The Rising Campus
Education, Scholarship, Job, Campus and Youth
বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বেরোবিতে সেশনজটের আশঙ্কা, স্থবির একাডেমিক কার্যক্রম

মোঃ শরীফুল ইসলাম, বেরোবিঃ উত্তরবঙ্গের বাতিঘর নামে খ্যাত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু থাকলেও হচ্ছে না ক্লাস ও পরীক্ষা। ফলশ্রুতিতে শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছেন।

প্রায় দেড় মাস ধরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক, একাডেমিকসহ সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশের পটপরিবর্তনের পর উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের অন্তত ৪৫ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন। এরপর থেকেই প্রশাসনিক শূন্যতা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।

৫ আগস্ট সরকার পতনের কয়েকদিন পর থেকেই শিক্ষার্থীরা হলে ফিরতে শুরু করেন। কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো গত ১৮ আগস্ট খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মোরশেদ হোসেন কে গত রোববার (১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন’স কমিটির এক সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। তিনি নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার পরে শিক্ষার্থীদের সমালোচনায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে সিন্ডিকেটের সর্বশেষ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আচার্য ও রাষ্ট্রপতির নির্দেশনা পাওয়ার পর শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা হবে। তবে কোনো ডিপার্টমেন্ট চাইলে নিজের উদ্যোগে ক্লাস ও পরিক্ষা নিতে পারবে। উপাচার্য, প্রক্টোরিয়াল বডিসহ অনেকে একের পর এক কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছেন। ফলে প্রায় এক মাস ধরে ক্যাম্পাস একরকম অরক্ষিত অবস্থায় আছে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্লাস শুরুর নির্দেশনা এলেও কর্তৃপক্ষ না থাকায় সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য দপ্তর, জনসংযোগ দপ্তর, প্রক্টর দপ্তরসহ সব ক’টি অফিস খোলা আছে কিন্তু শীর্ষ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করায় কাজ স্থবির হয়ে আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২টি বিভাগের মধ্যে কয়েকটি বিভাগ নিজ উদ্যোগে ক্লাস শুরু করলেও অধিকাংশ বিভাগেই ক্লাস শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, আমরা বিভাগীয় সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ক্লাস ও পরিক্ষা শুরুর প্রস্তুতি নিয়েছি। তবে শিক্ষার্থীদের বলেছি হলে, ক্যাম্পাসে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরা নিশ্চিত করে থাকতে। কেননা প্রশাসন না থাকায় একরকম অনিরাপত্তা তৈরি হয়েছে।

ক্লাস পরিক্ষা না হওয়ায় সেশনজটের বিষয় শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে বাংলা বিভাগের সাদিয়া সিদ্দিকী নির্যাস বলেন, আমাদের তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হবার কথা ছিল ১০ জুলাই থেকে। সেখানে সেপ্টেম্বর মাসের অর্ধেক চলে গেলেও ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়া কিংবা এ সংক্রান্ত কোন উদ্যোগ ডিপার্টমেন্ট থেকে নেয়া হচ্ছে না। আসলে ভিসি না থাকায় বিভাগীয় প্রধান চাইলেও আমাদের পরীক্ষা নিতে পারছেন না।যেখানে একটা সেমিস্টার শেষ হতে সর্বোচ্চ ৬ মাস লাগে সেখানে ৯ মাস চলে যাবার পরেও বিভিন্ন জটিলতার কারণে শেষ করতে পারছি না।এমতাবস্থায় সেশন জট হওয়া টা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই দ্রুত সবরকম জটিলতা কাটিয়ে যাতে সবাই আমরা আবার ক্লাসে ফিরতে পারি এবং একটি সেশনজট মুক্ত সুন্দর ক্যাম্পাস পেতে পারি এটাই বর্তমানে চাওয়া।যেহেতু এই সেমিস্টার টা বেশ কিছু কারণে দীর্ঘ সময় লাগছে শেষ করতে সেই জায়গা থেকে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশা করব আমাদের নতুন ভিসি যিনি আসবেন তিনি যেন পরবর্তী সেমিস্টার গুলো স্বল্প সময় শেষ করার জন্য রোডম্যাপ প্রণয়ন করেন এবং আমরা যেন কোনো রকম সেশন জটে না পড়ি সেই ব্যাপারে সচেষ্ট থাকেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ফিরতে পারছে না। হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরাও রয়েছেন নিরাপত্তা শঙ্কায়। প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ক্ষমতা নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছে। ফলে হলগুলোতে দেখা দিয়েছে শৃঙ্খলার সংকট।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আলমগীর চৌধুরী বলেন, যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে, সেহেতু ডিপার্টমেন্ট কিংবা অনুষদ-ডিনের সম্মতিতে ক্লাস এবং পরীক্ষা চালিয়ে যেতে পারে। শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা করছে বলে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভাগের শিক্ষকেরা চাইলে এ দুই এক মাসের সেশনজট মুক্ত করতে পারেন। তারা যথাসময়ে ক্লাস-পরীক্ষা ও পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের আগেই কোর্স সম্পন্ন করলে তাহলে সেশনজট হবে না বলে আশা করি।

You might also like
Leave A Reply

Your email address will not be published.