বাংলাদেশের আট তরুণ ডায়না অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক এই প্রিন্সেসের নামে তার দুই ছেলে পুরস্কারটি প্রবর্তন করেন। পুরস্কারটিকে ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী সামাজিক উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে মর্যাদাকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর আগে ২০২০ সালে বাংলাদেশের ছয় তরুণ এবং ২০২১ সালে ১৯ বাংলাদেশি তরুণ এই অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিলেন।
২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট আটজন তরুণ এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। এদের মধ্যে সবার আগে আছে নাফিরা আহমেদের নাম, এরপরে পর্যায়ক্রমে রয়েছেন মুরাদ আনসারী, ফয়েজুদ্দিন বেলাল, আনুশা চৌধুরী, মো. আমিনুল এহসান খান, শামীম আহমেদ মৃধা, মনীষা মীম নিপুন ও দীপ্র প্রত্যয়।
তারা যথাক্রমে সুবিধাবঞ্চিতদের সহায়তা, স্বাস্থ্য সচেতন করা, নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ, তরুণদের ক্ষমতায়নের মতো বিষয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন।
সমাজের ব্যতিক্রমী এমন তরুণ, যাদের প্রচার-প্রচারণা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ, তহবিল সংগ্রহ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই বা চরম জীবনের চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠার মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন এমন ১৮০ জনকে ২০২২ সালের এই এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত করা হয়।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই পুরস্কার আরও তরুণদের এ ধরনের নেতৃত্বমূলক কাজে উৎসাহিত করবে, একটি ইতিবাচক পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে।
নাফিরা আহমেদ
১৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি তরুণ নাফিরা আহমেদ। ২০১৯ সালে তিনি ‘অ্যামপ্লিটিউড’ প্রতিষ্ঠা করেন, যা একটি অলাভজনক সংস্থা, বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত সম্প্রদায়কে নিয়ে কাজ করে।
মুরাদ আনসারী
‘সাইকিউর’-এর প্রতিষ্ঠাতা। এটি একটি মানসিক স্বাস্থ্য প্ল্যাটফর্ম, যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা চাওয়াদের সহায়তা দেওয়া হয়ে থাকে। একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির ছাত্র হিসেবে মুরাদ বুঝতে পেরেছিলেন যে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য এখনও অনেকটাই অবহেলিত।
ফয়েজুদ্দিন বেলাল
‘গার্লস সামিট এর প্রতিষ্ঠাতা। এ সংগঠনের মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষা, ক্লাইমেট অ্যাকশন, নারী-পুরুষের সমতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জানা যায়, অভয়, গার্লস সামিট, স্বপ্নজয়, সম্পর্কে ভালো থাকুক দেশ, শী ইস দ্য ফার্স্ট, আমি থেকে আমরা, ইয়ুথ ফেস্ট, বরিশাল নুকসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা সমাধান করে আসছে তার এ সংগঠন। গত ৮ বছরে গার্লস সামিটের নানা কার্যক্রমের অংশ হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। বর্তমানে বরিশাল, ঢাকা এবং রংপুর বিভাগের প্রায় ১২টি জেলায় কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
আনুশা চৌধুরী
‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অনুসা চৌধুরীর হাত ধরে ২০১৮ সালে যাত্রা শুরু করে “লেটস টক মেন্টাল হেলথ।” তার একান্ত প্রচেষ্টায় সংগঠনটি দেশ-বিদেশের অগনিত মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে গেছে। মানসিক স্বাস্থ্যক্ষেত্রে তার এই অসামান্য অবদানের জন্য এবছর তিনি ভূষিত হয়েছেন সম্মানজনক ডায়ানা অ্যাওয়ার্ডে।
মো. আমিনুল এহসান খান
বিশ্বব্যাপী অলাভজনক সংস্থা ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০ এর সিনিয়র আঞ্চলিক কর্মকর্তা তিনি। পুরুষশাসিত সমাজে বেড়ে ওঠা এবং পুরুষতান্ত্রিক নিপীড়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করে আমিমুল বৈষম্যমূলক সামাজিক রীতিনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে। আমিমুল বৈষম্যমুক্ত এবং সবার জন্য নিরাপদ একটি সমান বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখায়। তিনি একজন গর্বিত নারীবাদী এবং লিঙ্গ সমতার জন্য প্রবল সমর্থক।
শামীম আহমেদ মৃধা
‘ইকো-নেটওয়ার্ক’-এর প্রতিষ্ঠাতা ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রচেষ্টা এবং জলবায়ু বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্যের জন্য তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত ভারসাম্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে শামীম আহমেদ মৃধা ইকো-নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একাধারে ইকো-নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারম্যান। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় সংগঠন।
মনীষা মীম নিপুন
নিপুন হলেন একজন ট্রান্স যুব প্রশিক্ষক যিনি হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য তার কাজের জন্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ২০১৯ সালে, তিনি পথচলা ফাউন্ডেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে কাজ শুরু করেন।
দীপ্র প্রত্যয়
দীপ্র প্রত্যয় তার প্রতিষ্ঠান ‘DP Tutorials’-এর জন্য ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন, যা দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র শিক্ষামূলক পরামর্শ প্রতিষ্ঠান যা তাদের কোর্সে ভর্তি হতে ইচ্ছুকদের প্রয়োজন-ভিত্তিক আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।