মুসাব্বির: বাংলাদেশের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম সড়কপথ।বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ও দুশ্চিন্তার বিষয় সড়ক দুর্ঘটনা। অনাকাঙ্ক্ষিত এ ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে হাজারো মানুষ ধূলিসাৎ হচ্ছে হাজারো স্বপ্ন । আমরা প্রতিদিন খবরের কাগজ, টেলিভিশন কিংবা সামাজিক মাধ্যমে দেখতে পাই প্রতিনিয়ত কত মানুষ সড়কে তাদের প্রাণ হারাচ্ছে কিংবা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন। প্রতিনিয়ত ঘটে যায় এ সকল সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করা, চালকদের অসচেতনতা, অপ্রশিক্ষিত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদের দিয়ে গাড়ি চালানো। ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত গতি এবং পথচারীদের অসচেতনতা।
সম্প্রতি ৩১ শে অক্টোবর রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা ফৌজিয়া মিম সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। এ রকমের হাজারো মিম প্রতিবছর সড়কে তাদের জীবন হারাচ্ছেন। বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ সেবক ও ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের জরিপ প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। গত ১০ বছরে সড়কে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ১৪ জন। আর গত এক বছরে দেশে সড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১ টি। এতে আহত হয়েছে ৭ হাজার ৪৬৮ জন। শারীরিকভাবে অক্ষম হয়েছেন ১২ হাজার ৫০০ জন এবং মারা গেছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। যার মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭০৬ জন শিক্ষার্থী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন।
২০১৮ সালের ২৯ শে জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে দুই বাসের সংঘর্ষে রাজিব ও দিয়া নামে দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। তৎকালীন এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবিতে ৯ দফা প্রদান করেন। তাদের এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার ” সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ ” নামে একটি আইন পাশ করলেও আইনটি আজও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি এবং আইনটিতে সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি অপেক্ষিত রয়ে গেছে। আমাদের জীবনের ভোরের রক্তিম আভা পূর্ব দিগন্তে প্রস্ফুটিত হতে না হতেই শুরু হয় আমাদের কর্মব্যস্ততা আর এই কর্মব্যস্ততার থেকেই শুরু হয় সড়ক দুর্ঘটনা।
সড়ক দুর্ঘটনা থেকে আমাদের শতভাগ মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। তবে আইনের সহযোগিতা ও সবার সচেতনাই পারে এই অবস্থার উন্নতি ঘটাতে। সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকারের জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক মেরামত করা, ফিটনেসবীহিন যানবাহন রাস্তায় চলতে না দেওয়া, লাইসেন্স ছাড়া ড্রাইভার নিয়োগ না করা, মাদক দ্রব্য সেবন অবস্থায় যানবাহন না চালানো, ওভারটেকিং টেন্ডেন্সি থেকে বিরত থাকা, পথচারীদের ফুটওভারব্রিজ এবং ফুটপাত ব্যবহার করা, ফুটপাতে কোনো প্রকার দোকান বসতে না দেওয়া। ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের নিরাপদ সড়ক আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করা। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গতিসীমা নিয়ন্ত্রক স্থাপন করা। এছাড়া নিজেদের সচেতনতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় পারে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এবং নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে। নিজেদের সচেতনতা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ ঘটাতে না পারলে এর মাশুল আমাদের পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রকে দিয়ে যেতে হবে।এমন প্রেক্ষাপটে সকল মানুষের জন্য নিরাপদ সড়ক আইনের যথাযথ প্রয়োগ ঘটনার মাধ্যমে সারাদেশে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করা যেন সময়ের দাবি।
লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।