The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

হল সুপারভাইজারের নিয়োগ বাতিল চাওয়া জাহানারা মুক্তার অভিজ্ঞতা সনদ ভুয়া

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হল সুপারভাইজার নিয়োগ বাতিল দাবি করা জাহানারা মুক্তার অভিজ্ঞতা সনদ ভুয়া বলে জানা গেছে।

হল সুপারভাইজার পদের নিয়োগের জন্য ০৮ নভেম্বর ২০২১ সালে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে পদটির জন্য ‘সরকারি/আধা-সরকারি/স্বায়ত্বশাসিত/শিক্ষা প্রশাসনে প্রশাসনিক কাজে ০৩ (তিন) বছরের বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে’ উল্লেখ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সকল প্রার্থী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। এই পদটির লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় ২৯ আগস্ট ২০২৩ সালে। যেখানে ০৭ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তীতে ৩১ আগস্ট ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকাস্থ গেস্ট হাউজে মৌখিক পরীক্ষার হয় এবং হল সুপারভাইজার পদে সোহেল রানাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

তবে এই নিয়োগের পর সোহেল রানার নিয়োগটি ত্রুটিপূর্ণ ও নিয়মবহির্ভূত বলে অভিযোগ করে জাহানারা মুক্তা। ইউজিসি বরাবর এই বিষয়ে চিঠি প্রদানও করেন জাহানারা মুক্তা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে সোহেল রানা’র কম্পিউটার অপারেটর-কাম-হিসাব রক্ষক (খন্ডকালীন) কাজের অভিজ্ঞতা সনদটি যাচাইয়ের জন্য কমিশন হতে ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ অধ্যক্ষ, গুজিয়াম আলিম মাদ্রাসা, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ-কে পত্র দেয়। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খাত হতে সম্মানী দেওয়ায় এমন খন্ডকালীন কাজের অভিজ্ঞতার সনদের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত/স্থায়ী পদের বিপরীতে জনবল নিয়োগ দেয়ার সুযোগ আছে কি-না সেটি বিবেচ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন সিন্ডিকেটে বিষয়টি উপস্থাপন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কমিশনকে লিখিতভাবে অবহিত করার জন্য বলা হয়।

জানা গেছে, নিয়োগটি নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় আলোচনা করা হয় এবং তা ইউজিসিতে আবার পাঠানো হয়। এরপরে ইউজিসি থেকে এবিষয়ে আর কোনো চিঠি আসেনি।

নিয়োগটি অবৈধ উল্লেখ করে জাহানারা মুক্তা গত ০৭ অক্টোবর উপাচার্য বরাবর আবেদনপত্র জমা দেন। সেখানে সোহেল রানার বিপরীতে তিনিই একমাত্র যোগ্য প্রার্থী ছিলেন বলে উল্লেখ করেন এবং নিয়োগকৃত সোহেল রানার আবেদনে প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার অভাবে বাছাইয়ে বাতিলযোগ্য ছিলো দাবি করে। নিয়োগটি বাতিল করে জাহানারা মুক্তা নিজেকে ঐ পদে নিয়োগের জন্য আবেদন করেন।

এদিকে জাহানারা মুক্তা হল সুপারভাইজার পদের জন্য যে অভিজ্ঞতা সনদ জমা দিয়েছিলেন তা ভুয়া বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তিনি পদটির জন্য ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের ধীতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হাদী স্বাক্ষরিত একটি অভিজ্ঞতার প্রত্যয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন। তবে এই অভিজ্ঞতার প্রত্যয়নপত্রটি মোঃ আব্দুল হাদী দেননি এবং স্বাক্ষরও করেননি বলে জানিয়েছেন।

ধীতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুল হাদী জানান, আমি বিগত ৩১/১২/২০১৫ তারিখ ধীতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করি। জাহানারা মুক্তা নামে একটি অভিজ্ঞতার প্রত্যয়নপত্র যা ১০/০৯/২০২১ তারিখ ইস্যু করা দেখলাম। তা মিথ্যা ও বানোয়াট। জাহানারা মুুক্তা নামে কাউকে আমি চিনিনা। এই নামে কেউ আমার কাছে থেকে কোনো সনদ নেয়নি। আর আমি দায়িত্বে থাকাকালীন আমার স্কুলে এই নামে কেউ কাজও করেনি। আর অভিজ্ঞতার প্রত্যয়নপত্রে যে স্বাক্ষর দেখলাম সেই স্বাক্ষরও ভুয়া। এই স্বাক্ষর আমার না।

অভিজ্ঞতার প্রত্যয়নপত্রে ০১ এপ্রিল ২০১৮ সাল থেকে ৩১ আগস্ট ২০২১ সাল পর্যন্ত জাহানার মুক্তা ধীতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন বলে উল্লেখ আছে। তবে বর্তমানে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল ফারুক ২০১৭ সালে যোগদান করেছেন। তার বিদ্যালয়ে জাহানারা মুক্তা নামে কেউ কর্মরত ছিলনা বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।

বর্তমান প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল ফারুক জানান, আমি ২৬ আগস্ট ২০১৭ সালে এই বিদ্যালয়ে জয়েন করছি। এরপরে এই নামে (জাহানারা মুক্তা) কেউ খণ্ডকালীন কর্মরত ছিলনা। আমি থাকাকালীন সময়েও আমিও কোনো প্রত্যয়নপত্র দেইনি। যেহেতু সে এখানে নেই, সেহেতু কোনো প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার প্রশ্নই উঠেনা।

প্রত্যয়নপত্র ভুয়ার বিষয়ে জাহানারা মুক্তা অস্বীকার করে জানান, আপনাদের যাচাই-বাছাই ভুল হচ্ছে। ওনারা এধরণের কথা বলার কথা না। আমি ধীতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকেই নিয়েছি। ওনারা (শিক্ষকরা) ভুল বলছে। আমার অভিজ্ঞতার সনদ বৈধ।

অন্যের নিয়োগ বাতিল করে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র দেখানো জাহানারা মুক্তা নিজের নিয়োগ চেয়ে আবেদনের বিষয়ে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, ইতিমধ্যে একটি কমিটি ফর্ম হয়েছে। তাদের কাছে চিঠিও গেছে। অনিয়মের যতগুলো আবেদন যাবে এই কমিটি সেগুলো যাচাই-বাছাই করবে। তারা যাচাই করে রিপোর্ট করবে। পরবর্তীতে এগুলো সিন্ডিকেটে নিয়ে যাবো এবং সিন্ডিকেট এইবিষয়গুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত দিবে।

তিনি আরও বলেন, এরকম ভুয়া সনদ যদি হয়ে থাকে তাহলে এটিও একটি অনিয়ম।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এসব বিষয় আমি আসার আগে হয়েছে। কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.