The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪

ঢাবির হলগুলোতে শিবির ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশবিক নির্যাতন করতেন ছাত্রলীগ নেতারা

ঢাবি প্রতিনিধিঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে তুচ্ছ কারণে শিবির ট্যাগ দিয়ে ছাত্রলীগ কতৃক মারধরের শিকার হতেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ভিন্নমত হলে নির্যাতনের মাত্রা আরো বেশি হতো বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এসব ঘটনা সামনে আসছে। গত ১৬ বছরে ছাত্রলীগের বিভিন্ন নির্যাতনের কথা গণমাধ্যমেও উঠে এসেছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ভুক্তভোগীরা তাদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

তেমনি একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০০৯-১০ সেশনের শিক্ষার্থী সেলিম বাহাদুর। ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগের শত নির্যাতনের ঘটনার মধ্য হতে এক ভুক্তভোগীর জবানবন্দি’ শিরোনামে এ নির্যাতনের কথা প্রকাশ করেছেন তিনি। শুক্রবার (১৩সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে এক পোস্টে তিনি এ নির্যাতনের কথা বর্ণনা করেন।

সেলিম বাহাদুর লেখেন, আমার জীবনে পাওয়া ছাত্রলীগের পরিচিতি! আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই, তখন পরিবারের অমতেই ভর্তি হই। পরিবারের চাওয়া ছিল বাড়ি যেহেতু চট্টগ্রাম, সেহেতু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই যেন আমি ভর্তি হই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতির শুরুতেই আমার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ব। তাই পরিবারের অমতেই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ভর্তির ক্ষেত্রেও এক জটিলতা ও স্বপ্ন বিভ্রাটের ঘটনা আছে। সেটা হলো- আমার মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড হওয়ার কারণে স্বপ্নের বিষয়ে ভর্তি হতে না পারা। তবুও লোক প্রশাসনেই অগত্যা ভর্তি হয়ে গেলাম।

নির্যাতনের বিষয়ে রাইজিং ক্যাম্পাস সেলিম বাহাদুরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, একদিন রাত ৯টায় হলের ক্যান্টিনে খাচ্ছিলাম। আমার টেবিলের উল্টো পাশে এসে বসল আমার ইমিডিয়েট সিনিয়র নামক তিনজন। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ (০৮-০৯ সেশন, ভোলা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা মো. ইলিয়াছ (০৮-০৯, বাড়ি জামালপুর), যিনি বর্তমানে ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার এবং মো. রুম্মান (০৮-০৯ সেশন, বরিশাল)। এ তিনজন আমার সামনের টেবিলে বসে আমার সাথে কি খাচ্ছি এসব বিষয়ে টিটকারি মারল, কিন্তু আমি কিছুই বুঝিনি।

নির্যাতন শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, রাত সাড়ে ১১টায় আমার ডাক আসল ইমিডিয়েট সিনিয়রদের রুমে (১০৩, বঙ্গবন্ধু হল), আমি গেলাম। আমার একজন ইয়ারমেটকে দিয়ে আমার রুম (৫১৩/ক, যা গণরুম হিসেবে পরিচিত) থেকে আমার ব্যাগ নিয়ে আসা হলো। আমার সব কিছুই চেক করল (মোবাইলসহ)। কিছুই না পেয়ে আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে আমার বাবাকে কল করে ভয় দেখাল। কি কথা হলো আমি কিছুই শুনিনি।
ছাত্রলীগের তৎকালীন নেতাদের মারধরের বিষয়ে বলেন, আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন একদফা মার দিল ইয়াজ আল রিয়াদ ও ইলিয়াস। বাইরে বলে দিল একটা শিবির পাইছে। তারপর কয়েকজন নেতা হাসান (ঠাকুরগাঁও, মেঘনা ব্যাংকে কর্মরত) এবং সবচেয়ে বেশি নির্যাতনকারী মো. সাইদুল ইসলাম (০৭-০৮ সেশন, লোক প্রশাসন) যিনি বর্তমানে ইসলামি ব্যাংকের বাগেরহাটের মোড়েল গঞ্জ শাখায় কর্মরত, রুমে আসলেন। শিবির মারার মজা নিতে নাকি সে রুমে আসছে এবং সেই সবচেয়ে বেশি অনেকটা মদ খেয়ে নির্যাতনের মতো করে মারধর করল।
নির্যাতনের বিষয়ে আল্লাহ ডাকায় তারা আরো ক্ষেপে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা আমার ওপর শুরু করলো এক অসম্ভব অত্যাচার। স্টাম্প, লাঠি, স্টিলের পাইপ, মশারির স্ট্যান্ডসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এক অমানবিক নির্যাতন। নির্যাতন সইতে না পেরে আমি আল্লাহ, আল্লাহ বলে চিৎকার দিচ্ছিলাম। সেই আল্লাহ আল্লাহ ডাক শুনে তারা ক্ষেপে গিয়ে বলতে লাগল, এই শালা ১০০ শতাংশ শিবির। আর নাহলে সবাই আমরা ব্যথা পেলে, কষ্ট পেলে, মা-বাপকে ডাকি, এই ছোকরাটা কেন আল্লাহ আল্লহ বলে ডাকছে। এ কথা শুনে আমি আল্লাহ ডাকা বন্ধ করে দিই। কারণ আল্লাহ ডাকার পর ওখানে উপস্থিতদের মধ্যে চারজন এলোপাতাড়ি মার শুরু করে।

তিনি আরো বলেন, পরিশেষে এটুকু বলি, আমার ব্যক্তিগত ক্ষোভটা তাদের ওপর, যাদের কারণে আমার জীবনে কোন হল লাইফ নেই। সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস লাইফ আমি বাইরে থাকার কারণে প্রতিমাসে তখনকার ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হতো, যা যোগানোর জন্য আমার পরিবারে কোন দিন মাছ মাংস কেনা হতো না। আব্বা মাদ্রাসায় (এতিমখানা) চাকরির পাশাপাশি টিউশনি করতেন।

পরিবারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাকে টর্চারের শুরুতে কল দেয়ার কারণে আমার আব্বার মানসিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। পরের দিন বিকেল পর্যন্ত আমার সাথে কোন যোগাযোগ হয়নি। পরে যখন যোগাযোগ হয় ঢাকার পড়াশোনা যাতে বন্ধ না করে দেয় আব্বা এই জন্য আমার শারীরিক অবস্থা গোপন করে আব্বাকে মিথ্যে বলি যে আমার কিচ্ছু হয়নি। শুধু মোবাইলে চার্জ না থাকায় যোগাযোগ করতে পারিনি। তাকে বলি, ছাত্রলীগ আমাকে কিছু করেনি। আসলে আব্বা নাকি ঘুমাইতে পারেনি, অনেকটা স্ট্রোকের মত অবস্থা হয়েছিল; যা আমি গত ২ আগস্ট এসে ছোট বোনের কাছ থেকে জানতে পারি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মো. রুম্মান হোসেন দ্যা রাইজিং ক্যাম্পাসকে বলেন, এরকম কোনো ঘটনা আমার মনে নেই। আর আমি ছাত্রলীগ করলেও গ্রুপিংয়ের কারণে ছাত্রলীগের হাতে বেশি নির্যাতিত হয়েছি।

আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ- সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদের ফোন নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.