক পরিচালক প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানান। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুরা এক বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিক স্তরে পড়াশোনা করে প্রথম শ্রেণিতে যায়। দুই বছরের শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হলে শিশুর বয়স চার বছরের বেশি হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে এবং ছয় বছর বয়স পর্যন্ত প্রাক্-প্রাথমিক স্তরে পড়বে।
প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন ও এনসিটিবি সূত্র জানায়, ২০২০ সালেই প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাকে দুই বছর মেয়াদি করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তখন প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছিল, প্রথম দফায় ২০২১ সালে আড়াই হাজারের মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ব্যবস্থা চালু হবে। পরে সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব বিদ্যালয়ে তা চালু হবে।
এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, চার বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষাক্রম গত মাসে এনসিসিসির সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এখন এর আলোকে শিখনসামগ্রী তৈরি করা হবে।
জানা গেছে, গত ২২ জুন অনুষ্ঠিত ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর এ শিক্ষাক্রম পুনঃপর্যালোচনা করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা ২০২১ সালের বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির তথ্য বলছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা পরিচালিত বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেনসহ সব মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ২টি। এর মধ্যে কিন্ডারগার্টেনগুলোয় কম বয়সী শিশুদের ভর্তি করা হয়। তবে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের এক বছর মেয়াদি প্রাক্-প্রাথমিকে এবং ছয় বছরের বেশি বয়সী শিশুদের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়।
দুই বছরের প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘এটি আগেই হওয়া উচিত ছিল। তবে দেরিতে হলেও হচ্ছে, এ জন্য সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এটি যেন কেবল অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পরীক্ষানির্ভর ও পুথিগত শিক্ষার বিষয় না হয়।’
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে প্রাথমিক
শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে বড় রকমের পরিবর্তন এনে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত যে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে, তাতে এখনো পিছিয়ে আছে প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন। মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ শ্রেণিতে গত ফেব্রুয়ারিতে নতুন শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে বাস্তবায়ন শুরু হলেও প্রাথমিকে এখনো তা শুরু হয়নি।
এনসিটিবির সূত্রমতে, আগামী আগস্টের শেষ দিকে কিংবা সেপ্টেম্বরে প্রথম শ্রেণিতে ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ শিক্ষাক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে পারে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, বছরের আট মাস চলে যাওয়ার পর তা চালু হলে সেটি শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে। এ ছাড়া এখন প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পুরোনো শিক্ষাক্রমের বই পড়ছে। এ অবস্থায় শিক্ষাবর্ষের আট মাসের মাথায় নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা করলে সেটি তাদের ওপর চাপ বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অবশ্য এ কে এম রিয়াজুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও পুরো বইয়ের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের পড়ানো হবে না। শিক্ষাবর্ষের শেষের চার মাসের উপযোগী বিষয়বস্তু পড়ানো হবে। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণিতে প্রথম আট মাসের বিষয়বস্তুর সঙ্গে শেষের চার মাসের বিষয়বস্তুর অনেক মিল আছে। এখানে পড়ানোর ধরন ও মূল্যায়নে পরিবর্তন হবে। সেটি করবেন শিক্ষক। এ কারণে অসুবিধা হবে না।