ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, এটি একটি অগ্নিঝড়া মাস। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কোন স্থাপনা ছিল না যা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়নি। এই মহান মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন ও তার ঠিক চারদিন পরে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ এই দু’টি ঐতিহাসিক ঘটনাই মূলত পাকিস্তান রাষ্ট্র কাঠামোয় প্রচন্ড আঘাত হেনেছিল এবং পাকিস্তান রাষ্ট্রের পতনকে অত্যাসন্ন করেছিল। সেদিন তারা ধর্মের দোহাই এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত কর্মসূচিতে এসব কথা বলেন তিনি।
ঢাবি উপাচার্য আরও বলেন, বিশ্বের ইতিহাসে একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই হলো একমাত্র জেনোসাইড বা গণহত্যা কেন্দ্র। কারণ এই ক্যাম্পাস থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানি অপশক্তির বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল। আজকে বঙ্গবন্ধু মুজিবের আদর্শ বাস্তবায়নের সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো তার দেখানো পথে তার চেতনা ধারণ করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সামনে এগিয়ে যাওয়া। যা তাঁর সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা খুব ভালোভাবেই করছেন।
কর্মসূচির শুরুতে সন্ধ্যা ৭ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে অবস্থিত ‘স্মৃতি চিরন্তন’ ভাস্কর্যে মোমবাতি প্রজ্বলন, শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন, ২৫ মার্চের কালো রাতের বীভৎস ইতিহাসের উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।রাত ৯ টায় জগন্নাথ হলে মোমবাতি প্রজ্বলন করে এক মিনিট নিরবতা পালন ও গণহত্যার মৃত্যুবরণ করা দেশপ্রেমিকদের মাগফেরাত কামনায় উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা হয়।
ভিসি চত্বরে আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকারের সঞ্চালনায় এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভুঁইয়াসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ২৫ শে মার্চের রাত থেক মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এদিন হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। শুধু ঢাকা শহরে নয় অন্যান্য শহরেও এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। যার কারণে বুদ্ধিজীবীদের বিচার স্থগিত ছিল। রাজাকার, আলবদরদের বিচার আমরা দীর্ঘদিন করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা মানে বাংলাদেশকে ১৯৪৭ এর চেতনায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, এ জাতিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা শুরু থেকে করা হয়েছে। ২৫ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো দুটি জায়গায় হামলা করা হয়েছিল। একটি বিডিআর সদর দপ্তর আর একটি পুলিশের সদর দপ্তর।যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চর্চা করে তাদের জায়গা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। গণতান্ত্রিক চর্চা, মুক্ত বুদ্ধির চর্চা যাতে বন্ধ করে দেয়া যায় এজন্য এই হামলা করা হয়েছিল।
মাকসুদ কামাল বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে আসল মানুষকে নকল ও নকল মানুষকে আসল করার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে।এই কাজটা করেছে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বিএনপি – জামাত, জিয়াউর রহমান এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাদের পেতাত্মারা।১৯৪৭ সাল থেকে ‘৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে মাত্র একটি জাতীয় নির্বাচন হয়েছে।সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু নির্বাচিত হওয়ার পরেও তাকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। আমাদের শপথ হবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে যেন ক্ষমতায় নিয়ে আসতে পারি।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ বলেন, এই রাত ছিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর শেষ রাত যারা এই রাত পর্যন্ত এদেশকে শাসন করেছিল। সেই কালো রাতে যারা নির্মমভাবে হত্যা হয়েছিল তাদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান অধ্যাপক রহমত উল্লাহ।