The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ৬ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙার উসকানি শেখ হাসিনা দিয়েছেন: ফরহাদ মজহার

ডেস্ক রিপোর্ট: রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙার উসকানি স্বয়ং শেখ হাসিনা দিয়েছেন। এই সময়ে তার ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্তই ছিল উসকানিমূলক বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার।

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই কথা লিখেছেন ফরহাদ মজহার। তার স্ট্যাটাসটি নিচে তুলে ধরা হলো:

৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙার উসকানি শেখ হাসিনা স্বয়ং দিয়েছেন, এই সময়ে তার ভাষণ দেওয়ার সিদ্ধান্তই ছিলো উসকানিমূলক।

হাসিনার মাথায় রয়েছে ফেব্রুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সাক্ষাৎকার এবং বাংলাদেশ নিয়ে ইন্দো-মার্কিন-ইসরায়েলি আঞ্চলিক পরিকল্পনা। ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অলিগার্কি, অর্থাৎ অল্প কিছু বিলিয়নরদের আধিপত্যের প্রতিষ্ঠা। যেমন ইলন মাস্ক, জুকারবার্গ, বিলগেটস প্রমুখ। এর কুফলও বাংলাদেশসহ গরিব ও প্রান্তিক দেশগুলোতে পড়বে। হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে মার্কিন বর্ণবাদী গোষ্ঠীর মৈত্রীও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্পের গাজানীতি ভয়াবহ। ইতিমধ্যে ট্রাম্প বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র গাজার ‘নিয়ন্ত্রণ নেবে’ এবং এর ওপর তার ‘মালিকানা’ প্রতিষ্ঠা করবে।

এই নতুন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাষণ বুঝতে হবে। নতুন ভূরাজনৈতিক সমীকরণের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি রাজনীতির যে ছক কষছেন সেদিকে আমাদের পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ রাখতে হবে।

ছাত্রজনতার ন্যায়সঙ্গত ক্ষোভের পরিণতি হচ্ছে ৩২ নম্বর ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া। এটা শুরু, শেষ নয়। আমরা দেখলাম একে রক্ষা করার কোনো পদক্ষেপ সরকার গ্রহণ করেনি। সেনাবাহিনী কিছুক্ষণের জন্যে এলেও ফিরে গেছে। জনগণের বিপরীতে সেনাবাহিনীকে দাঁড় না করানোর নীতি সঠিক।

কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে দিল্লি প্রমাণ করার চেষ্টা করবে যে জানমাল রক্ষা করতে উপদেষ্টা সরকার ব্যর্থ। আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাখ্যা করা হবে যে বাংলাদেশে কার্যত কোনো সরকার নাই। এটাই দিল্লি হাসিনার পক্ষে প্রতিষ্ঠা ও প্রচার করবে।

দিল্লি দাবি করবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ফলে দিল্লি আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বাংলাদেশে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করতে পারে।

এই বাস্তবতা এবং সম্ভাব্য ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে। যদি আমরা সামনের দিনে আরো গভীর সংকটে পতিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে চাই তাহলে অবিলম্বে শেখ হাসিনার সংবিধান বাতিল করে পূর্ণ ক্ষমতা সম্পন্ন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করুন, নতুনভাবে বাংলাদেশ গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করুন। এটা পরিষ্কার ফ্যাসিস্ট সংবিধান বহাল রাখার শপথ করে আমরা আদতে ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম রেখেছি। এটা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাড়ি ভাঙলাম অথচ শেখ হাসিনার বানানো ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রব্যবস্থা পুরাপুরি কায়েম রাখলাম এটা কী হয়!

অতএব পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরা যেন কোনো গভীর সংকটে না পড়ি সেজন্য এখনই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। জনগণের ক্ষোভকে আমলে নিতে শিখুন। ছাই দিয়ে আগুন নিভানো যায় না।

এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত বোঝার জন্য মোহাম্মদ রোমেলের পোস্ট দেখতে বলে তার লেখা শেয়ার করেন ফরহাদ মজহার। সেই লেখাটি নিচে তুলে ধরা হলো:

শেখ হাসিনার ভাষণের বিরোধীতায় ৩২ নম্বর ভাঙার ফলে বাংলাদেশের জনগণের এই মুহূর্তে কোনো লাভ হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি।

তাইলে ৩২ নম্বর ভাঙার রাজনীতি কী? এই রাজনীতিতে কে কী অর্জন করল? এর পর্যালোচনা দরকার। দেশে-বিদেশে এর প্রভাব কি পড়বে সেটারও পর্যালোচনা দরকার।

এই মুহূর্তে জরুরি প্রশ্ন হলো, জনতা এইটা ভাঙগতে গেল কেন? উত্তেজিত না হয়ে, কোনো পক্ষ না নিয়ে ঠান্ডা মাথায় আমাদের এর কারণ অনুসন্ধান করা জরুরি। আমার মনে কয়েকটা কারণের কথা আসছে। সেইসব শেয়ার করি।

