বিদেশ সফরে বাড়ানো হচ্ছে চিকিৎসক, নার্স ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তালিকা। মূল অনুমোদিত প্রকল্পে ৩২ জনের ব্যবস্থা থাকলেও প্রথম সংশোধনীতে ১০ জন বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪২ জনে। এতে বাড়ছে খরচও। প্রথমদিকে ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এখন ৪৫ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রে আসে অতিরিক্ত ব্যয় প্রস্তাবও। ‘সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে। এদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিরাজ করছে ধীরগতি। প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব নিয়ে সোমবার অনুষ্ঠিত হবে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় পিইসি সভার সভাপতি পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মামুন-আল-রশীদের সঙ্গে। শনিবার তিনি বলেন, বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই দেখা হবে। কি কারণে তারা বিদেশ প্রশিক্ষণের ব্যয় ও সংখ্যা বাড়িয়েছে। অযাচিত কোনো ব্যয় অনুমোদন দেওয়া হবে না। অন্যান্য ব্যয়ের ক্ষেত্রেও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। রেট শিডিউল ও সমজাতীয় প্রকল্পের চেয়ে যদি বেশি ব্যয় ধরা হয় এর কারণ জানতে চাওয়া হবে।
সূত্র জানায়, মূল প্রকল্প অনুমোদনের সময় সংশ্লিষ্টদের বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সফরের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮০ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীর কথা বলা হয়েছিল ১০ জন। এখন প্রথম সংশোধনীতে এসে এই সংখ্যা বাড়িয়ে ১৫ জন এবং ব্যয় বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯৬ লাখ টাকা। এছাড়া চিকিৎসক ও নার্সদের বিদেশে প্রফেশনাল ট্রেনিং ও মেডিকেল যন্ত্রপাতি পরিচালনাবিষয়ক বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সফরের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে মূল প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা হয় ১ কোটি টাকা। অংশগ্রহণকারী ধরা হয়েছিল ২২ জন। কিন্তু এখন এই সফরে ৫ জন বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৭ জন এবং ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পিইসি সভায় প্রশ্নের মুখোমুখি হবে সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া প্রকল্পটি ঢাকায় বাস্তবায়ন হচ্ছে এবং প্রকল্প অফিসও ঢাকায় সেক্ষেত্রে ভ্রমণ ব্যয় হিসাবে ৫ লাখ টাকা প্রস্তাবের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে সভায়। প্রকল্পটির আরও যেসব ব্যয় নিয়ে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো হলো-নতুন অঙ্গ হিসাবে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে ৮ দিনব্যাপী সেমিনার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে। অংশগ্রহণকারী ৪৫ জন উল্লেখ করা হয়েছে। দেশব্যাপী এ সেমিনারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। নতুন অঙ্গ হিসাবে কম্পিউটার মেরামত ও সংরক্ষণ বাবদ ৪ লাখ টাকা, যন্ত্রপাতি মেরামতের জন্য ৫ লাখ টাকার প্রস্তাব রয়েছে। এক্ষেত্রে নতুন ৬টি কম্পিউটার মেরামতের প্রয়েজনীয়তা জানতে চাওয়া হবে। নতুন অঙ্গ হিসাবে ২টি গাড়ি ভাড়া বাবদ ২ বছরে ৭৫ লাখ টাকার প্রস্তাব আছে। এতে মাসিক ভাড়া বাবদ ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকার প্রয়োজনীয়তা জানতে চাওয়া হবে। এ ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমানো উচিত বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। প্রতিটি টেলিফোন সেটের দাম ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার টাকা এবং স্ক্যানার ১৫ হাজার টাকা করে যা অধিক বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বেশকিছু ব্যয় অর্থ বিভাগের পরিপত্রে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি ধরা হয়েছে। এগুলো হলো-মাইক্রোবাস ক্রয়ে পরিপত্রে আছে ৪০ লাখ টাকা, কিন্তু প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাবে ধরা হয়েছে ৭৫ লাখ টাকা। অ্যাম্বুলেন্স পরিপত্রে ৪৪ লাখ টাকা, প্রস্তাব করা হয়েছে ৭০ লাখ টাকা। ডাবল কেবিন পিকআপ পরিপত্রে ৪৬ লাখ টাকা, প্রস্তাব করা হয়েছে ৬০ লাখ টাকা। আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিডব্লিউডির রেট শিডিউল ২০১৮ এবং সমজাতীয় অন্য প্রকল্পের চেয়ে বেশি ব্যয় ধরা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ‘সরকারি কর্মচারী হাসপাতালকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটির মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এখন প্রথম সংশোধনীতে এসে ৪৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ৪২৯ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে ব্যয় বাড়ছে ১২ দশমিক ৯১ শতাংশ। এদিকে মূল অনুমোদনের সময় ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। পরে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে করা হয় ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। এখন প্রথম সংশোধনীতে এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত ব্যয় হয়েছে ৩৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ২৪ শতাংশ। রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ফুলবাড়িয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।