খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ মো. সেলিম হোসেনের (৩৮) মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তবে আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষকেরা। আর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের যে দাবি তাঁদের ছিল, সেই অবস্থান থেকেও তাঁরা সরে এসেছেন।
সভায় সমিতির পক্ষ থেকে শিক্ষকদের এক দিনের বেতনসহ কুয়েট শিক্ষক সমিতির তহবিল থেকে সর্বমোট ১০ লাখ টাকার একটি স্থায়ী আমানত অধ্যাপক সেলিমের একমাত্র মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌসের নামে কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ওই মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া ৪৪ শিক্ষার্থীর শাস্তি বহাল রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানানো হয়।
আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে শিক্ষক সমিতির ওই সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এ সভা ডাকা হয়। পাশাপাশি অধ্যাপক সেলিমের পরিবারকে সহায়তা করার বিষয়টিও সভার আলোচ্যসূচিতে ছিল।
সভায় উপস্থিত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধ্যাপক সেলিম হোসেনের স্ত্রী সাবিনা খাতুনকে তাঁর শিক্ষাগত যোগত্যা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্থায়ী চাকরি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে সভায়। এর পাশাপাশি ওই ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা এবং অধ্যাপক সেলিমের পরিবারকে প্রাপ্য অর্থনৈতিক সুবিধার অতিরিক্ত আরও এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। তবে শিক্ষক সমিতি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের যে দাবি তুলেছিল, সেই দাবি থেকে এখন তারা সরে এসেছে।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে আগের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক যথারীতি একাডেমিক কার্যক্রমসহ সব ধরনের দায়িত্ব পালন করবেন। ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের বলেছে, ছাত্ররাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। আমরা এই বিষয় সভাকে জানিয়েছি। শিক্ষকেরা এখন ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিতে আর নেই।’
গত ১ ডিসেম্বর সাধারণ সভা করে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শিক্ষক সমিতি। পাশাপাশি ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতিমুক্ত করাসহ পাঁচ দফা দাবি ছিল সমিতির। ওই সময়ে কিছু শিক্ষার্থীর মানসিক নিপীড়নের ফলে সেলিম হোসেনের মৃত্যু হয়েছে, অভিযোগ তুলে বিচারের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষকেরা।
এদিকে গতকাল বুধবার কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ানসহ চার শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে ছাত্রশৃঙ্খলা কমিটি। এ ছাড়া আরও ৪০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীরা সবাই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী।
গত ৩০ নভেম্বর ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ও লালন শাহ হলের প্রাধ্যক্ষ সেলিম হোসেন ক্যাম্পাসের কাছের ভাড়া বাসায় মারা যান। ওই শিক্ষকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ও হল ছুটি ঘোষণা করা হয়। সেই ছুটি দুই দফা বাড়ানোর পর ৭ জানুয়ারি হল খোলা এবং ৯ জানুয়ারি ক্লাস শুরুর ঘোষণা দিয়েছে প্রশাসন।