১ হাসিনার আজকে ভাষণ এবং তার দলের মাসব্যাপী কর্মসূচিতে জনগণ ভিতু হয়েছে। ভাবছে এর পেছনে ভারতের অসৎ উদ্দেশ্য আছে। ফলে তাদের প্রতিরোধের অংশ আকারে জনতা ৩২ নম্বরে গেছে।

২. হাসিনা এবং তাদের দলের কারো মধ্যেই এখন পর্যন্ত তাদের অতীত খুন-গুম-লুটপাট-বিচারহীনতা নিয়া কোনো ‘সরি ফিলিং’ মানুষ দেখছে না। ফলে মানুষের মনে তাদের বিষয়ে ক্ষোভ কমেনি। বরং তারা ফিরে আসার নানান হুমকি দিচ্ছে। দোষ অস্বীকার করছে। এইটাও জনতাকে ঐক্যবদ্ধ করেছে।

৩. হাসিনা তার পুরো শাসন আমলে তার বাপকে সামনে রেখে, দেবতা বানিয়ে তার সমস্ত অপকর্ম করে গেছে। ফলে ইতিহাসের শেখ মুজিবুর আর হাসিনার বানানো ফ্যাসিস্ট আইকন শেখ মুজিবুরের পার্থক্য জনগণের মধ্যে এখন আর নাই। ফলে ৩২ নম্বরকে জনগণ ফ্যাসিস্ট আস্তানা হিসাবে দেখছে। ফলে এইটা ভাঙগতে গেছে।

৪. ৫ আগস্ট সরকার গঠনের পর এখন পর্যন্ত ফ্যাসিস্টদের বিচার শুরু হয়নি। বড় বড় নেতাদের অনেকেই পালিয়ে গেছেন। দেশে যারা আছে তারাও গ্রেফতার হয় নাই। গ্রেফতার হওয়ার কোনো ভরসাও সরকারের তরফ থেকে পাইচ্ছে না। ফলে মানুষের মধ্যে চরম হতাশা আছে।

৫. এখন পর্যন্ত তরুণরা যে যে দাবি নিয়ে মাঠে হাজির হয়েছিলেন তার একটাও পূরণ হয় নাই। তারা চুপ্পুকে অপসারণ করতে চেয়েছিলেন। পারেন নাই। নতুন সংবিধান/গঠনতন্ত্রের কথা বলতে ছিলেন। সেটাও হচ্ছে না। তারা ‘জুলাই ইশতেহার ঘোষণা’ করতে চেয়েছে। সেটাও পারে নাই। ফলে যেন একটা অর্জনহীন সময় চলে যাচ্ছে।

৬. দেশের কোথাও কোনো সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি সরকার। ফলে জনগণ ক্ষুব্ধ। আমলাতন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছে না। ফলে জনগণ ক্ষুব্ধ। পুলিশ কাজ করছে না। ফলে জণগণ ক্ষুব্ধ। আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। ফলে জণগণ ক্ষুব্ধ। এর প্রকাশ ৩২ নম্বরে দেখছি।

৭. দেশের অর্থনীতি এখনো গতি পায় নাই। ফলে জণগণ ক্ষুব্ধ।

৮. জনগণের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো পরিষ্কার রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক দিশা নেই। ফলে তারা অস্থির দিশেহারা। এতো বড় গণঅভ্যুত্থানের পর এতো এতো ফেইলরে খুব স্বাভাবিকভাবেই আগস্ট বিপ্লবীরা হতাশ। এই হতাশা নিয়ে জনগণ নিশ্চয় ঘরে চুপচাপ বসে থাকবে না। ফলে ফ্যাসিস্টদের বাড়াবাড়ির সুযোগে তারা আবার বের হয়ে আসছে এবং সেই ক্ষোভ মিটাতে আজকে তারা ৩২ নম্বর ভাঙতে গেছে।
আমি নিশ্চিত সরকার যদি ঠিকঠাক ফাংশন করত এবং ফ্যাসিস্টদের বিচার চলত, তাইলে মানুষ আজকে ৩২ নম্বরে গিয়ে অনাহুত এই ক্ষোভ প্রকাশ করত না।

তাদের প্রত্যাশা এবং হতাশাকে যদি আগামী দিনে আমরা যথাযথ পথে পরিচালিত করতে চাই, তাইলে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেন। সরকার কিভাবে আরো ফাংশনাল করা যায় সেই ব্যবস্থা করেন। ফ্যাসিস্টদের বিচার দ্রুত শুরু করেন। জুলাইয়ে আহতদের দিকে মনোযোগ দিন। সিন্ডিকেট ভাঙার উদ্যোগ নেন। আমলাতন্ত্রকে টাইট দেন। দরকার হয় পুরো উপদেষ্টা পরিষদ নতুন করে সাজান।

আন্দোলনে যুক্ত সব পক্ষের বিপ্লবীদের সঙ্গে নিয়মিত ডায়ালগ করেন। তাদের পরামর্শ শুনেন। সঠিক পরামর্শ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন। তাদের নতুন রাজনৈতিক দিশা দেন। নইলে এই অভূতপূর্ব শক্তির অপচয় এবং অপব্যবহার হবে। হবেই। ঠেকাতে পারবেন না।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.