ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাত কলেজের সমস্যার সমাধান করতে না পারলে এসব কলেজ সমূহকে অক্সফোর্ডের আদলে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। এ বিষয়ে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখার দাবি জানান তারা। রবিবার (১৭ এপ্রিল) কলেজগুলোর সমস্যার সমাধানে এ দাবিসহ মোট ১৮ দফা দাবি সমন্বয়ক ও ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের কাছে লিখিত আকারে জমা দিয়েছেন। কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো গ্রহণ করা হয়েছে।
এসময় ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- করোনা মহামারী বিবেচনায় ১৭-১৮, ১৮-১৯, ১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সকল অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ইম্প্রুভমেন্টের সুযোগ দিয়ে অনতিবিলম্বে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন দিতে হবে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এটি নোটিশ আকারে প্রকাশ করতে হবে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসকল বিভাগে সেমিস্টার সিস্টেম রয়েছে, আমাদের ও সে সকল বিভাগে সেমিস্টার সিস্টেম চালু করতে হবে। আর সেমিস্টার সিস্টেম চালু না করা পর্যন্ত তিন বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের ইম্প্রুভের মাধ্যমে পরবর্তী বর্ষে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ বহাল রাখতে হবে;
গণহারে ফেল করার কারণ খতিয়ে দেখতে হবে এবং এর সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; প্রতি বর্ষের পরীক্ষার মাঝে অন্ততপক্ষে ১ মাসের গ্যাপ রাখতে হবে; ইনকোর্সের পরীক্ষার মার্ক দেখাতে হবে; পরীক্ষা শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের কথা থাকলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। এটি অতি দ্রুত কার্যকর করতে হবে; বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন পাঠদান যাতে বন্ধ না থাকে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
যেহেতু ৮ মাসে ইয়ার পরীক্ষা নেওয়া হবে সেহেতু সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করতে হবে; একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে; শিক্ষক সংকট, পর্যাপ্ত শিক্ষক সংখ্যা বাড়াতে হবে; ক্লাস রুমের স্বল্পতা রয়েছে, দ্রুত মানসম্মত ক্লাস রুমের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; শিক্ষার মান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে;
ঢাবির নিয়ম ও সমমানের শিক্ষা প্রদানের জন্য ঢাবি কর্তৃক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে; প্রতিটা ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত বাস, ক্যান্টিন, হল, বিষয়ভিক্তিক আধুনিক ল্যাব এবং সমৃদ্ধ লাইব্রেরির সুবিধা দিতে হবে; ভর্তি পরীক্ষার মান আরো উন্নয়নের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য ভর্তি পরীক্ষা প্রণয়ন করতে হবে এবং আসন সংখ্যা সীমিত করতে হবে। ধারণ ক্ষমতার বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না;
যেসব কলেজে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণি রয়েছে, সেখানে স্নাতক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষক স্বতন্ত্র করতে হবে; সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি কমিটি দিতে হবে। যারা ছাত্রদের বিভিন্ন সমস্যা ও দাবি সমূহ কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থাপন করবে। ছাত্র-শিক্ষকদের মাঝে সমন্বয় সাধন করবে; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের উল্লেখিত দাবি সমূহ না মানলে অতি শিঘ্রই সরকার এ সাত কলেজকে সমন্বয় করে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘোষণা দিতে হবে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ক ও সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী তসলিম চৌধুরী বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা শুরু থেকেই বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে অন্য শিক্ষার্থীরা অটো প্রমোশন পাচ্ছে সেখানে সাত কলেজের অনেক শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিয়েও পরবর্তী বর্ষে প্রমোশন পাচ্ছে না। দু’একটি কোর্সে অকৃতকার্যের কথা বলে তাদেরকে নন-প্রমোটেড করে রাখা হচ্ছে।
তসলিম চৌধুরী বলেন, এসব শিক্ষার্থীদের কিভাবে পরবর্তী বর্ষে প্রমোশনের সুযোগ করে দেয়া যায়- এসব বিষয় নিয়ে শিক্ষার্থীরা আজ সমন্বয়ক ম্যামের সাথে দেখা করেছেন। ম্যামকে আমরা আমাদের বেশকিছু লিখিত দাবি লিখিতভাবে দিয়েছি। তারা আমাদের দাবি বিবেচনায় নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিন সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চলমান সমস্যা সমাধানে ইডেন মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সাত কলেজের অধ্যক্ষ, দর্শন, বাংলা, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর শিক্ষার্থী ও ছাত্র প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন। সভায় শিক্ষার্থীদের এসব দাবি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সার্বিক বিষয়গুলো ঢাবির সঙ্গে সমন্বয় করে সমধানের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে সাত কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সাত কলেজের নতুন সমন্বয়ক ও ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন। অনেকে লিখিতভাবেও দাবি তুলে ধরেছেন। সবাই সবার মত করে তাদের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। আমরা শুরুতে ফল বিপর্যয়ের বিষয়টি নিয়ে কাজ করবো। এছাড়া আরও কিছু দাবি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করছে। করোনার কারণে এ সৃষ্ট জলিটতা আমরা দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে পারবো।