The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
শনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪

এইচএসসি পরীক্ষা করোনাকালেও ভালো ফল

করোনা পরিস্থিতির কারণে সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। আবার সব বিষয়ে এবং শতভাগ নম্বরেও হয়নি পরীক্ষা। পরীক্ষা হওয়া না হওয়া নিয়ে দোলাচলের প্রভাব ছিল শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতিতে। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর যখন পরীক্ষা হলো, তখনো করোনা সংক্রমণের ভয় ও শঙ্কা ছিল। এমন পরিস্থিতিতেও এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে তাক লাগানো ফল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

গতকাল রোববার প্রকাশিত উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, পরীক্ষার ফলাফলের দুই মূল সূচক পাসের হার এবং জিপিএ-৫—উভয় ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা বিগত অন্তত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছেন। আবার এই দুই সূচকেই ছাত্রদের পেছনে ফেলে এগিয়ে রয়েছেন ছাত্রীরা।

করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে ২০২০ সালে এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। তখন পরীক্ষা ছাড়া ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করা হয়েছিল, যাতে সব শিক্ষার্থী পাস করেছিলেন। গত বছর শিক্ষা প্রশাসন এভাবে মূল্যায়ন না করে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সেটা নির্ধারিত সময়ের প্রায় আট মাস পর গত ডিসেম্বরে।

এবার পুনর্বিন্যাস করা সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে শুধু বিভাগভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়। মূলত এটিই ভালো ফল করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন পরীক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আগে সাধারণত দেখা যেত, মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনেকে ‘ইংরেজি’র মতো বিষয়ে ভালো করতেন না। এবার তাঁদের ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়নি।

নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবার পাসের হারে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের চেয়ে এগিয়ে আছেন। মানবিকে পাসের হার গড় পাসের হারের চেয়েও বেশি (প্রায় ৯৭ শতাংশ)। আর নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে মোট শিক্ষার্থীর অর্ধেকের বেশি মানবিকের। এর প্রভাবও পড়েছে পরীক্ষার ফলাফলে।

এবার এত ভালো ফলের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম আমিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এবার পুনর্বিন্যাস করা সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। প্রশ্নপত্রেও তুলনামূলক বেশি প্রশ্ন থেকে কম প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সুযোগ ছিল। তাই ফলও ভালো হয়েছে।

১৬ শতাংশ জিপিএ-৫
গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এই পরীক্ষার জন্য শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে অনলাইনে ফরম পূরণ করেছিলেন। সশরীর ক্লাস করার সময়ও পেয়েছিলেন কম। পরীক্ষা শেষ হওয়ার প্রায় দেড় মাস পর গতকাল ফল প্রকাশ করা হলো। এ দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি এই ফল প্রকাশ করেন। এরপর রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফলের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২২ জন, যা মোট পরীক্ষার্থীর ১৬ শতাংশ। পরীক্ষা ছাড়াই প্রকাশিত ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার চেয়েও এবার জিপিএ-৫ বেশি। গেলবার মোট পরীক্ষার্থীর ১৩ দশমিক ৪১ শতাংশ জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। আর স্বাভাবিক সময়ে সব বিষয়ে অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ৪১ হাজার ৮০৭ জন, যা ওই বছরের মোট পরীক্ষার্থীর ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি অন্য বিষয়গুলো জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ‘বিষয় ম্যাপিং’ করে ফল তৈরি করা হয়েছে। এতে যাঁরা জেএসসি ও এসএসসিতে ভালো করেছিলেন, তাঁদের অনেকেই ভালো করেছেন। এ জন্য জিপিএ-৫ বেড়েছে।

এবার করোনার সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আনন্দ-উচ্ছ্বাস একেবারেই কম ছিল। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা কলেজসহ একাধিক কলেজে দেখা গেছে অন্যান্য সময়ের মতো উপস্থিতি নেই। অধিকাংশই অনলাইনে ফল জেনে নিয়েছেন। আনন্দ-উচ্ছ্বাসের প্রকাশটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই বেশি হয়েছে।

এগিয়ে ছাত্রীরা
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে নারীদের অংশগ্রহণে সমতা অর্জিত হয়েছে বা হচ্ছে। তবে শুধু অংশগ্রহণেই নয়, পরীক্ষার ফলেও ছাত্রীরা এগিয়ে থাকছেন। গত বছরের এসএসসি পরীক্ষার মতো এবারের এইচএসসিতেও পরীক্ষার ফলে ছাত্রীরা এগিয়ে রয়েছেন।

এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় ছাত্রীদের পাসের হার ৯৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা গড় পাসের হারের চেয়েও বেশি। অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৯৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা গড় পাসের হারের চেয়ে কম।

ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছাত্রীরা এগিয়ে। মোট জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৯৮ হাজার ৪০৩ এবং ছাত্র ৮০ হাজার ১১৯।

গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান বলছে, পাসের হারে ছাত্রীরা এগিয়ে থাকছেন। ছাত্রীদের ভালো করার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, এখন পরিবারগুলোর মধ্যে আগের চেয়ে সচেতনতা বেড়েছে। উপবৃত্তিসহ বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করার চেষ্টাও আছে। তুলনামূলকভাবে পড়াশোনায় ছাত্রীরা যত্নবান বেশি। সবকিছুর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে পরীক্ষার ফলে।

শীর্ষে যশোর, পিছিয়ে চট্টগ্রাম
নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল তুলনা করে দেখা যায়, পাসের হারে সব কটি বোর্ডের মধ্যে শীর্ষে আছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৯৮ দশমিক ১১ শতাংশ। আর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যা নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সবচেয়ে কম।

অবশ্য জিপিএ-৫ সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। এই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৯ হাজার ২৩৩ পরীক্ষার্থী। আর কম জিপিএ-৫ পেয়েছেন সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ৪ হাজার ৭৩১ জন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন বিদেশের ৮টি কেন্দ্রে গড় পাস প্রায় ৯৯ শতাংশ।

সামগ্রিক ফল পর্যালোচনা করে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, এটা স্বীকার করতে হবে যে করোনার কারণে শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা ঠিকমতো হয়নি। তবু কম সময়ে, করোনার ভয়-শঙ্কার মধ্যে শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতি নিয়েছে। এখন এই ফলের মধ্যে আটকে না থেকে শিক্ষার্থীদের সামনের দিকে তাকাতে, সামনে আরও ভালো করতে হবে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.