The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪

চীনা প্রকৌশলী হত্যা: ‘সম্পর্ক বাঁচাতে’ ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে পাকিস্তান

পাকিস্তানে গত বছর সন্ত্রাসী হামলায় চীনের কয়েক ডজন প্রকৌশলী হতাহত হওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে ১ কোটি ১৬ লাখ ডলার (১০০ কোটি টাকার বেশি) ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইমরান খানের সরকার। পাকিস্তানে নিহত বিদেশিদের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার এমন ঘটনা নজিরবিহীন। মূলত আগামী মাসে বেইজিং সফর সামনে রেখে পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী চীনের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর নিক্কেই এশিয়ার।

পাকিস্তানি মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক সমন্বয় কমিটি (ইসিসি) গত সপ্তাহে ভুক্তভোগী চীনা পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক বিবৃতিতে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, দীর্ঘ আলোচনা ও চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের গভীরতা বিবেচনায় শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে ১ কোটি ১৬ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে ইসিসি।

গত বছরের জুলাইয়ে পাকিস্তানের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় কোহিস্তান প্রদেশে দাসু বাঁধ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত চীনা প্রকৌশলীদের ওপর হামলা করে সন্ত্রাসীরা। এত চীনের ১০ প্রকৌশলী নিহত ও ২৬ জন আহত হন। এসময় পাকিস্তানেরও চারজন নিহত ও অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছিলেন। এ ঘটনার পর প্রকল্পটির কাজ স্থগিত করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চায়না গেঝৌবা গ্রুপ।

হতাহত প্রকৌশলীদের জন্য ইসলামাবাদের কাছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার (৩২৮ কোটি টাকা প্রায়) দাবি করে চীনা কর্তৃপক্ষ। শেষপর্যন্ত এ ধরনের ঘটনায় চীন যে পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়, তার দ্বিগুণ দিতে রাজি হয় পাকিস্তান।

আগামী মাসে বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক ২০২২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সফরে একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন তিনি।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাকিস্তান দাসু বাঁধে হামলাকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখিয়ে বেইজিংকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। পোল্যান্ডের ওয়ার স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির এশিয়া রিসার্চ সেন্টারের প্রধান ক্রজিস্টফ ইওয়ানেক বলেন, এটি স্পষ্ট যে, ইসলামাবাদ বেইজিংকে শান্ত করতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছে, এতে ইস্যুটিতে চীনের গভীর ক্ষোভ প্রতিফলিত হয়।

তিনি বলেন, আইনি, নৈতিক বা আর্থিক কোনো বাধ্যবাধকতার কারণে নয়, এই ক্ষতিপূরণ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বার্থে।

পাকিস্তানের সারগোদা ইউনিভার্সিটির পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব চায়না স্টাডিজের পরিচালক ফজল রেহমানের মতে, ইসলামাবাদের লক্ষ্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার মাধ্যমে ইমরান খানের বৈঠকের পরিবেশ সহজ করা এবং কর্মরত চীনাদের জন্য পাকিস্তান মাথা ঘামায়, তা দেখানো।

পাকিস্তানে চীনা প্রকল্পে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বেইজিং। গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ১০ম যৌথ সহায়তা কমিটির বৈঠকেও মূল আলোচ্য বিষয় ছিল এটি।

ক্রজিস্টফ ইওয়ানেক মনে করেন, শঙ্কিত চীনা কর্মীরা স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানে কাজ করতে খুব একটা আগ্রহ দেখাবেন না, বিশেষ করে পশতু ও বালোচ বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সীমান্ত এলাকাগুলোতে।

ফজল রেহমান বলেন, বিদেশে চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তা ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্পর্শকাতর বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ক্ষতিপূরণ দেওয়া পাকিস্তানের জন্য খারাপ নজির তৈরি করতে পারে। এতে সন্ত্রাসীরা আরও হামলা চালাতে উৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ইওয়ানেক বলেন, সন্ত্রাস অনেক সময় চাঁদাবাজির রূপ নেয়। এতে উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলোকে আর আক্রমণ না করার জন্য অর্থ দেওয়া হয়। তার মতে, পাকিস্তান যদি হামলার পর চীনকে ক্ষতিপূরণ দেয়, তাহলে সহিংস গোষ্ঠীগুলো পরবর্তী হামলা এড়াতে ইসলামাবাদের কাছে সরাসরি অর্থ দাবি করতে পারে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.