৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় পাঠ্যবইয়ে জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ স্বীকৃতি দিয়ে যুক্ত হচ্ছে সেই ঘোষণা। একইসঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই বিপ্লবে নিহত আবু সাঈদ ও মুগ্ধর গল্প।
এরই মধ্যে বইয়ের পরিমার্জন খসড়া সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। আগামী সপ্তাহেই এই খসড়া চূড়ান্ত হওয়ার কথা।
এ ব্যাপারে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘ইতিহাসের কিছু বিষয় ছিল, যেখানে অনেকের অবদান খুব ভালোভাবে উঠে আসেনি। আবার অনেকের অতি মূল্যায়ন করা হয়েছে, অতি বন্দনা করা হয়েছে। সেগুলোকে যথাযথভাবে স্থান দেওয়ার জন্য এই পরিমার্জন।’
সেইসঙ্গে মাধ্যমিকের বাংলা সাহিত্য বইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ ও মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের অবদান যুক্ত হচ্ছে। কিছু বইয়ের প্রচ্ছদে বা কোনো কোনো অংশে স্বৈরাচারবিরোধী গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি যুক্ত হচ্ছে।
এছাড়া পাঠ্যবইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় শেখ হাসিনার ছবি ও উদ্ধৃতিগুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পরিবর্তে চিরন্তন কিছু বাণী যুক্ত করা হচ্ছে।
এনসিটিবির চেয়ারম্যান জানান, ইতোমধ্যে পরিমার্জন শেষ, এখন কিছু ঘষামাজা চলছে। আগামী ৭ তারিখের মধ্যে সবকিছু শেষ হবে।
পরিমার্জনের খসড়ায় বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ে বলা হচ্ছে, ২৬ শে মার্চ মেজর জিয়া প্রথমবার চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। পরের দিন ২৭ শে মার্চ তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে পুনরায় স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সেই সঙ্গে তাজউদ্দিন আহমেদ, মাওলানা ভাসানীসহ মুক্তিযুদ্ধে সবার অবদান সংযুক্ত করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর পাঠ্যবইয়ে পরিমার্জনের কাজ শুরু করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড।
অনেক ইতিহাসবিদেরই অভিযোগ, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের টানা ৩ মেয়াদের শাসনামলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে এক কেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। তাদের মতে, মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা অনেক বীরকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে শিক্ষা গবেষকরা বলছেন, বইয়ের পরিমার্জনের কাজ বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে করাতে হবে। সেইসঙ্গে ইতিহাসে যার যে অবদান, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ‘যার কাজ, তাকে দিয়ে করাতে হয়। প্রকৃত ইতিহাস যারা চর্চা করেন এবং গবেষণা করেন, তাদের অংশগ্রহণ এখানে দরকার।’