চাকরির বিভিন্ন পরীক্ষায় কাল্পনিক সংলাপ লিখতে বলা হয়। সংলাপ কীভাবে লিখলে ভালো নম্বর পাওয়া যায়, এখানে আলোচনা করা হলো। শুরুতে পুরাতন বিসিএসের প্রশ্নগুলো দেখে নেওয়া যেতে পারে। ৪১ তম বিসিএস: বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের গুরুত্ব সম্পর্কে ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে একটি কাল্পনিক কথোপকথন বা সংলাপ রচনা করুন। ৪০তম বিসিএস: পড়াশোনা শেষ করে চাকরিগ্রহণ এবং স্ব-উদ্যোগে গৃহীত কোনো কাজের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহকরণ সম্পর্কে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি সংলাপ রচনা করুন। ৩৮ তম বিসিএস: বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রবীণ শিক্ষক এবং অধ্যয়নরত একজন তরুণ শিক্ষার্থীর মধ্যে শিক্ষার অতীত ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করুন। ৩৭ তম বিসিএস: বিদেশে পড়াশোনা করে প্রবাসজীবন নির্বাচন এবং বাংলাদেশে লেখাপড়া করে স্বদেশেই অবস্থান করা সম্পর্কে দুই বন্ধুর কথোপকথন বা সংলাপ লিখুন। ৩৬ তম বিসিএস: একজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতা পরবর্তী এক তরুণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সংলাপ লিখুন। ৩৫ তম বিসিএস: ১০ বছরের একটি ছেলে হারিয়ে গেছে। ছেলেটির মা-বাবা গেছে থানায়। পুলিশ মামলা নিতে চাইছে না। ছেলেটির মা-বাবা এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্র অবলম্বন করে এই পরিস্থিতির উপযুক্ত সংলাপ রচনা করুন।
সংলাপ লেখার নিয়ম
১. প্রথমে প্রশ্ন অনুসারে একটি শিরোনাম তৈরি করে নিতে হবে। যেমন: ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সংলাপ’। শিরোনামের নিচে দাগ দিতে পারেন।
২. এরপর সংলাপের স্থান ও সময় উল্লেখ করবেন। এটি সাধারণত প্রশ্নে দেওয়া থাকে না। তাছাড়া স্থান ও সময়ের নিচে তৃতীয় বন্ধনীতে একটি পরিপ্রেক্ষিত তৈরি করে নিবেন। যেমন: স্থান: একটি বাজার। সময়: ছুটির দিন। সকাল দশটা। (এক কেজি ডাল কেনার পর দাম দিতে গিয়ে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে কথোপকথন।)
৩. কথা বলার সময় আমাদের নানা রকম অভিব্যক্তি হয়। সংলাপ রচনার সময় প্রথম বন্ধনীতে অভিব্যক্তি দিতে হবে। যেমন: (হেসে), (দীর্ঘশ্বাস ফেলে), (রেগে গিয়ে) ইত্যাদি। এ রকম অন্তত চার-পাঁচটি সংলাপে অভিব্যক্তি দেবেন।
৪. চরিত্রের নড়াচড়া ও আগমন-প্রস্থান তৃতীয় বন্ধনীতে দেখাতে হবে। যেমন: [বিক্রেতা আরেকটি প্যাকেটে আলু ভরতে লাগল।] [আরেকজন ক্রেতার আগমন।]
৫. সংলাপ কার কার মধ্যে হবে, সেটি প্রশ্নে নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে। তবে উত্তর করার সময় তৃতীয় আরেকটি চরিত্র তৈরি করে নিলে ভালো হবে। যেমন, ক্রেতা-বিক্রেতার সংলাপে আরেকজন ক্রেতাকে ঘটনার মধ্যে আনা যায়। তৃতীয় চরিত্রের সংলাপ মাত্র একটি দিতে হবে। সে মোটেই মুখ্য ভূমিকা পালন করবে না। তার আগমন ও প্রস্থান তৃতীয় বন্ধনীতে দেখাতে হবে।
৬. সংলাপে আঞ্চলিকতা পরিহার করতে হবে। তবে দরিদ্র কৃষক, রিকশাওয়ালা ইত্যাদি চরিত্রের সংলাপ লেখার সময়ে ক্রিয়াপদে ও দু-একটি শব্দে সামান্য আঞ্চলিকতা রাখবেন।
৭. সংলাপের শুরু বা শেষ বলে কিছু নেই। শুরুটা কোত্থেকে হচ্ছে, সেটা শুরুর পরিপ্রেক্ষিতে লিখে দিলেই হয়। শুভেচ্ছা বা সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে যে শুরু করতে হবে, এমন নয়। আবার শেষ করার ক্ষেত্রে সময়ের দিকে তাকিয়ে কাজ করতে হবে। সময় শেষ হয়ে গেলে এভাবে লিখতে হবে: [এরপর দুজনের মধ্যে আরও কিছুক্ষণ কথা চলল এবং ক্রেতা গজগজ করতে করতে চলে গেলেন।]
৮. একটি বা দুটি সংলাপ একটু দীর্ঘ হবে, যেখানে কিছু তথ্য থাকবে।
৯. কখনো কখনো চরিত্র মনে মনে কথা বলে। এ রকম সংলাপকে বলা হয় স্বগতোক্তি। সংলাপ রচনার সময়ে একটি স্বগতোক্তি দিতে হবে।
পরীক্ষায় সংলাপের বিষয় লেখা থাকবে। প্রস্তুতি নেওয়ার সুবিধার্থে এখানে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা হলো: জলবায়ু পরিবর্তন, সড়ক দুর্ঘটনা, শিক্ষাক্ষেত্রে করোনার প্রভাব, সাইবার অপরাধ, খাদ্যে ভেজাল, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশের অর্জন, সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার, মাদকের কুপ্রভাব, বৃক্ষরোপণের উপযোগিতা ও নৈতিকতার অবক্ষয় ইত্যাদি।
কার কার মধ্যে সংলাপ হবে, সেটি প্রশ্নে সাধারণত উল্লেখ থাকে। সংলাপ হতে পারে বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে; যেমন: মা-বাবা, বাবা-মেয়ে, মা-ছেলে, ভাই-বোন, দাদা-নাতি, দুই বন্ধু, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ক্রেতা-বিক্রেতা, ডাক্তার-রোগী, রিকশাওয়ালা-যাত্রী, পুলিশ-ব্যক্তি, গ্রাহক- ব্যাংক কর্মকর্তা, প্রবীণ-নবীন ইত্যাদি।
বিশেষ নির্দেশনা
প্রশ্নে উল্লেখ না থাকলে চরিত্রের নাম না দেওয়াই ভালো। যেমন: রহিম, করিম না লিখে বন্ধু-১, বন্ধু-২ লেখা ভালো। চরিত্রের পরে, সংলাপে আগে কোলন চিহ্ন দিতে হয়। যেমন: ক্রেতা: তাই বলে এক মাসের মধ্যে এত দাম বেড়ে যাবে? প্রতিটি সংলাপের কোলন চিহ্নগুলো এক বরাবর থাকবে। সময়ের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। সংলাপের সংখ্যা হতে পারে ১৫ থেকে ২০টি।