চট্টগ্রামে স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকার প্রথম ডোজ শতভাগ শেষ হয়েছে। প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১২ থেকে অনুর্ধ্ব–১৮ বছর বয়সী পৌনে ৯ লাখ শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে কেউ যদি বাদ পড়ে, তাদেরও তালিকা করে টিকা দেওয়া হবে।
করোনা থেকে সুরক্ষায় চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীকে গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে টিকাদান শুরু হয়। প্রথমে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ১২ বছর থেকে শুরু করে ১৮ বছরের নিচের সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা হয়।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী নগর ও জেলার বিভিন্ন স্কুল, কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থায় টিকাকেন্দ্র স্থাপন করে কোভিড–১৯–এর প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয় ফাইজারের টিকা। শিক্ষা কার্যালয় থেকে ৮ লাখ ৭২ হাজার শিক্ষার্থীর তালিকা দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফরিদুল আলম হোসাইনী বলেন, ‘আমরা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের শতভাগ টিকাদান সম্পন্ন করতে পেরেছি। এর বাইরে কিছু অনিবন্ধিত স্কুল এবং কিছু মাদ্রাসা রয়েছে। তাদের বলা হয়েছে আমাদের তালিকা দিতে। যদি তালিকা দেয়, তাহলে তাদেরও টিকা দেওয়া হবে। এই সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো হবে।’
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৬ নভেম্বর থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সিটি করপোরেশন ও জেলায় মোট ৮ লাখ ৭২ হাজার ২৫৬ জন শিক্ষার্থীকে ফাইজারের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়। বাকি ২ লাখ ৮৯ হাজার ৮৩০ জন শিক্ষার্থী শহরের। এ ছাড়া ৩২ হাজার ৮৪ জন শিক্ষার্থীকে দ্বিতীয় ডোজের টিকাও দেওয়া হয়েছে। এখন চলছে টিকার দ্বিতীয় ডোজ প্রদান।
জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। সরকারের নির্দেশে চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীরাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। জেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী প্রায় শতভাগ শিশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন দ্বিতীয় ডোজ টিকাদান চলমান রয়েছে। কেউ বাদ যাবে না।’
এর আগে ১৬ নভেম্বর প্রথমে নগরের চারটি স্কুলে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়। পরে আরও একটি কেন্দ্র বাড়ানো হয়। তাতেও টিকা কার্যক্রমে গতি আসেনি। ১০ জানুয়ারি থেকে নগরের চারটি কমিউনিটি সেন্টার ও স্টেডিয়ামে একযোগে টিকাদান শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা দলে দলে এসে সেখানে টিকা নেয়।
একইভাবে উপজেলাগুলোতে বিভিন্ন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কমিউনিটি সেন্টার ও স্কুলে টিকাদান শুরু করা হয়। ফলে দ্রুত এই কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
শিক্ষার্থীদের টিকাদান মনিটরিং করার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছিল সিভিল সার্জন কর্যালয়। ওই কমিটির সদস্য স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া জানান, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দু–একজন করে শিক্ষার্থী টিকার আওতার বাইরে থাকতে পারে। এ ছাড়া কিছু অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, যারা এখনো নাম দেয়নি, তাদের নাম সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদেরও দ্রুততর সময়ে টিকা দেওয়া হবে।
তবে টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের ওপর জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবীর। তিনি বলেন, টিকা দেওয়া থাকলে করোনার ঝুঁকি অনেকটা কমে যাবে। করোনা ও অমিক্রন থেকে রক্ষা পেতে হলে শুধু শিক্ষার্থী নয়, পর্যায়ক্রমে সবাইকে টিকার আওতায় আসতে হবে। তবে টিকা নিলেও মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।