দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসছে। চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে চার মাসের সেমিস্টার পদ্ধতির পরিবর্তে ছয় মাস সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও পাঠক্রম বহির্ভূত কার্যক্রম বাড়াতে এ পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন।
দেশের বেশিরভাগ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ত্রৈমাসিক পদ্ধতি অনুসরণ করে। চারমাসে সেমিস্টার হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের বছরে তিনবার ভর্তি ও অন্যান্য ফি দিতে হয়। অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার জন্য এই পদ্ধতি অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
এই পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এ বিষয়ে তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমান পদ্ধতির অধীনে সারা বছর ব্যস্ত থাকার কারণে গবেষণা এবং অন্যান্য পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমের জন্য সময় পান না।
ইউজিসি এর পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) মো. ওমর ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, এই নতুন সেমিস্টার পদ্ধতি বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের স্নাতক পাঠ্যক্রমকে ফলাফল ভিত্তিক শিক্ষার (ওবিই) অনুকূলে সংশোধন করতে সাহায্য করবে। বিষয়বস্তুগুলোর উপর পাঠ্যক্রম পুনর্গঠনের ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সরাসরি তাদের দক্ষতা ও জ্ঞান বৃদ্ধি করতে পারবে।
তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার জন্য প্রত্যেক স্নাতককে উদ্যোক্তা মনোভাব থাকতে হবে, তাদের সমালোচনামূলকভাবে চিন্তা করতে হবে। এই ধরনের স্নাতক তৈরির জন্য ওবিই সিস্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর জন্য একটি সেমিস্টার সিস্টেম প্রবর্তন করা প্রয়োজন।’
এরআগে ২০২১ সালের ৯ আগস্ট দেশের সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারদের চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘২০২১ সালের পর বছরে দুই সেমিস্টার ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি হলে কমিশনের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।’ শিক্ষার্থীদের জন্য ইউনিক পরিচিতি নম্বর তৈরির চিঠিতে এই নির্দেশনা জুড়ে দিয়েছে ইউজিসি। এতে ২০২২ সালের জুলাই থেকে দুই সেমিস্টার রাখার কথা বলা হয়। সে অনুযায়ী এ বছর থেকে সেটি কার্যকর করতে চায় ইউজিসি।
ত্রৈমাসিক পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা একটি সেমিস্টার শেষ করার জন্য ১৪ সপ্তাহ সময় পায়। এর মানে, তাদের সিলেবাস শেষ করার জন্য কমপক্ষে ৪২ সপ্তাহের প্রয়োজন। তাই তারা অন্য কিছুর জন্য বছরে মাত্র ১০ সপ্তাহ বাকি সময় পায়।
নতুন সেমিস্টার পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা এক বছরে মাত্র ৩৬ সপ্তাহ এবং প্রতি টার্মে ১৮ সপ্তাহের জন্য ব্যস্ত থাকবে এবং তারা বাকি ১৬ সপ্তাহ গবেষণা, সেমিনার, পেপার লেখা, শিথিলকরণ এবং পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যকলাপের জন্য সময় ব্যয় করতে পারবে।
বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি নতুন এই সেমিস্টার পদ্ধতির অধীনে তাদের একাডেমিক কার্যক্রমে পরিবর্তন না নিয়ে আসে তাহলে ইউজিসি নতুন কোর্সের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুমতি দেবে না।
ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীদারীদের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা আমাদের উদ্যোগে একমত হয়েছেন। কমিশন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রমে শৃঙ্খলা আনতে নতুন সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত এবং শ্রীলঙ্কা সহ বিশ্বের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ছয় মাসের সেমিস্টার পদ্ধতি অনুসরণ করে। বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। বর্তমানে দেশের ১০৮টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেখানে সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।