অবিশ্বাস্য মনে হলেও চোখের সামনেই ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ দল। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সব সংস্করণ মিলিয়ে জয় অধরা, এ তথ্য বদলে চিরস্মরণীয় এক জয় তুলে নিল বাংলাদেশ।
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে মুমিনুল হকের দল। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এটাই সেরা জয় বাংলাদেশের। বে ওভালে বাংলাদেশের সমর্থকদের মুখে স্লোগান উঠেছিল ‘বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!’ জয়ের স্মারক হিসেবে স্টাম্প তুলে নিয়ে মাঠ ছাড়েন মুমিনুল-মুশফিক।
৫ উইকেটে ১৪৭ রানে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করেছিল নিউজিল্যান্ড। আজ পঞ্চম ও শেষ দিনে সকালের সেশনে ১০.৪ ওভারের মধ্যে মাত্র ২২ রান তুলতেই বাকি ৫ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানে অলআউট হয় টম লাথামের দল। এতে জয়ের জন্য মাত্র ৪০ রানের লক্ষ্য পায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় ওভারে সাদমান ইসলামকে (৩) হারালেও নাজমুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে জয়ের পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন মুমিনুল। দলীয় ৩৪ রানে নাজমুলকে (১৭) তুলে নেন কাইল জেমিসন। স্লিপে দারুণ ক্যাচ নেন রস টেলর। এরপর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে জয় এনে দেন মুমিনুল।
বিদেশের মাটিতে এটি বাংলাদেশের ষষ্ঠ টেস্ট জয়। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের মাটিতে জিতলেও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৯ টেস্ট খেলে হারতে হয় সব ম্যাচেই। দশম চেষ্টায় পাওয়া জয়টি নিঃসন্দেহে বিদেশের মাটিতে এ সংস্করণে বাংলাদেশের সেরা জয়।
নিউজিল্যান্ড বড় দলগুলোর জন্যই খুব কঠিন এক জায়গা। সেখানে টেস্টের বর্তমান এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে শেষ চার দিন দাপট বিস্তার করে পাওয়া জয় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর মধ্য দিয়ে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের টানা ১৭ টেস্ট অপরাজিত থাকার ধারারও অবসান ঘটল।
দেশ ও দেশের বাইরে মিলিয়ে টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটাই প্রথম জয় বাংলাদেশের। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এর আগে সব সংস্করণ মিলিয়ে টানা ৩২ হারের ধারারও অবসান ঘটাল মুমিনুল হকের দল।
মাহমুদুল হাসান চোট পাওয়ায় সাদমান ইসলামের সঙ্গে ওপেন করেন নাজমুল হোসেন। দ্বিতীয় ওভারে সাদমানকে তুলে নিয়ে ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন টিম সাউদি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাদমান। নাজমুলকে নিয়ে ৭৫ বলে ৩১ রানের জুটি গড়েন মুমিনুল। চার মেরে জয় এনে দেন মুশফিক।
১৩ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। শেষ দিনে দুই সেশন হাতে রেখে সকালের সেশনেই নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬.৫ ওভারে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ
তবে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট স্মরণীয় হয়ে থাকবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের দৃঢ়তার পর নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে বোলারদের অসাধারণ পারফরম্যান্স। বিশেষ করে ইবাদত হোসেন, নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে টেস্টে বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে সেরা পারফরম্যান্সের রেকর্ড গড়েন ইবাদত।
আজ সকালের সেশনে নিজের টানা দুই ওভারে নেন ২ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের দেখাও পেলেন তিনি।
৩৬ রানে ৩ উইকেট নেওয়া তাসকিন ও ১ উইকেট নেওয়া মিরাজের অবদানও ভুলে যাওয়ার নয়। তার আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে চারটি অর্ধশতকে ভর করে ৪৫৮ রান তোলে বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রানে অলআউট হওয়ায় ১৩০ রানের লিড পায় বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশের বোলাররা চেপে ধরায় নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ড আর কুলিয়ে উঠতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ৩টি করে উইকেট নেন শরীফুল ইসলাম ও মিরাজ। এই ইনিংসে ১ উইকেট নেওয়া ইবাদতের ম্যাচ ফিগার ৩৯-৯–১২১-৭। এ জয়ে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। ৯ জানুয়ারি হ্যাগলি ওভালে শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।