ডেস্ক রিপোর্ট: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়(জবি) এর ফিন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাশরিক হাসান মেহেদীর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলছেন শিক্ষার্থীরা। গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) কোতয়ালী থানায় লিপিবদ্ধ একটি মামলায় তাকে ৬৮ নং আসামি দেখানো হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত অনিক কুমার বাদী হয়ে ২৫৩ জনের নামে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষকসহ ২৪৪ জন শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান করা ব্যাক্তিদের নিয়ে করা মামলায় ড. মাশরিক হাসান মেহেদীর নাম দেখতে পেয়ে অবাক হন জবির ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে একজন শিক্ষার্থী বলেন, মাশরিক স্যার অত্যন্ত ভালো ও শিক্ষার্থীবান্ধব একজন শিক্ষক। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই তিনি শিক্ষার্থীদের সহায়তা করে এসেছেন। শিক্ষার্থীদের পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচাতে এবং ক্যাম্পাসে পুলিশ ডুকতে না দেওয়ার পিছনে তার অসামান্য ভূমিকা রয়েছে। আন্দোলনের সময় তিনি ব্যক্তিগত ভাবে প্রতিটি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের খোঁজ খবর নিয়েছেন।এটি একটি প্রতিহিংসামূলক মামলা। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয়ে ফিন্যান্স বিভাগের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বলেন, স্যার আন্দোলনের শুরু থেকে আমিসহ অনেকের খোঁজ খবর রেখেছেন। তিনি এটাও বলেছেন আমি যদি নিজের বাসায় নিরাপদ মনে না করি তাহলে তার বাসায় চলে যেতে। এরকম একজন শিক্ষককের নামে মিথ্যা মামলা কখনোই কাম্য নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। যদি স্যারের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা না হয় তাহলে আমরা আন্দোলনের ডাক দিবো। আমাদের এই রক্তে গড়া স্বাধীন বাংলায় স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের মতো মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে হয়রানি করা যাবে না।
ড. মাশরিক হাসান মেহেদীর বিরুদ্ধে এই মামলার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা স্যোশাল মিডিয়াতেও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এই মামলা নিয়ে ফিন্যান্স বিভাগের প্রতিটি ব্যাচ লিখিত ভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং মামলা প্রত্যাহার না হলে আন্দোলনের ডাক দেওয়ার কথা উঠে এসেছে।
এ নিয়ে তৌহিদুর রহমান লিখেন, যে কেউ যেকোনো দল করতেই পারে৷ দেখতে হবে সে অপরাধী কি না, অপরাধের পক্ষে সাফাই গাইছে কি না। সে দিক থেকে মাশরিক স্যার বেশ ভালো মানুষ ও স্টুডেন্ট ফ্রেন্ডলি।
এ বিষয়ে সৈকত নামের একজন স্যোশাল মিডিয়াতে লিখেন, মাশরিক স্যার সবসময় বিপদে পড়া শিক্ষার্থীদের পাশে থাকেন।তাই অনেকেই তাকে দেখতে পারে না।এরকম শিক্ষক হাতেগুনা কয়েকজন থাকে। আমরা এরকম কাজে নিন্দা প্রকাশ করি।
এ বিষয়ে রিও নামের আরেকজন শিক্ষার্থী লিখেন, আমার এলাকায় পুলিশ আমাকে হয়রানি করলে স্যারকে ফোন করলে স্যার আমাকে সাহায্য করেন।তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হওয়া অনিককে দেখতে হাসপাতালে যান এবং একাধিক বার তার খোঁজ খবর রাখেন। শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ হওয়া সাজিদ ভাইয়ের উন্নত চিকিৎসার জন্য ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করে দেন।তাছাড়া তিনি ডিপার্টমেন্টের প্রতিটা শিক্ষার্থীর আস্থার জায়গা। তার কিছু হলে আমরা বসে থাকবো না। খুব দ্রুত তার বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে তার কাছে ক্ষমা না চাইলে আমরা ফিন্যান্স পরিবার কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবো।
এ বিষয়ে ড. মাশরিক হাসান মেহেদীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। শিক্ষার্থীরা পুলিশের কাছে আটক হলে আমি নিজে তাদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করি। আমাদের শিক্ষার্থী অনিক আন্দোলনে আহত হলে সেদিন রাতেই আমি তাকে দেখতে হাসপাতাল যাই। কিন্তু কেন আমাকে এই মামলায় আসামী করা হলো তা আমি এখনও অবগত নয়। আমি অতি দ্রুত এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।
উক্ত মামলার বাদী অনিকের কাছে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, মাশরিক স্যার জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সন্দেহ ভাবে তার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। স্যারের নামে মামলা উঠিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।