পাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ শহীদ মাহবুব হাসান নিলয়ের পিতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, “জুলাইয়ে যখন আন্দোলন শুরু হয়, তখন নিলয়কে ঘরে রাখা যায়নি। সে এ দেশের জন্য জীবন দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আজকের সবচেয়ে বড় কষ্টের বিষয় হলো, এত দিন হয়ে যাওয়ার পরও নিলয়ের খুনিদের কেউ ধরা পড়েনি, তারা আজও খোলা আকাশের নিচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি সবাইকে বলব, যদি নিলয় হত্যার খুনিদের বিচার না হয়, তাহলে নিলয়ের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে, শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পাবিপ্রবি) শহীদ মাহবুব হাসান নিলয় আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ নিলয়ের মা ও বাবা। ছেলের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
এ সময় তিনি আরও বলেন, “নিলয় সব সময় খেলাধুলা নিয়ে পড়ে থাকত। ফুটবল খেলা খুব পছন্দ করতো। পড়াশোনার জন্য সবসময় শাসন করতাম। আমি জিজ্ঞেস করলে বলত,বাবা আমি রাতে পড়ি, দিনে খেলাধুলা করি। আন্দোলন শুরু থেকে ও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতো। ৪ তারিখে আমি অফিসে যাওয়ার আগে তার মাকে বলেছিলাম, ‘আজকে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে, আন্দোলনে যাতে না যায়। আমাদের এলাকার লোকজনও তাকে বলেছে, ‘আজ পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে, তুমি যেও না।’ নিলয় বলেছে, ‘প্রয়োজনে আমি শহীদ হয়ে যাব, তারপরও আন্দোলনে যাব।’ কিন্তু আমার ছেলে দেশের জন্য গিয়েছে। সে শহীদ হয়ে ফিরেছে। আল্লাহ হয়তো তাকে কবুল করেছেন।”
আজ শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় পাবিপ্রবির কেন্দ্রীয় মাঠে জুলাই বিপ্লবে শহীদ মাহবুব হাসান নিলয়ের নামে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ এবং গণিত বিভাগ পরস্পরের মুখোমুখি হয়। প্রথমার্ধের খেলায় শাহজাহান বাদশাহর গোলে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগ এগিয়ে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের খেলায় গোল শূন্য থাকায় ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ১-০ গোলে চ্যাম্পিয়ন হয়।
এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আমিরুল ইসলাম মিরু এবং সঞ্চালনা করেন ইলেকট্রিক্যাল ইলেকট্রনিক অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইসিই) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফাতিন ইশরাক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. এস এম আব্দুল-আওয়াল বলেন, “আমি অনেক আনন্দিত যে কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই পুরো টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছে। এই টুর্নামেন্টে যদি কোনো বিশৃঙ্খলা হতো, তাহলে সারা দেশে আমাদের ক্যাম্পাসের নামে বদনাম হতো। এ জন্য আমি খেলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। দায়িত্ব নেওয়ার পর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কাজের মধ্যে একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন ছিল। আমাদের শিক্ষার্থীরা এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে আবার প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে—এটাই আমাদের বড় আনন্দের। খেলা নিয়ে শিক্ষার্থীরা যে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, সেজন্য আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। ছুটির পর আমরা শহীদ জাহিদ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু করব।”