বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ( বেরোবি ) প্রতিষ্ঠাকালীন নাম “ রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় “ পুনর্বহাল, শতভাগ আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় রূপায়নের ৩ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেন বেরোবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আজ রবিবার ( ১৯ জানুয়ারি ) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিকাল ৪ ঘটিকায় এই মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা পরিবর্তন নয়, পুনর্বহাল চাই; প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ফেরত দিতে হবে, দিতেই হবে; শতভাগ আবাসন, দিতে হবে দিতেই হবে; শিক্ষার্থীদের গণরায়, মানতে হবে মানতে হবে; ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন বলেন, ২০০৮ সালের রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ জারি হয়। রংপুরের মানুষের বহু আন্দোলনের ফসল হচ্ছে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০০৯ সালে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার নাম পরিবর্তন করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করেন। এই নাম পরিবর্তন এর মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকার রংপুরের মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। রংপুরের মানুষের দাবির সাথে প্রতারণা করেছে। এখন আমরা নাম পরিবর্তন চাই না, আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পুনর্বহাল চাচ্ছি । আমরা প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ফেরত চাই। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ২৪ এর আন্দোলনের আতুর ঘর। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের কোন চিহ্ন রাখতে দেব না। অনতিবিলম্বে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ফেরত দিতে হবে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব মিয়া বলেন, আপনারা জানেন ২০০৮ সালে ১২ অক্টোবর “রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়” নামে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু করে এবং ২০১১ সালের দিকে “রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়” নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর। আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পুনর্বহাল চাচ্ছি এই কারণে যে এর প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ছিল রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত রংপুরের বিভাগীয় শহরে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বিভাগীয় শহরের নামে না হয় ব্যক্তির নামে কিভাবে হয় এটাই আমাদের প্রশ্ন? সেই সাথে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন হয়ে যদি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় হয় তাহলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নাম পুনর্বহাল করতে সমস্যা কোথায়? যখন আমরা চাকরির ফর্ম তুলতে যাই সেখানে দেখতে পাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই, আছে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়। সেই সাথে আমরা আশেপাশের কাউকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিতেই পারিনা, কারণ তারা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় চিনেনা।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রহমত আলী বলে, গতকাল রাতেই বেরোবির প্রায় ৮৫% শিক্ষার্থী তাদের ফেসবুকে মতামত দিয়েছে, ফ্যাসিবাদের চিহ্ন, ফ্যাসিস্টদের দেওয়া নাম তারা মানবে না। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন যে নাম, উত্তরবঙ্গের মানুষের গণপ্রতিনিধিত্বকারী যে নাম সেই রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকে তারা পুনর্বহাল চায়। সেই সাথে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের যে আবাসন সংকট সেই আবাসন সংকট থেকে মুক্তি চায়। এই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তর করতে হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যে গণ রায় তারা যে প্রতিষ্ঠা কালীর নাম ফেরত চায় তা অনতিবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। শিক্ষার্থীদের দেওয়া এই তিন দফা নিরাপত্তা নিয়ে যদি কোন ধরনের তালবাহানা করা হয় তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।
উল্লেখ্য যে, রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, ২০০৮ দ্বারা স্থাপিত হয়, পরবর্তীতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন, ২০০৯ আইন দ্বারা অধ্যাদেশটি লোপ করা হয়। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে ২০১১ সালে বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম “বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর “ নামকরণ করা হয়।