ডেস্ক রিপোর্ট: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেওয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। আজ রবিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
ফেসবুকে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস একটি জনপরিসর। এর ভেতর দিয়ে সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা আছে। প্রশাসন কেন বার বার ক্যাম্পাসকে আটকে ফেলার চেষ্টায় আছেন, আমি জানি না। এই ক্যাম্পাসের দুই পাশে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসতে হয় হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে। তাদের যে দুর্ভোগ আপনারা গত দুই দিনে দিয়েছেন, তার বিনিময় মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন?’
‘এই রাস্তাগুলো হচ্ছে পুরনো আর নতুন ঢাকার যোগাযোগের মাধ্যম, আরো বেশ কতগুলো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় আছে আশেপাশে। সকলের যাতায়াতের অধিকার আপনারা হরণ করেন কোন যুক্তিতে? পাবলিক বাস বন্ধ করেন, টিএসসি স্টেশনের সামনে উলটো পথে যাওয়া রিকশা বন্ধ করেন, তাদের শৃংখলায় আনেন।’
যাতায়াত কেন বন্ধ করবেন–এমন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি লেখেন, ‘যাতায়াত কেন বন্ধ করবেন? আর শিক্ষার্থীদেরো বলিহারি! ঢাবির শিক্ষার্থীদের ডাবল ডেকারগুলো সব আমলে উল্টো রাস্তায় যায় যুক্তিহীন মগজহীন ব্যাডাগিরি দেখিয়ে, সেই যুক্তিতে আপনারা সর্বজনের রাস্তা আটকাচ্ছেন? আপনাদের দেখে মনে হচ্ছে আপনারা উল্টো পথে চলেছেন-এটুকু প্রতিদিন ধরিয়ে দেওয়া শিক্ষক হিসেবে আমার কর্তব্য। এরপর “দ্যাখেন যা ভালো মনে করেন!”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিরব থাকার সমালোচনা করে তিনি ওই পোস্টে লেখেন, ‘ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা: আজকে যারা এসব তাফালিং এ নেতৃত্ব দিচ্ছেন, বা চুপ করে শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিচ্ছেন এমন ভাব ধরে আছেন, সেই বর্তমান প্রশাসনের কাউকে মেট্রোরেল ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে যাবার সময় বা টিএসসিতে স্টেশন করার সময় এসবের বিরুদ্ধে টু শব্দ করতে শুনেছি এমন মনে পড়ছে না। খুঁজলে অনেকের ছবি পাওয়া যাবে মেট্রো করে হাসিনার অগ্রযাত্রা সেলিব্রেশনের সেই ৫০০ জনের মধ্যেও! নো মেট্রো আন্দোলনের সময় আমরা যে দুই তিনজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে রাস্তায় ছিলাম তাদেরকে যখন হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বকা দিল তখন আমাদেরকে সতর্ক করেছিলেন কতজন, মনে আছে আমাদের! আপনারাই তখন নিজেদের সুবিধার কথা ভেবেছেন কেবল। এখনো তাই ভাবছেন। নাগরিকদের ক্যাম্পাসে ডেকে আনার ব্যবস্থা করে তাদের বের হতে না দেওয়ার মতো লজিক্যাল হচ্ছে আয়োজনটা।’
ওই পোস্টে সামিনা লুৎফা আরও লেখেন, ‘আর ২টা কথা: যারা এইসব কর্মকাণ্ডে আছেন, মানে এই ক্যাম্পাসে আজকে যারা তাফালিং করে বেড়াচ্ছেন তারা দুইদিন পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের বেঁধে পিটাতে বা ধরেন, রগ কাটতে শুরু করলে আর কেউ তো আসবে না রাজুতে, বাবারা! এই ক্যাম্পাসকে আলাদা করলে কার লাভ হয় এসব ভাবনা না ভেবে খালি স্বার্থপরের মতো দরজা বন্ধ কইরেন না।’
‘অন্য দেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তুলনা দিয়েন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক দায়-দায়িত্ব। বাংলাদেশের অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের এইসব দায় থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে -আমাদের আছে। যখন এখানে পড়তে আসেন, এইসব দায় আপনাদের হয়ে যায়। ভুলে যেয়েন না! জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনার পড়ালেখার অধিকার নিশ্চিত হয়, তাদের রাস্তা আটকানোর এবং উল্টা রাস্তায় বাস চালায় আগায় যাওয়ার আপনারা কেউ না!’
উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসন। শনিবার জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার, শনিবার এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বিকেল ৩টা থেকে রাত ১০টা এবং সাধারণ কর্মদিবসে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি প্রবেশপথ দিয়ে সাধারণ যানবাহন ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারবে না। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টিকারযুক্ত গাড়ি এবং জরুরি সেবা (যেমন: অ্যাম্বুলেন্স, ডাক্তার, রোগী, সাংবাদিক ও অন্যান্য সরকারি গাড়ি) প্রবেশ করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।