ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ স্মরণে ‘আগ্রাসন বিরোধী আটস্তম্ভ’ পুনর্নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’। এছাড়া, আবরার ফাহাদ হত্যার দিনকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘আগ্রাসন বিরোধী দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির আহ্বায়ক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেলে পলাশীর মোড়ে আবরার ফাহাদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত স্মরণ সভা শেষে এ দাবি জানান তিনি।
স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে লেখা হয়েছে ‘অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা, অসীম মহাকাশের অন্তে’। আবরার ফাহাদ তার ফেসবুক প্রোফাইলেও ওই উক্তি ব্যবহার করেছিলেন। সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র, গণপ্রতিরক্ষা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা, দেশীয় শিল্প-কৃষি ও নদী-বন-বন্দর রক্ষা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা এবং মানবিক মর্যাদা- এই আটটি বিষয়ের প্রতীক হিসেবে তারা আটটিস্তম্ভ বানিয়েছেন।
আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক আখতার হোসেনের বলেন, আবরার ফাহাদ একক কোনো ব্যক্তি নয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক। আবরার ফাহাদের খুনিদের গ্রেপ্তার করলেও বিচার প্রক্রিয়া এখনো সম্পন্ন হয়নি, অতিদ্রুত খুনিদের বিচার সম্পন্ন করতে হবে। খুনিদের মধ্যে যারা বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদেরকেও গ্রেপ্তার হতে হবে। বাংলাদেশে কোনো দেশের আগ্রাসন চলতে দেওয়া হবে না। ভারতীয় আগ্রাসনকে বাংলাদেশ মেনে নেবে না। এসময় তিনি ৭ অক্টোবরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘আগ্রাসন বিরোধী দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান।
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৫৪ বছরের সংগ্রামে শহীদ আবরার ফাহাদ টার্নিং পয়েন্ট। আবরার ফাহাদ এই শতাব্দীর শহীদ তিতুমীর। আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সাতটি দাবি জানিয়েছিলাম, যার অন্যতম দাবি ছিল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের নাম পরিবর্তন করে শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউ করা। শহীদ আবরার ফাহাদ আমাদের সার্বভৌমত্বের পক্ষে ভারতীয় আগ্রাসনে বিরুদ্ধে আগ্রাসন বিরোধী প্রতীক। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হলেন ফ্যাসিবাদের প্রতীক ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বৈরশাসক। আমাদের যে তরুণ সমাজ হাসিনার পতনের সংগ্রামের প্রথম ধাপে জয়লাভ করেছে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে ভারতীয় অগ্রাসনের বিরুদ্ধে এখনো জয়লাভ করতে পারেনি। আমাদের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই আগ্রাসন রুখে দিতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, গত পনেরো বছরে যেই সংবিধান আমাদের উপর চেপে বসেছিল, যে সংবিধান আবরার ফাহাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শত শত শহীদ হওয়ার জন্য দায়ী, হাজার হাজার মানুষের হাহাকারের জন্য দায়ী, সেই সংবিধান এখনো বাংলাদেশ রাষ্ট্রে কীভাবে বিরাজমান? আমরা চাই এই সংবিধান অবিলম্বে বাতিল হোক। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতি ও আবরার ফরহাদের রায় দেওয়া বিচারকদের সমালোচনা করে প্রশ্ন করেন- তারা এখনো কীভাবে এই দায়িত্বে রয়েছেন?
আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ বলেন, আবরার ফাহাদ দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। প্রথম দুই বছর হত্যার বিচারের জন্য আমাদেরকে বিভিন্ন দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। রায়ের তিন বছর পার হলেও আমরা এখনও হত্যার বিচার পাইনি। যে আটস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে সেটা যেন যেকোনো বাধা-বিপত্তিতেও টিকে থাকে।
স্মরণসভা শেষে পলাশী মোড়ে শহীদ আবরার ফাহাদের স্মরণে ৮ ফলক বিশিষ্ট স্তম্ভের পুনর্নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন মাহমুদুর রহমানসহ অন্যান্যরা। এসময় আবরার ফাহাদের সহপাঠী, বাবা, ছোটভাইসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।