নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে কমিশনার নিয়োগে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি।
সোমবার (৩ জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশন গঠনের সংলাপে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে এ প্রস্তাব পেশ করে দলটি।
বঙ্গভবন প্রেস উইং এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতির চলমান আলোচনায় সোমবার অংশ নিয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন।
প্রথমে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয় গণতন্ত্রী পার্টি। বিকেলে বঙ্গভবনের দরবার হলে অনুষ্ঠিত আলোচনায় সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দলটির সভাপতি ব্যারিস্টার আরশ আলী।
বঙ্গভবন প্রেস উইং জানায়, আলোচনাকালে গণতন্ত্রী পার্টির প্রতিনিধিদল নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নসহ আট দফা প্রস্তাব পেশ করে। তারা নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিয়ে একটি সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনেরও প্রস্তাব দেন।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে কাউন্সিল গঠনের এ প্রস্তাব ছাড়াও এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ নেওয়া কয়েকটি দল সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। জাতীয় পার্টি, বিকল্প ধারা, তরিকত ফেডারেশনসহ কয়েকটি দল সার্চ কমিটির জন্য নামও প্রস্তাব করে এসেছে রাষ্ট্রপতির কাছে।
সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সার্চ কমিটির মাধ্যমেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে বাছাই করে বর্তমান নির্বাচন কমিশনার গঠন করা হয়েছিল।
নির্বাচন কমিশন বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে বঙ্গভবনে আসা গণতন্ত্রী পার্টিকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, রাজনীতিতে সহমত ও সৌহার্দ্যের সংস্কৃতি গড়ে তোলা অপরিহার্য।
গণতন্ত্রকে বিকশিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
পরে নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। দলটির চেয়ারম্যান মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী সাত সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বঙ্গভবন প্রেস উইং জানায়, আলোচনাকালে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন একটি শক্তিশালী, দক্ষ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য স্থায়ী আইন প্রণয়নসহ ছয় দফা পেশ করে। তারা নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন।
খেলাফত আন্দোলনের প্রতিনিধিরা বলেন, ধর্মবিদ্বেষী, চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক, অবৈধ সম্পদের অধিকারী, সন্ত্রাসী, সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী ও ঋণ খেলাপির সঙ্গে জড়িত ও তাদের পরিবারকে নির্বাচন কমিশনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।
এছাড়া ধর্মভিত্তিক দলটি নির্বাচন কমিশন কর্তৃক রাজনৈতিক দলগুলোর ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রাখার বাধ্যবাধকতাকে ঐচ্ছিক করার প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রতিনিধিদের বঙ্গভবনে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, সুস্থ রাজনীতির বিকাশে দল পরিচালনায় নীতি ও আদর্শের প্রতিফলন জরুরি।
তিনি বলেন, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলোকে জনগণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন ও সচিব (সংযুক্ত) মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খান।