বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলেও তিনি সুস্থ নন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসায়গঠিত মেডিকেল বোর্ড।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার এই কথা জানান।
তিনি বলেন, উনার দুইটা কন্ডিশন। এক নাম্বার, উনি ক্লিনিক্যালি স্টেবল, বাট নট কিউর। বাট সি ইজ নট ফ্রি অব ডিজিস।
দুই নম্বর হচ্ছে, আমাদের কোভিড পরিস্থিতির জন্য, সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য এবং সি ইজ ভেরি মার্চ বারগানেবল। সেজন্য আপাতত উনাকে বাসায় পাঠাচ্ছি। এরপরে যদি কোনো রকম ক্রাইসিস হয় উই আর রেডি টু রিসিভিং হার এগেইন ইন হসপিটাল।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ৮১ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় গুলশানের বাসায় (ফিরোজা) ফিরেছেন।
খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা জানান, তার রোগের চিকিৎসা হয়নি। তবে রোগের জটিলতা কিছু কমনো হয়েছে। যে কারণে খালেদা জিয়া আশঙ্কামুক্ত নন।
বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালের ১১ তলার মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী, অধ্যাপক এম এস আরেফিন, অধ্যাপক একিউএম মহসেন, অধ্যাপক শেখ মুহাম্মদ আবু জাফর, অধ্যাপক নুর উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক লুতফুল আজিজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক এজেডএস জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, মুহাম্মদ আল মামুন, ডা. রফিকুল ইসলাম, ডা. শাহরিয়ার সাইদ,ডা. আরমান রেজা চৌধুরী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৩ নভেম্বর লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়ে খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন। লিভারে রক্তক্ষরণের কারণে তাকে দুই মাস সিসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেয়া হয়। কেবিনে আনা হয় ১০ জানুয়ারি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সুচিকিৎসার জন্য অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে এভারকেয়ার হাসতাল কর্তৃপক্ষ। এই মেডিকেল টিমে আরো দুটি বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের যুক্ত করা হয়।
খালেদা জিয়া তিন দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এবারই প্রথম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের থেকে মেডিকেল বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকে বিএনপি চেয়ারপারসনের অবস্থা জানালো।
খালেদা জিয়া বর্তমানে সুস্থ না হলেও মেডিকেল বোর্ড কেন ছাড়পত্র দিচ্ছে জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এফএম সিদ্দিকী বলেন, উনার ব্লিডিং আপাতত বন্ধ হলেও অসুখের ট্রিটমেন্ট সেভাবে হচ্ছে না। এখন উনার অবস্থা স্থিতিশীল। এখন আমরা দেখতে পারছি যে, সারাদেশে ও হাসপাতালে (এভারকেয়ার হাসপাতালে) করোনা সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শুধুমাত্র জানুয়ারি মাসে এই হাসপাতালের প্রায় ৩৮০ জনের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এবং তারা বিভিন্নভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে উনার স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই মুহূর্তে তার কন্ডিশন যেহেতু স্টেবল আছে, আমাদের তত্ত্বাবধানে বাসায় রেখে উনার চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
এফএম সিদ্দিকী বলেন, মূল অসুখ লিভার সিরোসিসে যে চিকিতসা, সেটা কিন্তু আমরা করতে পারিনি এখনো। যে ভ্যাসেল দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে সেই রক্তের প্রবাহটা বাইপাস করে টিপসের মাধ্যমে যে প্রক্রিয়া তা আমাদের দেশে নেই। উন্নত চিকিৎসা সেজন্য প্রয়োজন।
লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার আগে গত ৯ এপ্রিল খালেদা জিয়া করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই সময়ে ফিরোজার বাসায় চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসা নিয়ে সরে ওঠেন। পরে শ্বাস-প্রশ্বাস জনিত রোগে আক্রান্ত হলে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময়ে তিনি দুই মাস এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
৭৭ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখ ও দাঁতের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় ২০০৮ সালে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মানবিক বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। ছয় মাস পর পর সেই বাড়ানো হয়।