The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪

তিন দশক ধরে অচল জাকসু

বোরহান রব্বানী : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) তিন যুগ ধরে অচল হয়ে আছে। দেশপ্রেমিক ছাত্র নেতৃত্ব তৈরির উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (জাকসু) বা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ। একই বছর প্রথম জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

ভিপি নির্বাচিত হন গোলাম মোর্শেদ এবং জিএস রোকন উদ্দিন। এরপর ৭৪, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮৯, ৯০, ৯১ ও ৯২ সালে ৯ বার জাকসু নির্বাচন হয়। সর্বশেষ ১৯৯২ সালের নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন মাসুম হাসান তালুকদার লিটন এবং জিএস শামসুল তাবরিজ।

প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, এক ছাত্রের বহিষ্কারকে কেন্দ্র করে ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধলে সে সময়ের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জাকসু ও হল সংসদ বাতিল করে। এরপর ৩২ বছর পার হলেও আলোর মুখ দেখেনি জাকসু।

১৯৭৩ সালের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ১৯ (২) ধারা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্যানেল নির্বাচনে জাকসু থেকে পাঁচজন নির্বাচিত প্রতিনিধির ভোটাধিকার আছে। কিন্তু জাকসু সচল না থাকায় এই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেট সভায় ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ নেই।

বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা বারবার শিক্ষার্থীদের জাকসু নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ২০১৩ সালে উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন জাকসু নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ২০১৯ সালের দিকে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও জাকসু নিয়ে আলাপ-আলোচনা নতুন করে শুরু হয়। সেই সময় অবিলম্বে নির্বাচন দেওয়ার দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে সেই বছরের ৩১ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরীকে নিয়োগও দেওয়া হয়। তবে সেই নির্বাচন আর বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২৩ সালের মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম জাতীয় নির্বাচনের পর জাকসু নির্বাচনের আয়োজনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তবে আলোর মুখ দেখেনি জাকসু।

জাকসু নির্বাচন চান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক অরাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতারা। এ বিষয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহসান লাবিব বলেন, সুস্থ রাজনীতি চর্চা, ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কথা বলা, ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও উন্নয়নে ছাত্রদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন কার্যকর থাকা উচিত। কিন্তু অপরাজনীতির কারণে বহু বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর নেতৃত্ব তৈরী হয়নি,লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির দৌরাত্ম তৈরী হয়েছিল যার ফলে বিভিন্নভাবে ভুগতে হয়েছে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল স্টেকহোল্ডারদের। এসব সংকট ও সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং ক্যাম্পাসগুলোতে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা প্রতিষ্ঠা করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিকল্প নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আহসান এর কাছে শিক্ষার্থীদের অনেকগুলো দাবীর মধ্যে অন্যতম একটি দাবী হলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাকসু নির্বাচন দেওয়া।
ছাত্রদল জাবি শাখার কর্মী হামিদুল্লাহ সালমান বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী হাসিনাকে পরাজিত করতে জাবি যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তাই জাবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের শুভেচ্ছা জানাই এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে গর্বিত।

আমরা সব সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়েই কাজ করি এবং ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট নিয়ে কাজ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থীদের এখন দাবি হচ্ছে জাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতৃত্ব নির্ধারণ করা। আমি বিশ্বাস করি জাকসু হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে, যার মাধ্যমে বিভিন্ন সংকট নিরসন করা সম্ভব হবে। জাবি থেকে জাতীয় নেতৃত্ব প্রস্তুত করতে জাকসুর বিকল্প নেই। দীর্ঘ কয়েক যুগের অচলায়তন ভাঙ্গার এটাই সর্বোত্তম সময়। ভিসি স্যার মাত্রই দায়িত্ব নিয়েছেন, উনাকেও কিছুটা সময় দিতে চাই। তবে উনার প্রতি আমাদের আহবান যত দ্রুত সম্ভব জাকসু নির্বাচন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দাবি তিনি পূরন করবেন এবং একটি শৃঙ্খল ক্যাম্পাস গড়ে তুলবেন।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের জাবি শাখার আহ্বায়ক ( একাংশ) আলিফ মাহমুদ বলেন, ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী জাকসু মনোনীত পাঁচজন সদস্য সিনেটে থাকার কথা থাকলেও প্রশাসন কোনো ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সিনেট অধিবেশন। ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়া সিনেটে হওয়া বাজেট প্রণয়ন কখনোই শিক্ষার্থীবান্ধব হতে পারেনা। জবাবদিহিতামূলক ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচিত ছাত্র নেতৃত্ব আবশ্যক। তিন দশক অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও জাকসু নির্বাচন না হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হতাশ করছে। পক্ষান্তরে শিক্ষক সমিতির নির্বাচন, কর্মচারীদের নির্বাচন, কর্মকর্তাদের নির্বাচন দিব্যি চলছে বছরের পর বছর।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষর্থীরাও জাকসু নির্বাচন চায়। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সুলতান মাহমুদ বলেন, যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির জন্য জাকসুর বিকল্প নেই। দীর্ঘ ৩২ বছর ধরে জাকসু নির্বাচন না দিয়ে ছাত্রদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। দাবি তুলছি দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জাকসুকে সচল করা হোক।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান বলেন, ‘ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে নির্বাচনের ব্যবস্থা করব। তবে আমাদের একটু সময় দিতে হবে। যে প্রক্রিয়ার নির্বাচন আনা দরকার সে পথেই আমরা কাজ করছি। আশা রাখছি সকলকে সুন্দর একটি নির্বাচন আয়োজন করতে পারবো।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.