আগামী ২০২৪ সাল থেকে মাধ্যমিক শিক্ষায় আলাদা কোনো বিভাগ থাকছে না। এখন নবম শ্রেণিতে যেভাবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বেছে নিতে হয়, শিক্ষার্থীদের সে রকম কোনো ভাগ তখন আর থাকবে না। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে। আর আগামী বছর থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন হবে।
নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা প্রশাসন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসব সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। অনুষ্ঠানে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণয়ন করা ষষ্ঠ শ্রেণির বই কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরীক্ষামূলকভাবে বাছাই করা দেশের ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২২ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) থেকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হচ্ছে। এ ছাড়া আগামী মার্চে বাছাই করা প্রাথমিক স্তরের ১০০ প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে।
এনসিটিবির সূত্র জানায়, এ বছর পরীক্ষামূলকভাবে চালুর পর ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে, ২০২৪ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। উচ্চমাধ্যমিকের একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার সময়সীমা ঠিক করা হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নব্যবস্থায় বড় রকমের পরিবর্তন হবে। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত বিদ্যমান পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিক মূল্যায়ন (শিখনকালীন) বেশি হবে। এর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা হবে না, মূল্যায়ন হবে সারা বছর ধরে চলা বিভিন্ন রকমের শিখন কার্যক্রমের ভিত্তিতে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোর মূল্যায়নের পদ্ধতি হিসেবে পরীক্ষা ও ধারাবাহিক শিখন কার্যক্রম দুটিই থাকছে। আর দশম শ্রেণির আগ পর্যন্ত কোনো পাবলিক পরীক্ষা না নেওয়ার কথা রয়েছে এই শিক্ষাক্রমে।
নতুন শিক্ষাক্রমে বিভাগ বিভাজন হবে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে ১০টি অভিন্ন বিষয়ে পড়ানো হবে। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রম ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন হবে। নবম শ্রেণির বই যেহেতু ২০২৪ সালে যাবে, তাই ওই বছর থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা, এ রকম ভাগ উঠে যাবে।
এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানান, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীদের অভিজ্ঞতা অর্জনের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অর্জিত অভিজ্ঞতা কীভাবে প্রয়োগ হবে, সেটিও শেখানো হবে। তবে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সমন্বিত শিক্ষাক্রম হওয়ার কথা থাকলেও এখনো প্রাথমিকের প্রস্তুতিই পুরোপুরিভাবে শেষ হয়নি। এ জন্য এই মাসে মাধ্যমিকের সঙ্গে প্রাথমিকের নতুন শিক্ষাক্রম চালু হচ্ছে না।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকের নতুন শিক্ষাক্রম মার্চের শুরু থেকে করা যাবে। আর প্রাথমিকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান এখনই শুরু হচ্ছে না (১ মার্চ শুরু হবে)। আশা করা যায়, এর মধ্যে করোনার সংক্রমণও কমে যাবে, তখন প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসতে পারবে এবং প্রাথমিকেও পরীক্ষামূলকভাবে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হবে।
শনিবার অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, এনসিটিবির চেয়ারম্যান মো. ফরহাদুল ইসলাম, সদস্য (শিক্ষাক্রম) মো. মশিউজ্জামান প্রমুখ।
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রথম শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, শিক্ষকদের একাগ্রতা দরকার। তৃতীয়ত, সমাজের অংশগ্রহণ লাগবে।
সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, যখন নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছিল, তখন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষায় সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন করার প্রস্তাব উঠেছিল। প্রাথমিক কর্তৃপক্ষ সপ্তাহে এক দিন ছুটি রেখেছিল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে বলেছিলেন, তাদেরও দুই দিন ছুটি লাগে। এ জন্য ঠিক করা হয়েছে, সব ক্ষেত্রেই সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন হবে। ২০২৩ সাল থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিন হবে।
বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বেশির ভাগ স্কুলে এক দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে।