মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী।
বুধবার বেলা ১১টায় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) আয়োজিত ‘অনলাইনে শিশু যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ ও শিশুদের নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহার নিশ্চিতকরণ: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ ও করণীয় নির্ধারণ’ শিরোনামের ভার্চ্যুয়াল গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।
মানবাধিকারকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ও পুলিশি অ্যাকশন নিয়ে যত কথা বলেন, তত বলেন না সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে।
বক্তব্য শুরু করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেট যেমন সুযোগ তৈরি করছে, তেমনি সমাজের সব পর্যায়ে ঝুঁকিও তৈরি করছে। এ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে, যারা ভার্চ্যুয়াল ওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা সব দেশের আইনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকছে। সীমিত ধর্মীয় জ্ঞান নিয়ে কেউ কেউ ওয়াজের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীর সামাজিক ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ন্ত্রণে ফতোয়া দেন। এটা নারী ও শিশুর জন্য ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করছে। ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নিতে গেলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, তাদের কমিউনিটি আইন অনুযায়ী ওই ব্যক্তিরা আইন ভঙ্গ করছেন না। এই বলে তারা কোনো নিয়ন্ত্রণ মানতে চায় না। ওই ব্যক্তিদের বক্তব্যকে তারা বাক্স্বাধীনতা বলে উল্লেখ করে। অথচ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সেসব বক্তব্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। ওই ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্ল্যাটফর্মের সহায়তা পাওয়া যায় না। ওই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল ব্যবস্থা নিতে গেলে প্ল্যাটফর্মগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে উল্লেখ করে আইনি ব্যবস্থা নিতে তারা বাধার সৃষ্টি করে। বিদেশি অনুদানের স্বার্থে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাপারে বেসরকারি সংস্থাগুলো কিছু বলতে চায় না। সুনির্দিষ্ট উদাহরণ রয়েছে, অনেক কনটেন্ট নারীর বিরুদ্ধে যায়, বাক্স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যায়, অথচ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও মন্দিরে হামলার ঘটনা উল্লেখ করে শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে দাঙ্গা ছড়ালো। অস্থিতিশীলতা তৈরি হলো। কেউ তো ফেসবুক বন্ধের কথা বলছেন না। মানবাধিকার সংস্থা হিসেবে রাজনৈতিক ভূমিকা অগ্রাহ্য করে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে কথা বলা উচিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অব্যাহতভাবে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করা হচ্ছে। তিনি আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণে সরকারেকে সহায়তা করার জন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি অভিযোগ করেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পুলিশের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে যত সোচ্চার, তত সোচ্চার নয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার জন্য তার সময় বেঁধে দেয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান এবং ভবিষ্যতে কখনো আসকের অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রণ না জানাতে বলেন উপমন্ত্রী ।
তিনি বলেন, আপনারা অনুষ্ঠানে কিছু শিষ্টাচার রাখবেন। বিশেষ অতিথিকে সময় বেঁধে দিয়েছেন। এটা অশোভন, দৃষ্টিকটু। এমন ব্যবহার করবেন না, যা শোভন নয়। অভিযুক্ত তারেক রহমানের (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) লোক আপনাদের বোর্ড অব গভর্ন্যান্সে আছে। আপনারা আর কখনো আমাকে ইনভাইট করবেন না। আমি আপনাদের অনুষ্ঠানে কখনো আসব না।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।