অবশেষে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একদফা দাবি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। উপাচার্যের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কোনো নাটকীয় মোড় না আসলে আগামী সপ্তাহে প্রজ্ঞাপন জারি করে শাবিপ্রবিতে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে। শাবিপ্রবি থেকেই কোনো শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। এজন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
ওই সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, শাবিপ্রবির আন্দোলন পরিস্থিতি ও সার্বিক বিষয় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা গোপন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এসব প্রতিবেদনে ঘটনার নানা দিক উঠে এসেছে। এই প্রতিবেদন নীতিনির্ধারণী দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনের একটিতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ব্যক্তিকে দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি নিরুৎসাহিত করা দরকার। এছাড়া শাবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্যের জায়গায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অথবা সিলেটের কোনো উপযুক্ত শিক্ষককে মনোনীত করা যেতে পারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গণমাধ্যমে জানান, শাবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্যকে সরিয়ে দেয়ার কাজ চলছে। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নতুন উপাচার্য হিসেবে শাবিপ্রবির দু’জন শিক্ষকের নাম আলোচনায় আছে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস ও বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ড. আনোয়ারুল ইসলাম।
এদিকে গণমাধ্যমের হাতে আসা গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়, শাবিপ্রবিতে উপাচার্য বিরোধী আন্দোলনে সিলেটের আওয়ামী লীগের রাজনীতির ছায়া রয়েছে। সিলেটের বাসিন্দা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের সঙ্গে বর্তমান উপাচার্যের সখ্য আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের টেন্ডারসহ অন্যান্য কার্যক্রমে তাকে প্রাধান্য দিয়ে আসছেন উপাচার্য। তবে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে ভিসির দূরত্ব রয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শাবিপ্রবির বর্তমান আন্দোলনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাম সংগঠনগুলো নানাভাবে উস্কানি-মদদ দিয়ে ভিন্ন খাতে নেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক বিভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে একে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ দেওয়ার অপতৎপরতা রয়েছে।
সরকারের কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে আগামীতে শিক্ষার্থীদের যে কোনো যৌক্তিক আন্দোলনে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি মনিটরিং সেল গঠন করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের যে কোনো সমস্যা নিয়ে শুরুতেই আলোচনা করে তা সমাধান করা সম্ভব। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হওয়ায় নিজস্ব আইন অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। ছাত্র কল্যাণ, শিক্ষকদের সমস্যা, হলের আবাসিক সুযোগ-সুবিধাসহ প্রক্টরিয়াল বডির কার্যক্রম তদারকির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন বা শিক্ষা মন্ত্রণালয় তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোটখাটো সমস্যা সমাধানে তৃতীয় পক্ষের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায় সামান্য আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে।