খুবি প্রতিনিধি: দক্ষিণবঙ্গের স্বনামধন্য শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) মাদকসেবন ক্রমশ বাড়ছেই। মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জিরো টলারেন্স থাকলেও, এর তেমন কোনো কার্যকারিতা নেই। প্রশাসনের উদাসীনতা, মাদকের সহজলভ্যতা ও শিক্ষার্থীদের অসচেতনতার ফলে দিন দিন এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। ফলে শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তথ্য অনুসন্ধান বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে মাদকের আসর বসছে। এর মধ্যে ছাত্রদের তিন হল, ক্যাফেটেরিয়ার পাশে বাঁশঝাড়ের পেছনে, নতুন রাস্তা, সেন্ট্রাল মাঠ, কটকা স্মৃতিসৌধের পিছনটা ও অনিকেত প্রান্তর উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও, প্রতি বৃহস্পতিবার ছাত্রহলের বিভিন্ন কক্ষে গাঁজার আসর বসে। খান জাহান আলী হলের ছাদে দুবাই খ্যাত জায়গায় নিয়মিত গাজার আসর বসে।
মাদকসেবীদের কাছে বৃহস্পতিবার রাত ‘জম্ফা নাইট’ নামে খ্যাত। শিক্ষার্থীরা মাদকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ও নিয়মিত সেবন করে গাঁজা। গাঁজা ক্রয় সহজ হওয়ায় সেবনের পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উগ্রতা, অনমনীয়তা, অন্যায় কাজের প্রতি ঝোঁক বাড়ছে এবং দিনে দিনে শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধ বিনষ্ট হচ্ছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে জানা যায়, ক্যাম্পাসের মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীরা সিগারেট কে মাদক মনে করেন না। ডাল ভাতের মতো সিগারেট সেবন করেন তারা। ক্যাম্পাসের যেখানে সেখানে সিগারেট সেবন করায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার খেতে গিয়েও রক্ষা নেই, সেখানেও মাত্রাতিরিক্ত ধুমপান করেন মাদকাসক্ত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক সেবন করা একটা ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদকের মূল আখড়া হলরোডে। মাদকের মধ্যে গাঁজা সবচেয়ে বেশি সেবন করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের ঢিলামির জন্য মাদকসেবন নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। হলরোডে হোয়াইট হাউস খ্যাত বাসায় নিয়মিত মাদকের আসর বসে। ক্যাম্পাসের অনেক সাবেক শিক্ষার্থীও মাদক কারবারীর সঙ্গে জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক হলরোডের মেসগুলোতে কোনো বিধি নিষেধ না থাকায় অবাধে ও নির্ভয়ে মাদক সেবন চলে নিয়মিত।
গোপন সূত্রে জানা যায়, মাদক সরবরাহে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা জড়িত রয়েছেন। যারা মাদক সাপ্লাইয়ের সুবিদার্থে হলরোড ও আশেপাশের এলাকাগুলোতে মেস বাসা ভাড়া করে থাকেন। লোকাল ডিলারদের থেকে ৩০০/৪০০ গ্রাম করে গাঁজা নিয়ে সিনিয়র শিক্ষার্থীরাই জুনিয়রদের সাপ্লাই দেয়। প্রশাসনের উদাসীনতার ফলে বহিরাগতরাও এখন ক্যাম্পাসকে মাদক সেবনের নিরাপদ স্থান মনে করে। সন্ধ্যা হলেই নবনির্মিত বিল্ডিং সংলগ্ন নতুন রাস্তায় এবং সেন্ট্রাল মাঠের পুকুরের পাশে বহিরাগতদের আনাগোনা ও মাদক সেবন করতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক পরিচালক প্রফেসর ড. মো. নাজমুস সাদাত জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স আগেও ছিল এখনো আছে। ক্যাম্পাস সীমানার মধ্যে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। ক্যাম্পাস সীমানার বাহিরে গিয়ে অভিযানের এখতিয়ার আমাদের নেই। হলরোড ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় মাদক কারবারি বেড়েছে, এ বিষয় আমাদের নলেজে আছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়েছে, মাদক সেবক ও ডিলারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
তিনি বলেন, আমরা শীঘ্রই ক্যাম্পাসে ধুমপান ও মাদকের প্রতি নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করব। মাদকের সঙ্গে যুক্ত যেই হোক না কেনো এ বিষয়ে কোনো ছাড় নেই।